অভিনেতা সৌমিত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন বিজেপি নেতা

অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপির এককালের রাজ্য সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা সাক্ষাৎ করেন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপির এককালের রাজ্য সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা সাক্ষাৎ করেন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতার সংস্কৃতি অঙ্গনের এক জীবন্ত কিংবদন্তি। অভিনেতা, আবৃত্তিকার, নাট্যব্যক্তিত্ব, নাট্যকার, আরও কত গুণের অধিকারী তিনি। পেয়েছেন চলচ্চিত্র অঙ্গনের ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার। পেয়েছেন আরও অনেক পুরস্কার আর সম্মান। এই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আজন্মলালিত বাম আদর্শে। ফলে তিনি এখনো পশ্চিমবঙ্গের অনেক শিল্পীর মতো বাম ঘরানা ছেড়ে ডান ঘরানায় ঢোকেননি।

সেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপির এককালের রাজ্য সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়েছিলেন। গতকাল শুক্রবার সকালের দিকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় রাহুল সিনহাকে সেই সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছিলেন মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য। রাহুল সিনহা ছুটেও গিয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দক্ষিণ কলকাতার গল্ফ গ্রিনের বাসভবনে। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি ঢোকেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসভবনে। মিনিট পাঁচেক কথা বলেন দুজনে। তারপর রাহুল সিনহা বেরিয়ে আসেন।

আর রাহুল সিনহার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসভবনে সাক্ষাৎকারের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা ছুটে যান সৌমিত্রের বাসভবনে। কী কথা হয়েছে রাহুলের সঙ্গে সেই কথা জানার জন্য। বিজেপি কি চাইছে সৌমিত্রকে? নাকি শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎকারের জন্য ছুটে এসেছেন? ইত্যাদি প্রশ্নে জেরবার হচ্ছিল কলকাতার সংস্কৃতি অঙ্গন।

সৌমিত্রর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকেরা ঘিরে ধরেন রাহুল সিনহাকে। রাহুল শুধু বললেন, ‘সরকারের কাজ ওনার ভালো লাগছে। নোট বাতিলে যে সমস্যা হয়েছে, সে কথাও বললেন।’

সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের কাজ আশা করেন বা এ ব্যাপারে তিনি কী পরামর্শ দিতে চান—এই প্রশ্নের জবাবে সৌমিত্র অনীহা দেখান। বলেন, নানা কাজ নিয়ে তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার মতো তাঁর সময় নেই।

রাহুল সিনহা মোদি সরকারের চার বছরের শাসনের ওপর বিজেপির প্রকাশিত একটি বই তুলে দেন সৌমিত্রের হাতে।

রাহুল সিনহা কেন এসেছিলেন—এ প্রশ্নে বেশ বিরক্তিসহকারে সৌমিত্র বলেন, ‘আমার বাড়িতে রোজ বহু মানুষ আসেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। উনিও এসেছেন। এটাকে এত বড় করে দেখার কী আছে বুঝতে পারছি না।’

সাংবাদিকেরা তখন বলেন, রাহুল সিনহা তো সাধারণ একজন সাক্ষাৎপ্রার্থী নন। উনি এ রাজ্যের বিজেপির প্রথম সারির নেতা। জবাবে সৌমিত্র বলেন, ‘তাতে কী হয়েছে। অনেকেই আসেন। উনিও দেখা করতে চেয়েছিলেন। সৌজন্য মূলকভাবে তাঁকে পাঁচ মিনিট সময় দিয়েছি। এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়।’ সৌমিত্র অবশ্য এ কথা জোরের সঙ্গে জানিয়ে দেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কাজটি ভালো করেনি সরকার। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির মুখে পড়ে।

মূলত ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশটিতে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানোর এক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিজেপি। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘জনসম্পর্ক অভিযান’। পশ্চিমবঙ্গের এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাহুল সিনহা। তিনি এই লক্ষ্যে রাজ্যের বিশিষ্টজনদের বাড়ি বাড়ি দিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে বর্তমান বিজেপি সরকারের শাসনের নানা দিক সম্পর্কে জেনে নিচ্ছেন। পাশাপাশি তাঁদের কোনো মতামত বা পরামর্শ আছে কি না, তাও জেনে নিচ্ছেন। এই লক্ষ্যে রাহুল সিনহা ইতিমধ্যে দেখা করেছেন কলকাতার সাবেক পুলিশ কমিশনার দীনেশ বাজপেয়ি, কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি শ্যামল কুমার সেন, ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অরূপ রাহাসহ আরও কয়েক বিশিষ্টজনের সঙ্গে।