যুক্তরাজ্যে সাড়া ফেলছে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য ইফতার আয়োজন

২৩ মে ‘রামাদান ট্রেন্ট প্রজেক্ট’র আয়োজনে লন্ডনের মলেট স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত ইফতারে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার শত শত লোক অংশ নেয়। ছবি: সংগৃহীত
২৩ মে ‘রামাদান ট্রেন্ট প্রজেক্ট’র আয়োজনে লন্ডনের মলেট স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত ইফতারে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার শত শত লোক অংশ নেয়। ছবি: সংগৃহীত

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন বেশ সাড়া ফেলেছে যুক্তরাজ্যে। বিষয়টি এখন একপ্রকার রীতিতে রূপ নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমন আয়োজন ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ইসলামিক রীতি অনুযায়ী, পবিত্র রমজান মাসে মসজিদে মসজিদে রোজাদারদের জন্য ইফতারের আয়োজন হয়। ভিন্ন সংস্কৃতির পশ্চিমা দেশগুলোতে মসজিদে ইফতারের আয়োজন যতটা না রীতি পালনের লক্ষ্যে, তার চেয়ে বেশি প্রয়োজনের তাগিদে। কেননা এই বিদেশ বিভুঁইয়ে অনেক রোজাদারের জন্য মসজিদের ইফতারই একমাত্র ভরসা। এ বছর প্রায় দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থেকে রোজা রাখতে হচ্ছে যুক্তরাজ্যের মুসলিমদের।

ভিন্ন সংস্কৃতির যুক্তরাজ্যে ইফতার এখন ইসলামের সহনশীলতা ও মানবিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার মোক্ষম আয়োজন হিসেবে রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন মসজিদ এ রমজানে রোজাদারদের পাশাপাশি যেকোনো ধর্মাবলম্বী অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষদের ইফতারে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। কোনো কোনো মসজিদে কেবল ভিন্ন ধর্মের মানুষদের জন্য হচ্ছে বিশেষ ইফতারের আয়োজন।

আগামী রোববার এমন একটি ইফতারের আয়োজন করেছে ইংল্যান্ডের নরউইচ শহরের ‘ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়া বাংলাদেশি ইসলামিক সেন্টার’। আয়োজনের কথা তুলে ধরে আজ বুধবার প্রতিবেদন ছাপে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইস্টার্ন ডেইলি প্রেস। এতে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আয়োজকেরা।

‘ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়া বাংলাদেশি ইসলামিক সেন্টার’-এর সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষকে ইফতারের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইসলামের মানবিকতা, উদারতা ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরিই এর লক্ষ্য।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার কারণে এ ধরনের আয়োজনের গুরুত্ব খুব বেশি অনুভব করার সুযোগ হয় না। কিন্তু ভিন্ন সংস্কৃতিতে বসবাস করতে গেলে নিজের বিশ্বাস ও ধর্ম সম্পর্কে প্রকৃত সত্য তুলে ধরার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ইফতারির আয়োজন বেশ কার্যকর। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ যেকোনো সমাজে ভিন্ন ধর্মের মানুষদের যুক্ত করে ইফতারের আয়োজন হওয়া জরুরি।

সিরাজুল ইসলাম জানান, এ আয়োজনে ইসলামিক রীতিনীতি তুলে ধরার পাশাপাশি অন্য ধর্মীয় নেতাদেরও বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। থাকবে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন-উত্তর।

নরউইচে প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশির বসবাস। গত বছর তাঁরা প্রথম ভিন্ন ধর্মের মানুষদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করে। ওই বছর ভিন্নধর্মীয় প্রায় ৭০ জন ব্যক্তি অংশ নেন।

গত বৃহস্পতিবার পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশিদের নিয়ন্ত্রিত ইস্ট লন্ডন মসজিদ বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করে। এর আগে গত ২৩ মে লন্ডনের মলেট স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত হয় ‘রামাদান টেন্ট প্রজেক্ট’র ইফতার। উন্মুক্ত এ আয়োজনে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার শত শত মানুষ অংশ নেয়।

যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩০ লাখ মুসলিমের বসবাস; যা মোট জনগোষ্ঠীর ৫ শতাংশ। দেশটিতে আছে প্রায় ১ হাজার ৭৫০টি মসজিদ। উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের কারণে ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা আছে পশ্চিমা দেশগুলোতে। এমন ধারণা দূর করে প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে জানান দিতে ইসলামিক প্রতিষ্ঠানগুলো সারা বছরব্যাপী নানা আয়োজন করে।