জাতীয় নির্বাচনের আগে লেবার পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে লড়াই

অস্ট্রেলিয়ার বিরোধী দল লেবার পার্টির দুই নেতা অ্যান্টনি অ্যালবানিজ ও বিল শর্টেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিরোধী দল লেবার পার্টির দুই নেতা অ্যান্টনি অ্যালবানিজ ও বিল শর্টেন।

অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু যাচ্ছে দেশটির ৪৬তম জাতীয় নির্বাচন। সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে কোন দল রাষ্ট্র পরিচালনায় আসবে, সে প্রশ্ন নিয়ে একদিকে চলছে তুমুল আলোচনা, অন্যদিকে জরিপ আর চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে কোন দল ক্ষমতায় যাবে, সে চিন্তা ছাপিয়ে দল পরিচালনা করবেন কে—এ নিয়ে প্রধান দুটি দলের ভেতরে তৈরি হয়েছে সংকট।

দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের দল লিবারেল পার্টি। দলের আরেক নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে রেষারেষি রয়েছে ম্যালকম টার্নবুলের। এবার সে পথেই হাঁটছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিও। যদিও লেবার পার্টি থেকে কেউ কেউ দাবি করছেন, এটি অপপ্রচার, আসলে লেবার পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে কোনো লড়াই নেই।

সম্প্রতি দেশটির জনপ্রিয় সংবাদপত্র দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড ‘অ্যালবানিজ, শর্টেন এবং নেতৃত্বের প্রশ্ন যা দূর হবে না কখনো’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে যে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে, এতে আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছে তারা।

২০১৩ সালে নেতৃত্ব নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে মুখোমুখি বিল শর্টেন ও অ্যান্টনি অ্যালবানিজ।
২০১৩ সালে নেতৃত্ব নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে মুখোমুখি বিল শর্টেন ও অ্যান্টনি অ্যালবানিজ।

অস্ট্রেলিয়ার বিরোধী দল লেবার পার্টির বর্তমান প্রধান বিল শর্টেন। এর পরেই রয়েছেন অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ২০১৩ ও ২০১৬ সালে শর্টেন এর বিপরীতে দলীয় নির্বাচনে জয় পাননি অ্যালবানিজ। তবে নেতৃত্বের যোগ্যতায় কোনো কমতি নেই অ্যালবানিজের। এ নিয়ে কখনো সমালোচনায়ও পড়েননি তিনি। দেশটির জনগণের কাছে জনপ্রিয়তাও রয়েছে তাঁর। সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সর্বদা অগ্রণী ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে। এমনকি সাংসদ হয়েও অনুদান সংগ্রহে একবার এক কনসার্টে সংগীত সম্পাদকের (ডিজে) কাজও করেন তিনি।

এক সাক্ষাৎকারে অ্যান্টনি অ্যালবানিজ বলেন, ‘অনেকে বলবে, রাজনীতিবিদরা অহংকার আচরণ দেখায়। তবে তা এমন নয়। আমরা সাধারণ মানুষ, তবে আমাদের মধ্যে কেউ হয়তো সেটা প্রকাশ করতে পারে, আবার কেউ হয়তো বা করতে পারে না।’ অস্ট্রেলিয়ার সরকারদলীয় সাংসদেরাও অ্যালবানিজকে ‘জনগণের পছন্দ’ বলে আখ্যায়িত করেন।

তবে লেবার পার্টির সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিল শর্টেন। দলের সদস্যদের সমর্থনেই বরাবর নেতৃত্বের আসনে ক্ষমতাসীন হয়ে আছেন শর্টেন। লেবার পার্টির সমর্থকদেরও কাছেও জনপ্রিয়তা রয়েছে শর্টেনের। গত মাসে এক নিউজপুলে লেবার ভোটারের ৩৯ শতাংশ সমর্থন দেন শর্টেনের পক্ষে, যেখানে অ্যালবানিজের পক্ষে আছেন মাত্র ২২ শতাংশ। তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনের পর থেকে শর্টেন বরাবরই জনগণের ভালোবাসা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। দলের ভেতর জনপ্রিয় হলেও ১৯৮৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত শর্টেনই সবচেয়ে অজনপ্রিয় বিরোধী দলের নেতা। সম্প্রতি প্রকাশিত এসেনশিয়াল পুলের ফলাফলে বলা হয়, গত এক মাসে শর্টেন সমর্থক কমে ৩৩ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।

অ্যালবানিজের জনপ্রিয়তা লেবার দলের আসন্ন নির্বাচনে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে। আর তাই দলটির নেতৃত্ব বদল হওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ২৮ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার উপনির্বাচনের ফলাফলের ওপর শর্টেনের নেতৃত্ব বহাল থাকা না থাকা অনেকটাই নির্ভর করছে।

২০১৩ সালে দলনেতা হিসেবে বিজয়ী হওয়ার পর বিল শর্টেন, সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ক্লোয়েইয়ের।
২০১৩ সালে দলনেতা হিসেবে বিজয়ী হওয়ার পর বিল শর্টেন, সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ক্লোয়েইয়ের।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিরোধী দল থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতায় আসার ইতিহাস লেবার পার্টির তিনবার। আর সেই তিনবারই গফ হুইটলাম, বব হাক ও কেভিন রাডের মতো জনপ্রিয় নেতারাই দলকে জাতীয় নির্বাচনে জয় এনে দিয়েছে। আর সেদিক থেকে শর্টেন জনগণকে উৎসাহী করতে পিছিয়ে রয়েছেন।

এ বিষয়ে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারবিষয়ক অধ্যাপক রড টিফেন বলেন, নির্বাচনের আগে নেতৃত্বে পরিবর্তন খুব বেশি কাজে দেয় না। অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের পর প্রায় ৭৩টি জাতীয় ও রাজ্যভিত্তিক নেতৃত্ব পরিবর্তনের ঘটনার ঘটে। তবে এর ফলে দল বেশির ভাগ সময়ে নির্বাচনে জয় না পেয়ে, পরাজিতই হয়েছে। কারণ, দল পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি একটি ব্যর্থতা বলে জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়ে।

লেবার পার্টি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনকার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড ও তাঁর পরের প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে রশি-টানাটানি হয়েছিল। যার মাশুল লেবার পার্টি দিচ্ছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে। তবে সে পথে আর দলটি হাঁটবে না বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদেরা। পাশাপাশি, শর্টেনও সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন বলে জানান লেবার পার্টির একজন সাবেক মুখপাত্র। তবে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভে অ্যালবানিজের জনপ্রিয়তাও দলের প্রয়োজন রয়েছে। তাই দলের নেতৃত্ব নিয়ে শঙ্কা থাকলেও লেবার পার্টিকে আসন্ন উপনির্বাচনের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যদিও লেবার পার্টির কেউ কেউ দাবি করছেন, লেবার পার্টির নেতৃত্বের সংকট শুধুই অপপ্রচার। দেশটির বর্তমান সরকারি দল লিবারেল পার্টি বিরোধী দলের মধ্যে নেতৃত্বে ফাটল ধরাতে এই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।