সালমানের নতুন চমক

মোহাম্মদ বিন সালমান
মোহাম্মদ বিন সালমান
  • মন্ত্রিসভায় রদবদল
  • তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সংস্কৃতির বিকাশ ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য

সৌদি আরবের মন্ত্রিসভায় গতকাল শনিবার বড় ধরনের রদবদল হয়েছে। বাদশাহর ছেলে ও ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান উপপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মন্ত্রিসভায় এটি দ্বিতীয় রদবদলের ঘটনা। রক্ষণশীল সৌদি আরবে যুবরাজ তাঁর নেওয়া ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে সক্ষম ব্যক্তিদের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়ে চমক দেখালেন।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, বাদশাহ সালমান দেশটির শ্রম, ইসলাম-বিষয়ক ও সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য নতুন মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করেছেন। তরুণদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সংস্কৃতির বিকাশ ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র, টেলিযোগাযোগ, পরিবহন ও জ্বালানি, শিল্প ও খনিজ মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি খাতের বড় ব্যবসায়ী আহমেদ বিন সুলেমান আল-রাজিকে শ্রম ও সামাজিক উন্নয়নমন্ত্রী করা হয়েছে। যুব সম্প্রদায়ের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যুবরাজ বিন সালমানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক দেশটিতে বেকারত্বের হার ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। শ্রম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০২২ সালের মধ্যে দেশটি ১২ লাখ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে বেকারত্বের হার ৯ শতাংশের নিচে নামিয়ে নিতে চায়।

সৌদি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আল-রাজিকে শ্রমমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দেওয়ার পেছনে কর্মসংস্থানের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার কর্মসংস্থানের লক্ষ্য পূরণের জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগকেও যুক্ত করতে চায়। এ কাজের জন্য শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতার চেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি আর কে হতে পারেন! লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের স্টিফেন হার্টগ বলেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে গত বছর দেশটির শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আটক করে রিয়াদের বিলাসবহুল রিটজ-কার্লটন হোটেলে বন্দী রাখা হয়। তাঁরা বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে ছাড়া পান বলে গুঞ্জন আছে। এতে সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদের একধরনের অবিশ্বাস ও অনাস্থা তৈরি হয়েছে। এটি দূর করতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের একজনকে কাছে টেনে নিল সৌদি সরকার। সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করে কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখাই হবে নতুন মন্ত্রীর মূল কাজ।

৩২ বছর বয়সী সৌদি যুবরাজ বিন সালমান দেশের অর্থনীতিকে তেল-নির্ভরতা থেকে সরিয়ে বহুমুখী করতে চাইছেন। এ ছাড়া কঠোর নিয়মনীতির মধ্যে থাকা সৌদিদের জীবনকে কিছুটা সহজ করতে অনেক বিধিনিষেধ তুলে দিয়েছেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই দেশটিতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। মানুষের বিনোদনের জন্য নেওয়া হয়েছে নানা প্রকল্প। আর গাড়ি চালানোর সুযোগসহ নারীরা বেশ কিছু অধিকার পেয়েছেন।

তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক করে সংস্কৃতিবিষয়ক নতুন মন্ত্রণালয় গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বাদশাহ। আরও অধিক সংখ্যক সৌদি নাগরিক দেশটিতে অবকাশযাপন করে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করুক-এই ভাবনা থেকে নতুন মন্ত্রণালয় গঠন। গত এপ্রিলে নবগঠিত সাধারণ সংস্কৃতি কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রিন্স বদর বিন আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ বিন ফারহান আল সৌদকে এবার নতুন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে ধর্মীয় রক্ষণশীলদের খ্যাপাতে চান না বিন সালমান। সে কারণে ধর্মীয় পুলিশের সাবেক প্রধান আবদুল লতিফ বিন আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহমান আল আল-শেখকে ইসলাম-বিষয়ক মন্ত্রী করা হয়েছে।

বাদশাহ সালমান নতুন একটি রাজকীয় কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। যুবরাজ বিন সালমানকে প্রধান করে করা এই কমিশন পরিবেশ, পবিত্র নগর মক্কা ও জেদ্দার লোহিত সাগরের ঐতিহাসিক এলাকার সুরক্ষায় কাজ করবে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের টুইট করা ম্যাপে দেখা গেছে, দেশের ২ লাখ ৬৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় বন্য প্রাণীর পুনর্বাসন, তাদের উন্নয়ন এবং ইকো-পর্যটনকে উৎসাহিত করতে ছয়টি প্রাকৃতিক অঞ্চল সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আগস্ট মাসে পবিত্র হজ পালনের জন্য পবিত্র নগর মক্কায় আসা লাখ লাখ মুসল্লিকে স্বাগত জানানো হবে কমিশনের অন্যতম প্রধান কাজ।