নওয়াজ ও তাঁর মেয়ে জেলে যেতে পাকিস্তান ফিরেছেন?

দেশে ফেরার পথে আবুধাবিতে যাত্রাবিরতিতে নওয়াজ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম। ছবি: সংগৃহীত
দেশে ফেরার পথে আবুধাবিতে যাত্রাবিরতিতে নওয়াজ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন হবে ২৫ জুলাই। নির্বাচনের আগেই আলোচনায় দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম। দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে বাবা-মেয়ে এখন রাওয়ালপিন্ডির উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন আদিয়ালা জেলে। গতকাল শুক্রবার তাঁদের গ্রেপ্তারের পর বিশেষ বন্দীর মর্যাদা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, কারাগারে ‘বি’ শ্রেণির সুবিধা পাচ্ছেন নওয়াজ শরিফ ও মরিময়। পাকিস্তানে সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা বা জীবনযাপনের ধরন অনুযায়ী সরকারি আদেশে ‘বি’ শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।

দুর্নীতির দায়ে ৬ জুলাই নওয়াজ শরিফকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে ৭ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। আদালতের রায় ঘোষণার সময় নওয়াজ ও মরিয়ম লন্ডনে ছিলেন। গতকাল লন্ডন থেকে আবুধাবি হয়ে দেশে ফেরেন তাঁরা।

ডন নিউজের খবরে জানানো হয়, লাহোর বিমানবন্দরে নামার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে নওয়াজ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৫০ মিনিটে লাহোর বিমানবন্দরে নামেন তাঁরা। পরে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টাবিলিটি ব্যুরো নওয়াজ ও মরিয়মকে ‘অ্যাভেনফিল্ড’ সম্পদ মামলায় গ্রেপ্তার করে। প্রথমে তাঁদের শিহালা ট্রেনিং কলেজ রেস্ট হাউস’কে সাব-জেল ঘোষণা করে সেখানে রাখা হয়।

নওয়াজ ও তাঁর মেয়ের আগমন উপলক্ষে নওয়াজের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) লাহোরে ব্যাপক শোডাউনের আয়োজন করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। পাঞ্জাব পুলিশের মুখপাত্র নিয়াব হায়দার বলেন, পিএমএল-এন সমর্থকের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ২০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

তবে লন্ডন থেকে নওয়াজ ও তাঁর মেয়ের ফেরা নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যায়। আগে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি নেতারা বিদেশেই থেকে গেছেন। সেখানে আসন্ন গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েও কেন তাঁরা পাকিস্তানে ফিরে এলেন?

প্রতিবেদনে নওয়াজের ফিরে আসার কয়েকটি কারণের কথা বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, নওয়াজ ফিরে আসায় তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল আরও বেড়ে যাবে। তাঁদের সামলাতে কর্তৃপক্ষকে বেগ পেতে হবে। এ ছাড়া দলের কর্মসূচি চালাতে নওয়াজকে দেশে প্রয়োজন। তাঁকে ছাড়া দলের নির্বাচনী কর্মসূচি ঠিকমতো সফল হচ্ছিল না। এর বাইরে নওয়াজবিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লন্ডনে অবস্থানকারী বলে আওয়াজ তুলছিল। এসব প্রচার মোকাবিলায় দেশে ফেরাটাই তাঁর জন্য একমাত্র উপায় ছিল।

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নওয়াজের অবস্থান শক্ত অবস্থান রয়েছে—এটা প্রমাণেও তাঁর দেশে ফেরা প্রয়োজন ছিল। আরেকটি বিষয় হচ্ছে সহানুভূতি। ভোটের আগে ভোটারদের কাছ থেকে সহানুভূতি পেতে তাঁর দেশে ফেরাটা কাজে লাগতে পারে। নওয়াজ মনে করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যথেষ্ট দুর্বল। তিনি নিরপেক্ষ বিচারে অভিযোগগুলো খণ্ডাতে পারবেন।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, লন্ডনে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনাকে কেন্দ্র করে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনে পার্ক লেনের অ্যাভেনফিল্ড হাউসে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনে নওয়াজের পরিবার। নওয়াজ শরিফ বরাবরই দুর্নীতির এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ফ্ল্যাট কেনার অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন নওয়াজ।

এর আগে ২০১৫ সালে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসে নওয়াজের। ওই সময় জানা গিয়েছিল, বেশ কয়েকটি অফশোর কোম্পানির সঙ্গে নওয়াজ শরিফের ছেলেমেয়েদের যোগসূত্র রয়েছে। অভিযোগ আছে, এই কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করে বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে এবং বিদেশে নানা সম্পদ কেনা হয়েছে। আলোচনায় ছিল লন্ডনে কেনা বিলাসবহুল এই ফ্ল্যাটগুলোও।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে হয় নওয়াজ শরিফকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করেন। আদালত তাঁকে রাষ্ট্রীয় যেকোনো পদে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে আদালতের রায়ে দলীয় প্রধানের পদও ছাড়তে হয় নওয়াজকে।