আসামের বাঙালিদের নিয়ে শঙ্কায় কলকাতার বুদ্ধিজীবীরা

নাগরিকত্ব নিবন্ধন তালিকা বা ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনস (এনআরসি) নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন আসামের বাঙালিরা। আগামী ৩০ জুন প্রকাশ হতে যাচ্ছে আসামের নাগরিকত্বের চূড়ান্ত তালিকা। এই তালিকা থেকে বাদ যেতে পারেন আসামে বসবাসকারী ১ কোটি ৯৫ লাখ বাঙালির নাম। আসামের এসব বাঙালি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কলকাতার বুদ্ধিজীবীরা।

আসামে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী বাঙালিরা যাতে তাদের নাগরিকত্ব না হারান সেই দাবিতে গতকাল শনিবার কলকাতা প্রেসক্লাবে আয়োজন করা হয়েছিল এক বুদ্ধিজীবী সমাবেশের। সমাবেশটির আয়োজন করে কলকাতার ‘হিউম্যান প্রোটেকশন অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস অর্গানাইজেশন’ নামে একটি সংগঠন।

এতে যোগ দেন আসামের গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক তপধীর ভট্টাচার্য, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক ভট্টাচার্য, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, কংগ্রেসের সাবেক রাজ্য সভাপতি ও বর্তমান সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ, বিজেপির রাজ্য সম্পাদক ও নেতা সায়ন্তন বসু প্রমুখ।

বিদেশি তকমা দিয়ে আসামের বাঙালিদের তাড়ানোর উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, যুগ-যুগ ধরে যেসব বাঙালিরা আসামে বসবাস করে আসছেন, এখন কীভাবে তারা বিদেশি হলেন? বক্তারা অবিলম্বে আসামের বাঙালিদের সম্মানের সঙ্গে বসবাস করার অধিকার নিশ্চিত করারও জোরালো দাবি জানান।

অধ্যাপক তপধীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘১৯৪৯ সালে এ দেশে আমার জন্ম। আমিও আসামের নাগরিক তালিকার বাইরে।’

এই নাগরিকত্ব আইনটি সংবিধানবিরোধী বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়।

আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘আসামের ভাষাভিত্তিক সমস্যাকে বিজেপি আজ ধর্মীয় সমস্যার রূপ দিয়েছে।’ কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘আসামের কৃষি উন্নয়ন, সল্টলেক নগরীর নির্মাণে আসামের বাঙালি মুসলিমদের অবদান ছিল। তা আজ অস্বীকার করা যায় না।’

কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘অসমিয়ারা নিজেরা অবলুপ্তির ভয় পাচ্ছেন। আমাদের বোঝানো উচিত অসম অসমিয়াদেরই। তবে বাঙালিরা তাঁদের জন্য কোনো হুমকি নয়। তাই এই অসমিয়া-বাঙালি বিভেদ বন্ধ করা উচিত।’

সিপিএমের যুব নেতা ধ্রুব জ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের এই ভাগাভাগি রাজনীতির পেছনে যারা ষড়যন্ত্র করছে, চক্রান্ত করছে, তাদের প্রতিহত করতে হবে।’

আমরা অসমিয়া-বাঙালি দ্বন্দ্ব চাই না বলে মন্তব্য করেন রাজ্য বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু।

প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ জুন এনআরসি এর আওতায় প্রকাশ হতে হচ্ছে আসামের নাগরিকত্বের চূড়ান্ত তালিকা। এই তালিকা প্রকাশের পর যাতে আসামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সেই লক্ষ্যে আসাম সরকার রাজ্যে অতিরিক্ত ১৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর আবেদন করেছে।