গভর্নর পদ থেকে আনোয়ার চৌধুরীকে সাময়িক প্রত্যাহার

আনোয়ার চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
আনোয়ার চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটিশ কূটনীতিক আনোয়ার চৌধুরীকে কেইম্যান আইল্যান্ডসের গভর্নরের পদ থেকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। গত বুধবার হুট করেই তাঁকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার এই খবর পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে লন্ডনে ডেকে আনা হয়। তবে তাঁর পরিবার এখনো কেইম্যান আইল্যান্ডসে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

আনোয়ার চৌধুরী বাংলাদেশি পরিবারের সন্তান। ব্রিটিশ কূটনীতিক হিসেবে নাম লেখানো প্রথম কোনো বাংলাদেশি তিনি।

যুক্তরাজ্য সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, আনোয়ার চৌধুরীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। এই তদন্ত শেষ হতে চার থেকে ছয় সপ্তাহ লাগবে। তদন্তের পর জানা যাবে আনোয়ার চৌধুরী গভর্নর পদে আবার ফিরবেন কি না। চলতি বছরের ২৬ মার্চ আনোয়ার চৌধুরী কেইম্যান আইল্যান্ডসের গভর্নর হিসেবে কাজ শুরু করেন।

আনোয়ার চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো কী, কারা এসব অভিযোগ করেছেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি। গত পাঁচ দিনেও কোনো তরফ থেকে অভিযোগগুলোর বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। ফলে, এখনো রহস্যাবৃত রয়ে গেছে আনোয়ার চৌধুরীকে প্রত্যাহারের বিষয়টি।

আনোয়ার চৌধুরী ১৯৮৫ সালে রয়্যাল নেভির ‘ইঞ্জিনিয়ারিং স্ট্র্যাটেজিস্ট’ হিসেবে সিভিল সার্ভিসে (সরকারি চাকরি) যোগ দেন। এরপর দ্রুত তাঁর ক্যারিয়ারের উন্নতি হতে থাকে। ২০০৪ সালে তিনি বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়া প্রথম দুই অশ্বেতাঙ্গর একজন আনোয়ার চৌধুরী।

বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি সিলেটে হজরত শাহজালাল মাজার প্রাঙ্গণে গ্রেনেড হামলার শিকার হন। ওই ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছিল। আর আহত হন আনোয়ার চৌধুরীসহ ৪০ জন। ওই গ্রেনেড হামলার অভিযোগে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গিকে গত বছর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

আনোয়ার চৌধুরী ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিলেন। এরপর ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের অধীন ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট বিভাগের পরিচালক ছিলেন। ২০১৩ সালে তাঁকে লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত করা হয়। ওই দায়িত্বের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তাঁকে কেইম্যান আইল্যান্ডসের গভর্নর করার খবর আসে।

যুক্তরাজ্যের অধীন ১৪টি বৈদেশিক ভূখণ্ড (ওভারসিস টেরিটোরি) রয়েছে। তার মধ্যে ক্যারিয়ান সাগরের পশ্চিমাংশে অবস্থিত কেইম্যান আইল্যান্ডস অন্যতম। তিনটি আলাদা দ্বীপ নিয়ে এই কেইম্যান আইল্যান্ডস গঠিত, যার মোট আয়তন ২৬৪ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা ৬০ হাজারের মতো। নির্বাচিত প্রিমিয়ার (প্রধানমন্ত্রী) নিজস্ব কেবিনেট গঠন করে প্রশাসন পরিচালনা করেন। আর গভর্নর সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে ব্রিটিশ সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বোঝাপড়া এবং নজরদারির কাজটি করেন।

কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিশ্বের অসৎ কোম্পানি ও ধনকুবেররা যে কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্রে (ট্যাক্স হেভেন নামে পরিচিত) কোম্পানি নিবন্ধন করেন, তার মধ্যে কেইম্যান আইল্যান্ডস অন্যতম।

সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার কর ফাঁকি ঠেকাতে এর নিয়ন্ত্রণাধীন বৈদেশিক ভূখণ্ডগুলোতে নিবন্ধিত কোম্পানির মালিকানা প্রকাশ বাধ্যতামূলক করে আইন পাস করে। এ কারণে কেইম্যান আইল্যান্ডসের কোম্পানিগুলো অধিকতর গোপনীয় স্থানে সরে যেতে পারে এবং এতে কেইম্যান আইল্যান্ডসের অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করতে কেইম্যানের নির্বাচিত প্রিমিয়ার (প্রধানমন্ত্রী) অ্যালডেন ম্যাকলাউলিন ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছেন।

ম্যাকলাউলিন ইংরেজি দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেন, আনোয়ার চৌধুরীকে প্রত্যাহারের বিষয়টি ‘আকস্মিক’ এবং ‘দুর্ভাগ্যজনক’।

গভর্নরের মতো শীর্ষ পদে আসীন হলেও আনোয়ার চৌধুরী নিজের বন্ধুসুলভ আচরণ দিয়ে গত তিন মাসেই বেশ সাড়া ফেলেন। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোকে তিনি বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার দেন। যেখানে তিনি কেইম্যানবাসীর জন্য আমলাতান্ত্রিক বাড়াবাড়ি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন।

আনোয়ার চৌধুরীর অবর্তমানে ডেপুটি গভর্নরকে সাময়িকভাবে ভারপ্রাপ্ত গভর্নরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।