কাতারের নাগরিকেরা ইউএইতে আতঙ্কে

হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে শুনানির প্রথম দিনে কাতারের প্রতিনিধিরা
হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে শুনানির প্রথম দিনে কাতারের প্রতিনিধিরা

কাতারে অবরোধ আরোপের পর গত এক বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত সে দেশে বসবাসরত কাতারের নাগরিকদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা ও হয়রানির মাধ্যমে কাতারিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। গত ২৭ জুন হেগে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে শুনানিতে এ কথা বলা হয়েছে।
২০১৭ সালের জুন মাসে আবুধাবি আরোপিত অবরোধ তুলে নেওয়ার জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের রায় দিতে হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) কাছে দোহা আবেদন জানানোয় উপসাগরীয় এলাকার এ সংকটটি আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, দোহার পক্ষের আইনজীবী ব্রিটিশ ব্যারিস্টার পিটার গোল্ডস্মিথ আদালতে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী কাতারের অনেক নাগরিক স্থায়ীভাবে আতঙ্কের মধ্যে বাস করছেন। তারা আরব আমিরাত থেকে বহিষ্কার আদেশের আতঙ্কে ভুগছেন।
সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর ২০১৭ সালের জুনে কাতারের ওপর অবরোধ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপ করে। এর ফলে ওই সব দেশের আকাশে কাতারের বিমান চলাচল নিষিদ্ধ এবং সৌদি আরবের সঙ্গে দেশটির একমাত্র স্থল সীমান্ত বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া উপসাগরীয় এই দেশগুলো ১৪ দিনের মধ্যে কাতারের নাগরিকদের দেশ ত্যাগের এবং নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের কাতার থেকে দেশে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে শুনানির তৃতীয় ও শেষ দিনে গোল্ডস্মিথ বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত অবরোধ পরিস্থিতিতে কাতারের নাগরিকদের সহায়তার জন্য যে হেল্পলাইন স্থাপন করেছে সেটি আবুধাবি পুলিশের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়েছে। এর ফলে আরব আমিরাতে অবস্থানরত কাতারের নাগরিকেরা ভয়ে তাদের কিংবা তাদের পরিবারের অবস্থান সম্পর্কে নিবন্ধন করতে হটলাইনের মাধ্যমে ফোন করছেন না। তাদের আশঙ্কা হটলাইনের মাধ্যমে পুলিশ আড়ি পেতে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। 

গোল্ডস্মিথ যুক্তি দেন, কাতারের একজন নাগরিকের সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রস্তাবিত প্রতিটি ট্রিপের জন্য আলাদা করে অনুমোদন নিতে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কাতারের একজন নারী বৈরুতে নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করাচ্ছেন। এ জন্য তিনি যতবারই বৈরুত যান এরপর তিনি আরব আমিরাতে পরিবারের কাছে আসতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। আরব আমিরাতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কাতারের ছাত্রদেরও ইমেইলে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এরপর থেকে অনেক ছাত্র তাদের উচ্চ শিক্ষার কোর্স বাতিল করে দিয়েছেন।
দেশটির এজেন্ট মোহাম্মদ আবদুলাজিজ আল-খুলাইফি বলেন, কাতারের নাগরিকদের যেকোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে আরব আমিরাতকে বিরত রাখতে আদালতের জরুরি নির্দেশনা চায় দোহা। তিনি বলেন, মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করার জন্য এই আদালতই কাতারের একমাত্র ভরসা।
১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এই বিচার আদালত বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে নানা বিতর্কের বিষয়ে রায় দিয়ে থাকে। বিচারকেরা এখন দোহার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এ জন্য কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে।
এর আগে এই সংকট নিরসনের ছয় জাতির উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) উদ্যোগে পরিচালিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।