সারদা-নারদ মামলা নিয়ে ফের তৎপর সিবিআই, অস্বস্তিতে তৃণমূল

সিবিআই
সিবিআই

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সাড়া জাগানো তিন আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলা নিয়ে আবার তৎপর হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। এই মালার গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করার জন্য গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দিল্লি থেকে কলকাতা এসেছেন সিবিআইয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা রাকেশ আস্তানা।

আগামী বছর ভারতের লোকসভা নির্বাচন। তার আগে ফের এই তিন মামলা নিয়ে সিবিআই তৎপর হওয়ায় অস্বস্তি বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের।

এদিকে আজ বুধবার সিবিআই কর্মকর্তা রাকেশ আস্তানা এই মামলার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বিশেষ বৈঠক করছেন কলকাতার সিবিআই দপ্তরে। ফলে এই মামলায় কী দাওয়াই দেবে সিবিআই, তা নিয়ে কলকাতার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এবারও বিজেপির নেতারা এই মামলা নিয়ে ফের রাজনীতি গরম করতে চাইছেন। কারণ, মামলা তিনটিতে জড়িয়ে আছেন পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের নেতা থেকে মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কেরা; যদিও সিবিআইয়ের পাশাপাশি সমান্তরালভাবে এই মামলার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরিয়েট বা ইডি।

২০১৬ সালের মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একদল নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কের অর্থ গ্রহণের এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে প্রচারের আলোয় উঠে এসেছিল দিল্লির নারদ নিউজ ডটকম নামের একটি ওয়েব পোর্টাল। সেদিন তারা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কদের গোপনে অর্থ গ্রহণের ফুটেজ ফাঁস করে দিয়েছিল। সেই ভিডিও আবার কলকাতার রাজ্য বিজেপির কার্যালয়েও সেদিন ফাঁস করে দিয়েছিল বিজেপি। ওই স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা ও মন্ত্রীর ঘরে ঘরে, হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে টাকা।

এই স্টিং অপারেশনে যাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছিল, তাঁরা হলেন মুকুল রায় (সাবেক রেলমন্ত্রী ২০ লাখ টাকা), সুব্রত মুখোপাধ্যায় (পঞ্চায়েতমন্ত্রী ৫ লাখ), প্রয়াত সুলতান আহমেদ (তৃণমূল সাংসদ ৫ লাখ), সৌগত রায় (তৃণমূল সাংসদ ৫ লাখ), শুভেন্দু অধিকারী (তৃণমূল সাংসদ ৫ লাখ), কাকলি ঘোষ দস্তিদার (তৃণমূল সাংসদ ৫ লাখ), প্রসূন ব্যানার্জি (তৃণমূল সাংসদ ৫ লাখ), শোভন চ্যাটার্জি (কলকাতার মেয়র ৪ লাখ), মদন মিত্র (সাবেক পরিবহনমন্ত্রী ৫ লাখ), ইকবাল আহমেদ (তৃণমূল সাংসদ ৫ লাখ), ফিরহাদ হাকিম (পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ৫ লাখ) এবং মহম্মদ আহমেদ মির্জা (সিনিয়র পুলিশ অফিসার ৫ লাখ টাকা)।

এই ঘটনার আগে ২০১৩ সালের এপ্রিল ফাঁস হয় সারদা অর্থ কেলেঙ্কারি। অভিযোগ ওঠে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের ৩০০ মিলিয়ন ডলার তোলা হয় ১৭ লাখ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। সেই অর্থ কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস হয় সারদা কেলেঙ্কারি মামলায়। এই মামলায় জড়িয়ে সেদিন গ্রেপ্তার হন সারদা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান সুদীপ্ত সেনসহ তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ ও সাংসদ সৃঞ্জয় বসু, রাজ্য পুলিশের সাবেক ডিজি রজত মজুমদারসহ পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রসহ অন্য নেতারা। সেই মামলার তদন্তর দায়িত্ব পায় সিবিআই। সেই মামলার তদন্ত শেষ দিকে শ্লথ হয়ে পড়ে।

২০১৫ সালে আরেকটি অর্থ কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস হয় পশ্চিমবঙ্গে। সেটি রোজভ্যালি আর্থিক কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিত। সেই কেলেঙ্কারি মামলায় ৬০ হাজার কোটি রুপির আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। এই মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার হন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ ও অভিনেতা তাপস পাল।

পশ্চিমবঙ্গের সাড়া জাগানো এই তিন আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআইকে। আগামী আগস্ট মাসে এই মামলাগুলোর অগ্রগতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে সিবিআইয়ের।