ভারতে টাটা ন্যানোর বিদায়ঘণ্টা!

টাটা ন্যানো গাড়ি
টাটা ন্যানো গাড়ি

টাটা প্রতিষ্ঠানের ন্যানো গাড়ির বাজার এখন পড়তির দিকে। দেশের বাজারে চাহিদা নামমাত্রে নেমে এসেছে। বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ন্যানো নিয়ে ভিন্ন চিন্তাভাবনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। যেকোনো সময়ে এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে টাটা।

ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী টাটা সাধারণ মানুষকে সস্তায় গাড়ি উপহার দেওয়ার জন্য ২০০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ির কারখানা গড়ার উদ্যোগ নেয়। সায় দেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এই গাড়ি কারখানা গড়ার জন্য ৯৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে তা তুলে দেন টাটার হাতে। টাটাও ঘোষণা দেয়, তারা এক লাখ রুপি মূল্যে গাড়ি ছাড়বে দেশে। গাড়ির নাম দেওয়া হয় এক লাখি ন্যানো। যদিও পরবর্তী সময় আর সেই এক লাখ রুপি দাম ধরে রাখতে পারেনি টাটা। বেড়েছে দাম।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই জমি অধিগ্রহণকে সেদিন মেনে নেননি সিঙ্গুরের একদল চাষি। তাঁরা আপত্তি তোলেন টাটাকে জমি দিতে। এ নিয়ে গড়ে ওঠে তীব্র আন্দোলন। ফলে এই জমি নিয়ে মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টসহ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত।

এদিকে এই মামলা ও আন্দোলনের মাঝে টাটার কর্ণধার রতন টাটা ঘোষণা দেন, তাঁরা ন্যানো গাড়ির কারখানা সিঙ্গুর থেকে সরিয়ে নিয়ে যাবেন গুজরাটের সানন্দে। সে অনুযায়ী সানন্দে গড়ে ওঠে ন্যানো কারখানা। উৎপাদনও শুরু হয়। প্রথম দিকে ন্যানো গাড়ির একটা বাজার পেলেও ধীরে ধীরে সেই বাজার সংকুচিত হতে থাকে। যদিও সানন্দে উৎপাদনের আগে টাটা গোষ্ঠী তাদের উত্তরাখন্ডের পন্থনগর টাটার কারখানা থেকে ২০০৯ সালের মার্চ মাস থেকে ন্যানোর উৎপাদন শুরু করে ।

টাটা ন্যানো গাড়ি
টাটা ন্যানো গাড়ি

 
তবে ভারতে অন্যান্য গাড়ি কোম্পানি নতুন নতুন মডেলের গাড়ি ছাড়ায় ভাটা পড়ে ন্যানো গাড়ি বিক্রিতে। সেই ভাটার টান এখনো চলছে দেশজুড়ে। অন্যদিকে টাটা বাড়িয়ে দেয় ন্যানোর দামও।

বর্তমানে ন্যানো গাড়ির বিক্রি কমে যাওয়ায় টাটাও উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে।

টাটা গোষ্ঠী গত বুধবার জানিয়েছে, জুন মাসে তাদের গুজরাটের সানন্দের ন্যানো গাড়ি কারখানা থেকে মাত্র একটি ন্যানো গাড়ি উৎপাদিত হয়েছে, যেখানে গত বছরের জুনে উৎপাদিত হয়েছিল ২৭৫টি। জুন মাসে ভারতের গাড়ির বাজারে মাত্র তিনটি ন্যানো গাড়ি বিক্রি হয়েছে। বিদেশেও কমে গেছে এই গাড়ির চাহিদা। জুন মাসে বিদেশে কোনো ন্যানো গাড়ি রপ্তানি করেনি টাটা। অথচ গত বছরের জুনে ২৫টি গাড়ি রপ্তানি হয়েছিল বিদেশে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে টাটার এক কর্মকর্তা বলেছেন, যা পরিস্থিতি তাতে বোঝাই যাচ্ছে, এভাবে আর ন্যানো গাড়ি বাজারে বেশি দিন চলবে না। এখন এই কারখানাকে বাঁচিয়ে রাখতে নতুন করে লগ্নি বাড়িয়ে নতুন মডেলের নতুন গাড়ি উৎপাদনে উদ্যোগী হতে হবে।

তবে ন্যানোর বাজার ধরে রাখতে না পারলেও টাটার বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ অন্যান্য গাড়ির বাজার ভারতে দাপটের সঙ্গে রয়েছে।