নওয়াজ-মরিয়মকে কারাগারে নিতে হেলিকপ্টার!

দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম। ছবি: সংগৃহীত
দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম। ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়মকে বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হয়েছে। দেশটির জাতীয় জবাবদিহি সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) এ আবেদন সরকার অনুমোদন করেছে। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জিও টিভি এসব কথা বলেছে।

নওয়াজ শরিফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম লন্ডনে অবস্থান করছেন। নওয়াজের স্ত্রী কুলসুম নওয়াজ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন। আগামীকাল শুক্রবার লন্ডন থেকে নওয়াজ শরিফ ও তাঁর মেয়ের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির প্রধানের কাছে গতকাল বুধবার হেলিকপ্টার চেয়ে আবেদন করে এনএবির পাঞ্জাব শাখা। এনএবির পাঞ্জাব শাখার পরিচালক সেলিম শাহজাদ হেলিকপ্টার পাওয়ার আবেদন জানিয়ে বলেন, লাহোরের আল্লামা ইকবাল বিমানবন্দর থেকে নওয়াজ শরিফ ও মরিয়ম নওয়াজকে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে হেলিকপ্টারে করে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের নামার সঙ্গে সঙ্গে নওয়াজ ও মরিয়মকে গ্রেপ্তার করা হবে। এরপরই তাঁদের হেলিকপ্টারে করে আদাইলা কারাগারে নেওয়া হবে। পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলের সমর্থকদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ এড়াতে এ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে এনএবি।

৬ জুলাই দুর্নীতির দায়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে সাত বছর ও মরিয়মের স্বামী ক্যাপ্টেন সফদারকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের অ্যাকাউন্টিবিলিটি কোর্ট ওই রায় ঘোষণা করেন। কারাদণ্ডাদেশের পাশাপাশি নওয়াজকে ৮০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড ও মরিয়মকে ২০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে। ক্যাপ্টেন সফদার গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।

লন্ডনে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনাকে কেন্দ্র করে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। নওয়াজ শরিফ বরাবরই দুর্নীতির এ অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন।

নব্বইয়ের দশকে লন্ডনে পার্ক লেনের অ্যাভেনফিল্ড হাউসে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনে নওয়াজের পরিবার। পাকিস্তানের এনএবি কৌঁসুলি আদালতকে বলেন, নওয়াজ এই ফ্ল্যাটগুলো কেনার অর্থের বৈধ আয় দেখাতে পারেননি। যদিও নওয়াজের পরিবারের দাবি, বৈধ আয়ের অর্থ দিয়ে এসব ফ্ল্যাট কিনেছেন তাঁরা। তবে এনএবির জিজ্ঞাসাবাদে এসব ফ্ল্যাট কেনার বিষয়ে নওয়াজের পরিবারের সদস্যরা ভিন্ন রকম তথ্য দেন।

২০১৫ সালে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসে নওয়াজের। ওই সময় জানা গিয়েছিল, বেশ কয়েকটি অফশোর কোম্পানির সঙ্গে নওয়াজ শরিফের ছেলেমেয়েদের যোগসূত্র রয়েছে। অভিযোগ আছে, এই কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করে বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে এবং বিদেশে নানা সম্পদ কেনা হয়েছে। আলোচনায় ছিল লন্ডনে কেনা এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটগুলোও। শেষ পর্যন্ত সেই ফ্ল্যাটের কারণেই কারাদণ্ড হলো নওয়াজ ও তাঁর মেয়ের।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ফ্ল্যাট কেনার অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন নওয়াজ। আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া এনএবিকে অসহযোগিতা করা দায়ে দেওয়া হয়েছে এক বছরের কারাদণ্ড। তবে দুটি সাজা একই সঙ্গে চলবে। তাই নওয়াজকে ১০ বছর কারাগারে থাকতে হবে।

অন্যদিকে অবৈধ কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দেওয়ার কারণে সাজা পেয়েছেন নওয়াজের মেয়ে মরিয়ম। এ জন্য তাঁকে দেওয়া হয়েছে সাত বছরের কারাদণ্ড। আবার এনএবিকে অসহযোগিতা করা দায়ে দেওয়া হয়েছে এক বছরের কারাদণ্ড। তবে দুটি সাজা একই সঙ্গে চলায় মরিয়মকে সাত বছর কারাগারে থাকতে হবে। আর তাঁর স্বামী ক্যাপ্টেন সফদারকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এনএবিকে অসহযোগিতা করা দায়ে।

দুর্নীতির অভিযোগে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা হয়েছে। ৬ জুলাই যে মামলাটির রায় হয়েছে, তা এগুলোরই একটি। এই মামলার শতাধিক শুনানিতে অংশ নিতে হয়েছিল নওয়াজ ও তাঁর মেয়েকে। লন্ডনে বসে সরাসরি মামলার রায় শোনার কথা তাঁদের। নওয়াজের দুই ছেলে—হাসান ও হুসেইনেও সেখানে রয়েছেন। তবে ক্যাপ্টেন সফদার পাকিস্তানে থাকলেও আদালতে হাজির হননি।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যেতে হয়েছিল নওয়াজ শরিফকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন। আদালত তাঁকে রাষ্ট্রীয় যেকোনো পদে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে আদালতের রায়ে দলীয় প্রধানের পদও ছাড়তে হয় নওয়াজকে।