পণ্য থেকে চিকিৎসা - বাংলাদেশের ওপরই নির্ভর করতে হয় ভারতের চার গ্রামের বাসিন্দাদের

ভারত
ভারত

হিঙ্গারিয়া, হুরোই, লাহালেইন ও লেজরি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব জয়ন্তীয়া জেলার চারটি গ্রামের নাম। গ্রামগুলো রাজ্যের সুতঙ্গ-সাইপুন বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। লোকসংখ্যা হাজার পাঁচেক। এই চারটি ভারতীয় গ্রামই টিকে আছে বাংলাদেশের ভরসায়।

নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকে শুরু করে চিকিৎসা—সবই নির্ভর করে বাংলাদেশের সিলেট জেলার গ্রামগুলোর ওপর। কারণ এই চারটি গ্রাম মেঘালয়ের হলেও মূল রাজ্য থেকে অনেক দূরে। দুর্গম এলাকাটির সঙ্গে ঠিকমতো সড়ক যোগাযোগও গড়ে ওঠেনি গ্রামগুলোর।

স্থানীয় বিধায়ক ডিফেন্ডার পাকেম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, এই চারটি গ্রামের সঙ্গে নিকটবর্তী ভারতীয় শহরের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। দুর্গম কাঁচা রাস্তা দিয়ে সেই পথ অতিক্রম করা অসাধ্য। তাই হাতের কাছে বাংলাদেশকেই গ্রামবাসী বেশি পছন্দ করে।

আরও এক ধাপ এগিয়ে রাজ্যের সমাজকল্যাণমন্ত্রী খিরমেন সাইল্লা প্রথম আলোকে জানালেন, গ্রামগুলোতে এখনো বাংলাদেশি মুদ্রাই বেশি চলে। বিপদ-আপদে বাংলাদেশ গ্রামবাসীর পাশে থাকায় তিনি বাংলাদেশের সরকারকে ধন্যবাদও জানান।
এই গ্রামগুলোতে এখনো সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া লাগেনি। কাঁটাতারের বেড়া হলে তাঁদের বেঁচে থাকাই দায় হবে বলে মনে করেন গ্রামবাসী।

গ্রামবাসী কাইন জামোন অ্যামসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জানি, সীমান্ত অতিক্রম করে ওপারে যাওয়া বেআইনি। কিন্তু আমরা নিরুপায়। পরিস্থিতিই আমাদের বাধ্য করেছে।’

এই চারটি গ্রাম থেকে সবচেয়ে কাছের পাকা রাস্তার দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার, সোনাপুরে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। রাজধানী শিলংয়ের সঙ্গে দূরত্ব ১৮৫ কিলোমিটার। সবচেয়ে কাছের ভারতীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৭৫ কিলোমিটার দূরে উমকিংয়ে অবস্থিত। অন্যদিকে পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথেই পাওয়া যায় বাংলাদেশি বাজার। বাংলাদেশি মোবাইল পরিষেবাও তাদের কাছে অনেক সহজলভ্য। প্রত্যন্ত এই গ্রামগুলোকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে রিমবৈ, বোরকাট-জালাপুর সড়ক নির্মাণ প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে বেশ আগেই। এতে অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল ৯৭ কোটি রুপি। কিন্তু ২০১১ সালে ঘোষিত সেই প্রকল্প এখনো বাস্তবায়িত করার কোনো লক্ষণ নেই।

এ ব্যাপারে রাজ্যের সমাজকল্যাণমন্ত্রী খিরমেন সাইল্লার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মুখ্যমন্ত্রী কনার্ড সাংমার কাছে স্মারকলিপি দেন।
এ প্রসঙ্গে বিধায়ক ডিফেন্ডারের দাবি, ‘আগে আমাদের চাই রাস্তা। রাস্তা হলেই অনেক সমস্যা মিটে যাবে।’
আর মন্ত্রী সাইল্লা জানান, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দ্রুত গ্রামগুলোতে পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে হাত দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীও বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
আর গ্রামবাসী কাইন জামোনের মতে, ‘আর পশুর মতো বাঁচতে পারছি না আমরা। এর আগে ভোট বয়কটের হুমকি দিয়েও কিছু হয়নি। এখন দেখার বিষয় কনার্ড সাংমা কী করেন।’