জি-সেভেনে ৫ ছবির ৫ গল্প

শুল্ক ও বাণিজ্য নিয়ে মতবিরোধের মধ্য দিয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়েছে। সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান ও জার্মানির শীর্ষ নেতাদের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনার কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগে ছড়িয়ে পড়ে। পাঁচটি আলাদা দেশের প্রকাশ করা পাঁচটি ছবি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
আলাদা কয়েকটি মুহূর্তের ছবিগুলোতে সম্মেলনকে ঘিরে প্রত্যেকটি দেশের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারটি চোখে পড়ছে। একেকটি ছবি দেখে মন হতে পারে যেন একেকটি একটি আলাদা গল্প।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম নির্ভার ভঙ্গিতে বসে আছেন। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
ছবিতে দেখা যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম নির্ভার ভঙ্গিতে বসে আছেন। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে শুল্ক আরোপ করে মিত্রদেশগুলোর ক্ষোভের মুখে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অথচ তিনি এবার বললেন শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের কথা। আর এতে জাপান বাদে জি-৭-এর বাকি পাঁচ সদস্যের ওপর মার্কিন শুল্ক বসেছে। এ নিয়ে কিছুটা তর্কও হয়েছে নেতাদের মধ্যে।

মার্কিনরা যে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরবরাহ করেছেন, সেটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরো সম্মেলনের মধ্যমণি হিসেবে আছেন। বসে থাকা ট্রাম্পের আশপাশে কর্মকর্তাদের ভিড়। ছোট টেবিলের অন্য প্রান্তে খসড়া ঘোষণা হাতে দাঁড়ানো জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ তাঁদের অবস্থান নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তর্ক করছেন। সম্মেলনের সব ছবিতেই এ ব্যাপারটি বোঝা গেলেও কিন্তু প্রকাশিত একেকটি ছবিতে ভিন্ন ভিন্ন মেজাজ দেখা যাচ্ছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স প্রথম সম্মেলনের একটি ছবি শেয়ার করেন। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও কানাডার কর্মকর্তারাও কাছাকাছি মুহূর্তের ছবি শেয়ারের পর শুরু হয়ে যায় বিতর্ক, সমালোচনা—কোনটি ঠিক ছবি।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যুক্তি তুলে ধরছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। ছবি: ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যুক্তি তুলে ধরছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। ছবি: ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর

সারাহ স্যান্ডার্সের ছবিতে ট্রাম্পকে দেখানো হয় সম্মেলনের মধ্যমণি হিসেবে। এতে দেখা যাচ্ছে, দুই হাত বুকের কাছে জড়ো করে চেয়ারে বসে আছেন আত্মবিশ্বাসী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁকে ঘিরে ঝুঁকে আছেন অন্য দেশের শীর্ষ নেতারা। তবে তাঁরা বেশ চিন্তিত।

মার্কিন এই ছবির কিছুক্ষণ পরপরই একই মুহূর্তের ভিন্ন একটি ছবি প্রকাশ করে ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর। বিপরীত দিক থেকে তোলা এ ছবিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিতর্ক করতে দেখা যাচ্ছে। অন্য বিশ্বনেতারা দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছেন মাখোঁর যুক্তি। ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তরের ছবিটিতে এক কর্মকর্তার মাথার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়ায় আঙ্গেলা ম্যার্কেলের উপস্থিতি ভালোভাবে বোঝা যায়নি।

জার্মান চ্যান্সেলরের দপ্তর থেকে প্রকাশিত ছবিতে ম্যার্কেল ছাড়া অন্য শীর্ষ নেতারা ম্লান। ছবিতে ম্যার্কেলকে দেখা যায় প্রভাববিস্তারকারী হিসেবে। ছবি: টুইটার
জার্মান চ্যান্সেলরের দপ্তর থেকে প্রকাশিত ছবিতে ম্যার্কেল ছাড়া অন্য শীর্ষ নেতারা ম্লান। ছবিতে ম্যার্কেলকে দেখা যায় প্রভাববিস্তারকারী হিসেবে। ছবি: টুইটার

ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তরের ছবিটিতে ম্যার্কেলকে দেখা না গেলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই জার্মান চ্যান্সেলরের দপ্তর থেকে যে ছবি প্রকাশ করা হয়, তাতে তিনি ছাড়া অন্যরা ম্লান হয়ে যান। এ ছবিতে ম্যার্কেলকে দেখা যায় প্রভাববিস্তারকারী হিসেবে। দুই হাত টেবিলে রেখে জানতে চাওয়ার ভঙ্গিতে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল অনেক নার্ভাস থাকা ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলছেন। মার্কিন এক কর্মকর্তার কারণে মাখোঁর মুখের অনেকটাই ঢাকা। যুক্তরাজ্যর প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেও প্রায় অদৃশ্য।

জার্মানে এ ছবিটাই মুহূর্তের মধ্যে এবারের জি-৭ সম্মেলনের প্রতীক হয়ে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছেয়ে যায় নানান ধরনের রসিকতা ও বিদ্রূপে। কেউ কেউ বলছেন, এটি হতে পারে ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ শিরোনামের চিত্রকর্মের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

ছবিটি প্রকাশ করেছে আয়োজক দেশ কানাডা। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
ছবিটি প্রকাশ করেছে আয়োজক দেশ কানাডা। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

আর একটি ছবিতে অন্য রকম বিষয় ফুটে ওঠে। ট্রাম্পের কথা বলার সময় ট্রুডো, মাখোঁ, বোল্টন—সবাই সেখানে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিমায় আছেন।

সব শেষে একটি ছবি প্রকাশ করে আয়োজক দেশ কানাডা। জি-৭ সম্মেলনের এবারের চেয়ারম্যান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কানাডার ছবিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অন্যদের সঙ্গে সমানতালে মিশতে দেখা যাচ্ছে। বিরোধ মেটাতে সবার আন্তরিকতাও বোঝা যাচ্ছে। ট্রুডোকে দেখে মনে হচ্ছে দ্বন্দ্ব মেটাতে তিনিই ভূমিকা পালন করছেন। তথ্যসূত্র: এএফপি, বিবিসি