নওয়াজের দলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

নওয়াজ ও মরিয়মকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের পথে তাঁদের দল পিএমএল-এনের কর্মীদের মিছিল। লাহোর, ১৩ জুলাই, ফাইল ছবি: রয়টার্স
নওয়াজ ও মরিয়মকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের পথে তাঁদের দল পিএমএল-এনের কর্মীদের মিছিল। লাহোর, ১৩ জুলাই, ফাইল ছবি: রয়টার্স

কারাগারে থাকা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত শুরু করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সাধারণ নির্বাচনের মাত্র ১০ দিন আগে গতকাল রোববার নতুন এ তদন্ত শুরু হলো।

এই অপরাধ ১৩ জুলাই নওয়াজ শরিফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়মের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে লাহোরে পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) আয়োজিত ব্যাপক শোডাউনের সঙ্গে জড়িত। সেদিন সব ধরনের গণজমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছিল।

দুটি পৃথক ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্টসে (এফআরআই) নওয়াজ শরিফের ভাই পিএমএল-এনের নেতা শাহবাজ শরিফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসিসহ বেশ কয়েকজন প্রধান নেতার নাম এসেছে।

গতকাল পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শওকত জাবেদ রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা পিএমএল-এনের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তবে নির্বাচনের আগে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না।’ তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তা ‘ভুল’ ছিল। পরে তা সংশোধন করা হয়েছে।

নওয়াজ ও মরিয়মকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের পথে তাঁদের দল পিএমএল-এনের কর্মীরা মিছিল বের করলে সেখান থেকে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। এর প্রতিবাদে স্লোগান করাচিতে বিক্ষোভ করেন দলের সমর্থকেরা। করাচি, পাকিস্তান ১৩ জুলাই। ফাইল ছবি: রয়টার্স
নওয়াজ ও মরিয়মকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের পথে তাঁদের দল পিএমএল-এনের কর্মীরা মিছিল বের করলে সেখান থেকে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। এর প্রতিবাদে স্লোগান করাচিতে বিক্ষোভ করেন দলের সমর্থকেরা। করাচি, পাকিস্তান ১৩ জুলাই। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সাধারণ নির্বাচনে এখনো যে পিএমএল-এনই সবার কাছে জনপ্রিয়, বিরোধীদের সেই বার্তা দিতে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে গত শুক্রবার লাহোর শহরে এক বিশাল মিছিল বের হয়। সেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।

জাতীয় কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন পিএমএল-এন এবং পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তৃতীয় স্থানে পাকিস্তান পিপলস পার্টি।

পিএমএলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও সিনেট সদস্য মুসাদ্দেক মালিক বলেন, এই এফআইআরগুলো হলো প্রার্থীদের ওপর একধরনের চাপ তৈরির কৌশল। হুমকি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আরেকটি প্রচেষ্টা। মালিক বলেন, পিএমএল-এনের মিছিল খুবই শান্তিপূর্ণ ছিল। আর নির্বাচনের আগে বড় ধরনের জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ খুবই অনুচিত।

লন্ডনে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনাসংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় ৬ জুলাই নওয়াজকে ১০ বছর ও মরিয়মকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন পাকিস্তানের অ্যাকাউন্টিবিলিটি কোর্ট। আর এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় সফদারকে। নওয়াজ ও মরিয়মকে বিপুল অঙ্কের অর্থ জরিমানাও করা হয়েছে। সফদার মরিয়মের স্বামী।

লন্ডন থেকে লাহোরের পথে আবুধাবিতে যাত্রাবিরতির সময় নওয়াজ শরিফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম। আবুধাবি, ১৩ জুলাই। ফাইল ছবি: রয়টার্স
লন্ডন থেকে লাহোরের পথে আবুধাবিতে যাত্রাবিরতির সময় নওয়াজ শরিফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম। আবুধাবি, ১৩ জুলাই। ফাইল ছবি: রয়টার্স

গত শুক্রবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার হন বাবা-মেয়ে। নওয়াজ শরিফ বরাবরই দুর্নীতির এ অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ফ্ল্যাট কেনার অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন নওয়াজ।

এর আগে ২০১৫ সালে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসে নওয়াজের। ওই সময় জানা যায়, বেশ কয়েকটি অফশোর কোম্পানির সঙ্গে নওয়াজ শরিফের ছেলেমেয়েদের যোগসূত্র রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করে বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে এবং বিদেশে নানা সম্পদ কেনা হয়েছে। আলোচনায় ছিল লন্ডনে কেনা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটগুলোও।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে হয় নওয়াজ শরিফকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করেন। আদালত তাঁকে রাষ্ট্রীয় যেকোনো পদে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে আদালতের রায়ে দলীয় প্রধানের পদও ছাড়তে হয় নওয়াজকে।