পাকিস্তানে রাজনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে আদালত যা বললেন

পাকিস্তানে রাজনীতিকদের নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে বলেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বিশেষ করে জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলামি-ফজলের (জেইউআই-এফ) প্রধানকে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেদের করতে পরামর্শ দিয়ে আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে না। গতকাল মঙ্গলবার আদালত এ আদেশ দেন।

আজ বুধবার এশিয়ান এজ অনলাইনে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়, এক স্বতঃপ্রণোদিত নোটিশে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিকমন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের পদাধিকারবলে প্রাপ্ত যানবাহনের পরিবর্তে বিলাসবহুল সরকারি গাড়ি ব্যবহারের ঘটনাটি নজরে নেন আদালত। আদালতের নির্দেশে বিলাসবহুল গাড়ি ফেরত দেওয়াও শুরু করেন মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তার।

দেশটির আইন অনুসারে মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তারা ১৮০০ সিসির ওপর কোনো গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না।

সরকারি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার ইস্যুতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসারের নেতৃত্বে তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সুরক্ষিত সরকারি গাড়ি এখনো ব্যবহার করছেন—এমন তিন নেতাকে তলব করেন। ওই তিন নেতা হলেন জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলামি-ফজলের প্রধান মাওলানা ফজুলর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল গাঠুর হায়দিরি ও নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) সিনেটর কামরান মিখায়েল।

জ্যেষ্ঠ কৌঁসুলি কামরান মুর্তজা আদালতকে জানান, গাড়িগুলো সরকার ফেরত নিয়ে গেছে।

এরপরই আদালত ওই আদেশ থেকে সরে এসে রাজনীতিকদের নিজেদের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিজেদের করার আদেশ দেন।

কামরান মুর্তজা আদালতকে আরও জানিয়েছিলেন, মাওলানা ফজলকে তিনবার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিল।

ওই সময় আদালত তাঁকে বলেন, জেইউআই-এফ নেতাকে নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেরই করা উচিত। তাঁর (মাওলানা ফজল) নিরাপত্তার জন্য কী পরিমাণ ব্যয় জাতির কষ্টে উপার্জিত অর্থ থেকে করা হয়, সেটা তাঁকে জানানো উচিত।

দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও সিন্ধুতে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে দেওয়া গাড়ির ব্যাপারে আদালত জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ কৌঁসুলি ফারুক এইচ নায়েক জানান, দুই নেতাই সরকারি গাড়ি ফেরত দিয়ে নিজেদের গাড়ি ব্যবহার করছেন।

আদালত জানান, রাষ্ট্রীয় খরচে রাজনৈতিক দলের কোনো নেতা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না।

এদিকে এক অনুষ্ঠানে মাওলানা ফজল প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, প্রটোকল ও নিরাপত্তার মধ্য তফাত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি প্রধান বিচারপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে আমার সঙ্গে প্রটোকল বিনিময় করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

সর্বোচ্চ আদালত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বাড়ির নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই ভিডিও দেখে আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চেয়েছিলেন, কোন আইনের আওতায় মুখ্যমন্ত্রীকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি, মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনকে কেন্দ্র করে পুলিশের তল্লাশিচৌকি স্থাপন এবং পার্কগুলোয় গাড়ি পার্ক করা হয়েছিল।

তবে আদালতকে জানানো হয়, সেখান থেকে তল্লাশিচৌকি ও সব ধরনের ব্যারিকেড তুলে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে আদালত বেলুচিস্তানের সাবেক সাত মন্ত্রীকে বিলাসবহুল গাড়ি এক রাতের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। গাড়ি ফেরত না দিলে প্রতিদিন এক লাখ রুপি জরিমানার বিধান করা হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে ফেরত না দিলে প্রতিদিনের জন্য দুই লাখ রুপি করে জরিমানা নির্ধারণ করা হয়।

আদালতের ওই নির্দেশের পর মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা ১০৫টি সুরক্ষিত বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার করা হয়।