মিশনারিজ থেকে নবজাতক বিক্রির অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক

মাদার তেরেসার প্রতিষ্ঠা করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিশনারিজ অব চ্যারিটির বিরুদ্ধে নবজাতক বিক্রির অভিযোগ নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে। হিন্দুবাদী সংঘ পরিবার এই ইস্যুতে সরব হয়ে উঠেছে। পাল্টা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মতো নেতারা।

অভিযোগ উঠেছে, ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে মিশনারিজ অব চ্যারিটি পরিচালিত ‘নির্মল হৃদয়ে’-এর দুই সিস্টার এক নবজাতককে বিক্রি করেছেন। সেখানকার দুই সিস্টারকে ৫ জুলাই গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত করছে ঝাড়খণ্ড পুলিশ।

মিশনারিজ অব চ্যারিটির পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা তিন বছর হলো শিশুদের দত্তক দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সংস্থার মুখপাত্র সুনীতা কুমার বলেন, ‘খবরটি শুনে আমরা বিস্মিত। এটা মিশনারিজ অব চ্যারিটি, সন্ন্যাসিনী এবং সংস্থার প্রতিষ্ঠাতার নৈতিক অবস্থানের পরিপন্থী। রাঁচির দুই কর্মীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটিকে আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’

ক্যাথলিক বিশপ কনফারেন্স অব ইন্ডিয়ার মহাসচিব বিশপ থিয়োডর অবশ্য রাঁচির আর্চ বিশপ হাউসে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, শিশু বিক্রির ঘটনায় ‘নির্মল হৃদয়ে’-এর এক কর্মীর ভূমিকা থাকলেও থাকতে পারে। তবে ‘নির্মল হৃদয়ে’-এর কোনো সিস্টার শিশু বিক্রির সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে আরএসএসের দিল্লি শাখার প্রধান রাজীব টুলি দাবি করেছেন, মাদার তেরেসার ‘ভারতরত্ন’ সম্মান ফিরিয়ে নেওয়া হোক। কারণ ভারতীয় নাগরিকেরা চান না ‘ভারতরত্ন’ সম্মান কলঙ্কিত হোক। তাঁর ওই দাবিকে সমর্থন করেছেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।

সংঘ ও বিজেপির এমন ভূমিকার সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, বিজেপি কাউকে বাদ দিতে চায় না। নিন্দার ভাষা নেই। মিশনারিজ অব চ্যারিটি বলতে মাদার তেরেসা বা সিস্টার নির্মলার কথা মনে পড়ে। একটি ঘটনা ঘটেছে, তাতে একজন বা ব্যক্তিগতভাবে কেউ দোষী হতে পারে। তাই বলে একটি সংস্থাকে এভাবে জড়ানোটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিজেপি ও সংঘ পরিবারের সমালোচনা করে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, মিশনারিজ অব চ্যারিটির নামে এমন প্রচার, ভাবা যায় না। এসব সংঘ পরিবারের কাজ। বিশ্বাসযোগ্য কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্ত হোক। কিন্তু এভাবে হেনস্তা করার অধিকার কারও নেই। তবে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, আগেও এমন অভিযোগ ওদের বিরুদ্ধে উঠেছে। সরকারের উচিত নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা। তা না করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ভোটের জন্য অভিযুক্তকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

ঝাড়খণ্ডের রাজ্য চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপারসন রূপা বর্মা বলেছেন, ‘পুলিশ আটক ব্যক্তিদের জেরা করে চারটির মধ্যে তিনটি শিশুর হদিস পেয়েছে। বাকি এক শিশুর সন্ধান চলছে।’ পুরো ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে কমিটি।