ভোরে শিশুদের ভূমিষ্ঠ হওয়ার হার বেশি

শত যন্ত্রণা ও অশুভের মাঝেও এই পৃথিবীতে আনন্দের ক্ষণ জন্ম দেওয়ার সহজাত ক্ষমতা কার আছে? নিশ্চিতভাবেই এ প্রশ্নের উত্তর ‘শিশু’। শিশুরাই পারে এক লহমার হাসিতে হাজারো ক্ষত ভুলিয়ে দিতে। আর যদি দিনের সবচেয়ে নির্মল সময়টির তত্ত্ব-তালাশ করা হয়, তবে তার উত্তর নিশ্চিতভাবেই ‘ভোর’। আর এ কারণেই হয়তো ভোরকেই শিশুরা বেছে নেয় পৃথিবীতে আগমনের ক্ষণ হিসেবে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভোরেই শিশুদের ভূমিষ্ঠ হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। 

বলা হচ্ছে, স্বাভাবিক প্রসবের কথা। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যে শিশুদের জন্ম হয়, তাদের জন্মক্ষণ অবধারিতভাবেই হয় স্বাভাবিক কর্মঘণ্টাতেই।
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক ইংল্যান্ডের শিশু জন্মের ক্ষণ নিয়ে একটি গবেষণা চালান। গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক অ্যালিসন ম্যাকফারলেন। এতে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া ৫০ লাখ শিশুর জন্মের সময় বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, অধিকাংশ শিশুর জন্মক্ষণটি ভোরে। আরও ভালো করে বললে ভোর ৪টার আশপাশে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এখানে স্বাভাবিক জন্মের বিষয়টিই হিসাবে নেওয়া হয়েছে। আর প্রসববেদনা থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত সময়সীমা ধরলে তা রাত একটা থেকে সকাল সাতটার মধ্যে।

শিশুরা ব্যস্ত-ত্রস্ত সময় পছন্দ করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যবেক্ষণাধীন সময়ে ৭০ শতাংশ শিশুর জন্মই হয়েছে স্বাভাবিক কর্মঘণ্টার বাইরে। কর্মদিবসের সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে মাত্র ২৮ শতাংশ শিশুর জন্ম হয়। বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে চিকিৎসক ও ধাত্রীদের নিয়োগ ও তাদের কাজের সময় বণ্টনে এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।

এ বিষয়ে অ্যালিসন ম্যাকফারলেন বিবিসিকে বলেন, ‘বর্তমানে ধাত্রীবিদ্যা অনেক উন্নত হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে শিশুদের ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রবণতা রাতের দিকে বেশি। তবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু ভূমিষ্ঠের ঘটনা দিনেই বেশি হয়।’

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ড. পিটার মার্টিন বলেন, ‘হতে পারে রাতের বেলা ভূমিষ্ঠ হওয়ার বিষয়টি মানুষের ইতিহাসের সঙ্গেই জড়িত। আমাদের পূর্বপুরুষেরা জীবন-জীবিকার তাগিদে দিনের বেলা বাইরে থাকত। অন্ধকার নামার পরই পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে হতো। ফলে শরীরও এই সময়ই প্রস্তুত হয়ে উঠত হয়তো। এই প্রবণতার পেছনে নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি জড়িত।’

তবে গবেষকদের এই ব্যাখ্যাটি খাটে না ক্রিসমাসের মতো ছুটির দিনের ক্ষেত্রে। এই দিনে পরিবার ও স্বজনদের উপস্থিতির নিশ্চয়তা সবচেয়ে বেশি হলেও এই দিনে পর্যবেক্ষণাধীন সময়ে ইংল্যান্ড শিশু জন্মের হার মাত্র ৭ শতাংশ।