যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি শিথিল করার ইঙ্গিত

সাজিদ জাভিদ
সাজিদ জাভিদ

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ জানিয়েছেন, অভিবাসন আইনের যেসব বিষয়ে বিতর্ক আছে, সেগুলো তিনি ইতিমধ্যে পর্যালোচনা শুরু করেছেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ভিসা (স্টুডেন্ট ভিসা) এবং কর্মসংস্থান ভিসার (ওয়ার্ক পারমিট, যা টিয়ার ২ নামে পরিচিত) বিদ্যমান কঠোরতা সংস্কারে আভাস দিয়েছেন।

বিবিসিকে গতকাল রোববার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাজিদ জাভিদ এসব কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের অভিবাসন নীতির কিছু বিষয়ে তিনি প্রকাশ্যে দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁর কথায় অভিবাসন নীতি শিথিল করার ইঙ্গিত মেলে।

সাজিদ জাভিদ বলেন, টিয়ার ২ ভিসায় দক্ষ কর্মী আনার ক্ষেত্রে বার্ষিক কোটা নির্ধারণের বিষয়টি ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থী সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকৃত পক্ষে খুব অল্পসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী কোর্স শেষ করার পর যুক্তরাজ্যে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে অভিবাসন আধিক্যের জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের দায়ী করা অযৌক্তিক। অবৈধ ব্যক্তিদের বসবাস অসহনীয় করে তুলতে থেরেসা মে ‘বিরূপ পরিবেশ’ (হস্টাইল এনভায়রনমেন্ট) সৃষ্টির যে নীতি অবলম্বন করেছিলেন, তার সঙ্গেও দ্বিমত পোষণ করেন জাভিদ। তিনি বলেন, ওই শব্দজোট ব্যবহার করতে রাজি নন তিনি। তাঁর চাওয়া ন্যায়সংগত অভিবাসন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন।

জাভিদ জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার অনেকেই তাঁর সঙ্গে একমত। জাভিদের এসব বক্তব্যকে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের নীতির সঙ্গে সরাসরি দ্বিমত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

২০১০ সালে ডানপন্থী কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর অভিবাসন আইনে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত থেরেসা মে ছিলেন রক্ষণশীল সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং অবৈধ ব্যক্তিদের বিতাড়নে তিনি ‘বিরূপ পরিবেশ’ সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী একের পর এক বিতর্কিত আইন বাস্তবায়ন করেন।

সরকারি নীতির অত্যধিক কঠোরতায় দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন, এমন অনেকেই অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হন। ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি’ নামে পরিচিত এ ঘটনা একপর্যায়ে তুমুল বিতর্ক তোলে। বাধ্য হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছাড়েন থেরেসা মের বিশ্বস্ত অনুগত অ্যাম্বার রাড। ফলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান সাজিদ জাভিদ। বিতর্ক সামাল দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। ইতিমধ্যে তিনি অবৈধ ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব খোলা, অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার তথ্য ব্যবহারসহ বিতর্কিত কয়েকটি আইনের প্রয়োগ স্থগিত করেছেন।

বর্তমানে টিয়ার ২ ভিসার অধীন ইইউ-বহির্ভূত দেশগুলো থেকে বছরে ২০ হাজার ৭০০ দক্ষ কর্মী আনার সীমা নির্ধারণ করা আছে। এই কোটা শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে গত ডিসেম্বর থেকে দক্ষ কর্মী আনা বন্ধ রয়েছে। এনএইচএস জানিয়েছে, গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত তাদের চিকিৎসক নিয়োগের ১ হাজার ৫০০ আবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে অভিবাসন বিভাগ। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসক-সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে।

আর শিক্ষার্থী ভিসায় অত্যধিক কড়াকড়ির কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ আপত্তি জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। মোট অভিবাসন হিসাব থেকে শিক্ষার্থীদের বাদ রাখার আহ্বান তাদের।