'স্পাইডারম্যান' উদ্ধার করছেন সন্তানকে, বাবা খেলছেন গেমস

পঞ্চমতলার বারান্দায় ঝুলে থাকা শিশুকে নাটকীয়ভাবে উদ্ধার করে তারকা বনে গেছেন মামউদু গাসামা। বীরের বেশে শিশু উদ্ধারের জন্য তাকে ‘১৮ সালের স্পাইডারম্যান’ খেতাব দেওয়া হলো। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে তার বাবা-মা ওই সময় কোথায় ছিলেন, কীই-বা করছিলেন। জানা গেল তার বাবার দায়িত্বহীনতার খবর। ওই সময় বাবা খেলছিলেন গেমস।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, শিশুটির বয়স চার বছর। শিশুটি রি-ইউনিয়ন নামে একটি জায়গায় মা ও নানির সঙ্গে থাকত। তিন সপ্তাহ আগে সে প্যারিসে তার বারবার কাছে চলে আসে। তার বাবা তাকে একা বাসায় রেখে শপিংয়ে বের হয়েছিলেন। বাবা প্যারিসেই চাকরি করেন। তার মা এবং ওই দম্পতির দ্বিতীয় এক সন্তানেরও এ বছরের জুনে এ ফ্ল্যাটে চলে আসার কথা।

শিশুটির বাবার বিরুদ্ধে শিশুকে ঠিকমতো দেখাশোনা না করার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

উত্তর প্যারিসের একটি ভবনের ছয়তলায় থাকেন ওই বাবা। শিশুটি ছয়তলা থেকে পড়ে গিয়ে ভাগ্যক্রমে পঞ্চমতলার ব্যালকনি ধরে ফেলে।

শিশুটির মা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘শিশুকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতেন না তার বাবা। ঘরে তাকে একা রেখে বাইরে চলে গিয়েছিলেন। আমার স্বামী যা করেছে, তা কোনোভাবেই আমি মেনে নিতে পারি না। আমার ছেলের ভাগ্য ভালো।’

সরকারি কৌঁসুলিরা বলেন, শপিং করার পরও শিশুটির বাবার বাড়িতে ফিরতে দেরি হয়েছিল। কারণ পোকেমন গো গেম খেলার কারণে তাঁর ফিরতে দেরি হচ্ছিল।
এ খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর মানুষ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছেন। কেউ বলছেন, প্রতিবেশী একজন পুরুষকে শিশুটির খুব কাছেই দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু মামউদু গাসামা ওঠার আগে তিনি নিজেই কিছু করলেন না কেন? ওই প্রতিবেশী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি শিশুটির হাত ধরে রেখেছিলেন কিন্তু টেনে ওপরের দিকে তুলতে পারছিলেন না। দুটি ব্যালকনির মাঝের ডিভাইডারের কারণে তিনি শিশুটিকে ওপরে টেনে তুলতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি। শিশুটি হয়তো তখন হাত ফসকে নিচে পড়ে যেতে পারত। আমি ভেবেছি, ধাপে ধাপে অগ্রসর হলে হয়তো ভালো হবে।’

প্যারিসের আইন কর্মকর্তারা বলছেন, শিশুকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতে ব্যর্থ হলে মা-বাবার দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার পাউন্ড জরিমানা হতে পারে।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে গত শনিবার একটি ভবনের পঞ্চমতলার বারান্দার রেলিংয়ে ঝুলে থাকা ছোট শিশুকে উদ্ধার করেন মালির মামউদু গাসামা। দালান বেয়ে তরতরিয়ে শিশুটির কাছে পৌঁছে শিশুটিকে উদ্ধার করেন মাত্র ৩৫ সেকেন্ডে। এ কাজের জন্য তাঁকে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ফ্রান্সের নাগরিকত্ব দিয়েছেন। বীরের বেশে শিশু উদ্ধারের জন্য তাকে ‘১৮ সালের স্পাইডারম্যান’ খেতাব দিয়েছেন প্যারিসের মেয়র অ্যানি হিদলগো। তাঁকে অনেকেই বাস্তবের ‘স্পাইডারম্যান’ও বলছেন।

২২ বছরের মামউদুর শিশুটিকে ‘দুঃসাহসিক’ উদ্ধারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েক লাখ মানুষ দেখেছে। গত বছর মালি থেকে ফ্রান্সে এসেছেন মামউদু। আফ্রিকার অন্য অনেকের মতোই তিনিও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসেন নৌকায় করে।