উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে শেষ কথা বলবে কংগ্রেস

সিঙ্গাপুরে বৈঠকের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং-উন চুক্তি সই করেন। ছবি: এএফপি
সিঙ্গাপুরে বৈঠকের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং-উন চুক্তি সই করেন। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোরীয় উপদ্বীপকে পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে আদৌ রাজি করাতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেক রিপাবলিকান সিনেটর। তাঁরা মনে করেন, এ নিয়ে শেষ কথা বলবে কংগ্রেস। পলিটিকো এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

গতকাল সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপের বিলাসবহুল ক্যাপেলা হোটেলে তৈরি হয়েছে নতুন ইতিহাস। ট্রাম্প-কিম সেখানে একান্ত বৈঠক করেন। দুই নেতার মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দুই নেতার যৌথ বিবৃতিতেও কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করা এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও দিয়েছেন। কোরীয় যুদ্ধ অবসানের কথা বলেছেন।

তবে এ চুক্তির খুব কম তথ্যই জানা গেছে। সেখানে বলা নেই কীভাবে কিম জং-উন কোরীয় উপদ্বীপে নিরস্ত্রীকরণে রাজি হলেন। ক্যাপিটাল হিলের রিপাবলিকানরা বলেন, তাঁরা চান ও আশা করেন, হোয়াইট হাউস যেকোনো চুক্তি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তাদের সামনে উপস্থাপন করবে। এর মানে হলো, প্রেসিডেন্ট ও তাঁর কর্মীদের এ নিয়ে আরও কাজ করতে হবে।

সিনেট মেজরিটি লিডার, কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের সিনেটর মিচ ম্যাককোনেল বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কোনো তাৎপর্যপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছে থাকেন, তবে তা নিশ্চয়ই চুক্তি আঙ্গিকে হয়েছে। ‘প্রশাসন কীভাবে এটি করেছে, এটা তাদের ব্যাপার। তবে আমি মনে করি, যেকোনো আঙ্গিকে বিষয়টি কংগ্রেসে আসা উচিত।’

কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা এই সমঝোতাও পাছে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরান চুক্তির মতো হয়ে যায়, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক সমঝোতার বিষয়টি চুক্তি আকারে সিনেটে পেশ করেনি। উল্টো তিনি এই চুক্তিটি যেকোনো সময় আইনপ্রণেতারা চাইলে বাতিল করতে পারবেন—এমন সুযোগ রেখে ডেমোক্র্যাটদের বিপুল সমর্থন নিয়ে আইন পাস করে। এর ফলে সম্প্রতি ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিতে পেরেছেন।

রিপাবলিকানরা মনে করছেন, ট্রাম্প নিশ্চয়ই একই ভুল করবেন না। টেক্সাসের সিনেটর হুইপ জন করনাইন সাংবাদিকদের বলেন, একতরফাভাবে কিছু করলে বা নির্বাহী ক্ষমতা বলে কিছু করলে বেশি দিন টিকতে পারবে না। ‘আমি মনে করি, ওই চুক্তিতে কংগ্রেসের যথাযথভাবে অনুমোদনের সিল লাগাটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এতে চুক্তির স্থায়িত্ব নিশ্চিত হয়।’

ওবামাকে ইরানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি আকারে প্রকাশের জন্য চাপ প্রয়োগকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সিনেটর রন জনসন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন যাতে বলতে পারে যে আমরা একটি চুক্তি করতে পেরেছি, সেই পন্থার মধ্য দিয়ে যাওয়া। এটি যদি যাচাইয়ের সুযোগ না থাকে, তাহলে সেখানে ভুল থাকার আশঙ্কা থেকেই যায়।’

কানসাসের রিপাবলিকান সিনেটর জেরি মোরান বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তিটি সিনেটে তোলা উচিত হবে। কারণ, কিমকে ট্রাম্প যেভাবে প্রশংসা করলেন, তা কোনোভাবেই একজন একনায়ক, স্বৈরশাসক বা অত্যাচারীর জন্য হতে পারে না।

ফ্লোরিডার সিনেটর মারকো রুবিও একই কথা বলেছেন। তিনি টুইট করে বলেন, কিমের জন্য ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা কৌশলগত হতে পারে। এর মানে এই নয় যে উত্তর কোরিয়ার স্বৈরাচারী রেকর্ডকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

টেক্সাসের সিনেটর করনাইন বলেন, ‘আমার মনে হয়, দুই দেশের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপনের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প। আর এর ফলে যদি কিম পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে রাজি হয়ে হয়ে থাকে, তাহলে ট্রাম্পের প্রশংসার মূল্য আছে।’

আইওয়ার রিপাবলিকান সিনেটর জনি আর্নস্ট কোরিয়ান উপদ্বীপ থেকে নিজেদের বাহিনী সরিয়ে আনার বিষয়টিতেও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন সম্মেলন সফল হয়েছে, ভালো কথা। কিন্তু কোরিয়ান উপদ্বীপ থেকে মার্কিন বাহিনী সরানো ঠিক হবে না।

তবে তাঁর ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী নিউইয়র্কের চাক শুমার বলেন, কীভাবে এবং আদৌ কংগ্রেসে তা অনুমোদন করতে পারে কি না, তা নির্ধারণে সময় এখনো আসেনি।