গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড: ফ্ল্যাটের বাসিন্দা নির্দোষ!

গত বছরের ১৪ জুন ২৪তলা বিশিষ্ট লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৭২ জন নিহত হয়। ছবি: সংগৃহীত
গত বছরের ১৪ জুন ২৪তলা বিশিষ্ট লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৭২ জন নিহত হয়। ছবি: সংগৃহীত

লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে যে ফ্ল্যাট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল, সেই ফ্ল্যাটের বাসিন্দাকে নির্দোষ দাবি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ওই অগ্নিকাণ্ড-সংক্রান্ত গণশুনানিতে এমন দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট বাসিন্দার আইনজীবী।

আইনজীবী রাজভি মেনন বলেন, ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বেহাইলু কেবেডে ধোঁয়া দেখামাত্রই জরুরি সেবা প্রদানের নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেছেন। আশপাশের বাসিন্দাদের ঘটনাটি জানিয়েছেন। কেবল মোবাইল নিয়ে খালি পায়ে তিনি ভবন থেকে নেমে আসেন। ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেহাইলু কেবেডে সঠিক কাজ করেছেন দাবি করে তাঁর আইনজীবী বলেন, ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় কেবেডের কোনো দায় নেই। তিনি দাবি করেন, ভবনটির বাইরের চাকচিক্য বাড়াতে স্থানীয় কেনজিংটন কাউন্সিল যে বহিরাবরণ (ক্লেডিং) ব্যবহার করে, সেটিই অগ্নিকাণ্ডের এই ব্যাপকতার জন্য দায়ী।

ইরিত্রিয়া থেকে আসা বেহাইলু কেবেডে চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে ২৫ বছর ধরে থাকতেন। তাঁর রান্নাঘরের ডিপ ফ্রিজ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল বলে ধারণা। তাঁর আইনজীবী জানান, ডিপ ফ্রিজ থেকে যুক্তরাজ্যে বছরে তিন শতাধিক আগুনের ঘটনা ঘটে। এটা একান্তই দুর্ঘটনা।

অন্যান্য ভুক্তভোগী পরিবারের আইনজীবীরাও একই দাবি করে বলেন, দেখতে পুরোনো কিন্তু নিরাপদ একটি ভবনকে চাকচিক্য দিতে গিয়ে মৃত্যুকূপে পরিণত করা হয়েছে।

গত বছরের ১৪ জুন পশ্চিম লন্ডনের কেনজিংটন এলাকার গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৭২ জন নিহত হন। ২৪ তলার ওই ভবনে মোট ১২০টি ফ্ল্যাট ছিল। প্রায় ছয় শতাধিক লোকের বসবাস ছিলে এখানে। স্থানীয় কাউন্সিলের আবাসন সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা এখানে বসবাস করতেন।

গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশি একটি পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন কমরু মিয়া, তাঁর স্ত্রী রাবেয়া বেগম এবং তাঁদের তিন সন্তান মোহাম্মদ হামিদ (২৮) মোহাম্মদ হানিফ (২৬) ও হোসনা বেগম (২২)। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশি একটি পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন কমরু মিয়া, তাঁর স্ত্রী রাবেয়া বেগম এবং তাঁদের তিন সন্তান মোহাম্মদ হামিদ (২৮) মোহাম্মদ হানিফ (২৬) ও হোসনা বেগম (২২)। ছবি: সংগৃহীত

ওই দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি একটি পরিবারের পাঁচজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন কমরু মিয়া (৭৯), তাঁর স্ত্রী রাবেয়া বেগম এবং তাঁদের তিন সন্তান মোহাম্মদ হামিদ (২৮) মোহাম্মদ হানিফ (২৬) ও হোসনা বেগম (২২)।

পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্য মোহাম্মদ হাকিম শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, তাঁর পরিবার ১৭ তলার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। তিনি তাঁর পরিবারের জন্য অত্যন্ত গর্বিত জানিয়ে বলেন, তাঁর ভাইবোন মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বাবা-মাকে ফেলে যায়নি।

ওই দুর্ঘটনা তাঁকে এতিম করে দিয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ হাকিম বলেন, তাঁর বাবার দুবার স্ট্রোক হয়েছিল এবং একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। বাবার চলাফেলা করতে সমস্যা হতো। এসব বিষয় কাউন্সিলকে বারবার অবহিত করার পরও তাদেরকে ১৭ তলায় ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশি এই পরিবারের আদিবাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলকুরা ইউনিয়নের খৈশাউড়া গ্রামে।

২১ মে থেকে থেকে গ্রেনফেল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণ ও করণীয় নির্ধারণে গণশুনানি শুরু হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পাশাপাশি স্থানীয় কাউন্সিল ও ভবন সংস্কারের কাজ করা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করা হবে।