তাজমহলের আসল রং নির্ণয়ের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার উদ্যোগ

তাজমহলের প্রকৃত রং নিয়ে চলছে আলোচনা। ছবি: এএফপি
তাজমহলের প্রকৃত রং নিয়ে চলছে আলোচনা। ছবি: এএফপি

বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের এক স্থাপনা তাজমহলের আসল রং নির্ণয়ের জন্য এবার বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাহায্য নিচ্ছে ভারত সরকার। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পরিবেশমন্ত্রী মহেশ শর্মা গতকাল রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গত মাসে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর সরকার তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে।
মন্ত্রী জানান, তাঁদের কাছে ১০০ বছর আগের তাজমহলের ছবি আছে। তখনকার ছবি নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা হলে পাওয়া যাবে তাজমহলের আসল রং।

তাজমহলের আসল রং কী সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সুপ্রিম কোর্টে। তাজমহল গড়া হয়েছিল শ্বেত পাথরে। আজ অবশ্য সেই রং নেই। আগে দেখা গেছে হলুদ, বদলে হয়েছে তা বাদামি। আর এখন তা বদলে হয়েছে ঘোলাটে ও অনেকটা সবুজাভ।

তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণ ও রক্ষার দাবিতে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলায় গত মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির অভিযোগ তুলে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগকে তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছেন, ঐতিহাসিক এই সৌধে পোকামাকড় ও কীটের আক্রমণ শুরু হলেও তা বন্ধের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ওই দিন সুপ্রিম কোর্ট প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এবং ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে তারা কী ভাবছে তা জানতে চেয়েছিলেন। বিচারপতি এম বি লোকুর ও বিচারপতি দীপক গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ জানান, যদি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সঠিকভাবে কাজ করত তা হলে আজ এ প্রশ্ন উঠত না।

ওই দিন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল এএনএস নাদকার্নি। তিনি ডিভিশন বেঞ্চকে জানান, পরিবেশ এবং বন মন্ত্রক আদালতের পরামর্শ অনুসারে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে। প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের আইনজীবী জানান, যমুনার স্রোতহীন নোংরা জলের জন্য তাজমহলে কীটের আক্রমণ হচ্ছে। এরই প্রতি উত্তরে আদালত জানান, যেভাবে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে তাতে আদালত অবাক হচ্ছে।

এর আগে গত মাসেই এ সংক্রান্ত শুনানিতে আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, তাজমহলের রং নিত্য পরিবর্তন হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ দূষণ। সরকার এই বিষয়টি নিয়ে কোনো ভাবনাচিন্তা করছে না। আগে তাজমহল ছিল হলদেটে, এখন হয়েছে ঘোলাটে এবং জায়গায় জায়গায় সবুজাভ। তাই ঐতিহাসিক এই সৌধকে যে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না তা স্পষ্ট।

তাজমহলকে রক্ষা করার আবেদন জানিয়েছিলেন বিশিষ্ট পরিবেশবিদ এমসি মেহতা। তাঁর আইনজীবী জানান, শীর্ষ আদালত একাধিকবার নির্দেশ দিলেও তা সঠিকভাবে পালন করা হয়নি। তাই এখন তাজমহল ভয়াবহ রূপ নিতে বসেছে। তিনি আরও বলেছেন, তাজমহলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও উন্নত নয়। বেশির ভাগ জায়গায় সিসিটিভি কাজ করছে না। কেন্দ্রীয় সরকার এবং উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকার শুধু অর্থ রোজগার ছাড়া আর কিছুই করছে না।

বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের এক আশ্চর্য ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহরের এই ঐতিহাসিক তাজমহল। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর সহধর্মিণী বেগম মমতাজের স্মৃতিরক্ষায় গড়ে তুলেছিলেন এই ঐতিহাসিক ভালোবাসার সৌধ। ১৬৩২ থেকে ১৬৫৩ সালের মধ্যে ৪২ একর জায়গা জুড়ে গড়া হয়েছিল এই ঐতিহাসিক স্মৃতি সৌধ তাজমহল। ১৯৮৩ সালে ইউনেসকো তাজমহলকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিসৌধের তালিকাভুক্ত করে।