যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে রুশ নারী গ্রেপ্তার

মারিয়া বুতিনা। ছবি: সংগৃহীত
মারিয়া বুতিনা। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সরকার গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গত রোববার ২৯ বছর বয়সী মারিয়া বুতিনা নামের এক রুশ নারীকে গ্রেপ্তার করেছে।

মারিয়া বুতিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাশিয়ার সরকারি গোয়েন্দা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে তথ্য হাতিয়ে নিয়েছেন। এমনকি অস্ত্র রাখার অধিকারের দাবিতে জোরালো আওয়াজ তুলেছেন। বুতিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে গতকাল সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পর মারিয়া বুতিনার গ্রেপ্তারের খবর প্রচার করা হয়। বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ বরাবরের মতোই অস্বীকার করেন পুতিন। ট্রাম্পও সেটি মেনে নিয়ে বলেন, নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কোনো কারণ নেই।

মারিয়া বুতিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সঙ্গে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ বিষয়ে বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের চলমান তদন্তের কোনো যোগসূত্র নেই বলে জানিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

মারিয়া ক্রেমলিনের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশে কাজ করেন বলে অভিযোগ আছে। তবে মারিয়ার কৌঁসুলি রবার্ট ড্রিসকোল সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, তাঁর মক্কেল কোনো গোয়েন্দা নন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের শিক্ষার্থী, যিনি তাঁর অর্জিত ডিগ্রি কাজে লাগিয়ে ব্যবসায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট নীতি বা আইন লঙ্ঘন করেছেন, এমন কোনো ইঙ্গিতও নেই। অভিযোগ তদন্তের ব্যাপারে তাঁর মক্কেল কয়েক মাস ধরেই মার্কিন বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে সহায়তা করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মার্কিন বিচার বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মারিয়া ওয়াশিংটনে বসবাস করেন। গত রোববার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে কারাগারে রাখা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার তাঁর ব্যাপারে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনের সময় ডেমোক্রেটিক দলের কয়েকজনের নথিপত্র হ্যাকিংয়ের জন্য ১২ রুশকে মার্কিন বিচার বিভাগ অভিযুক্ত করার কয়েক দিনের মাথায় নতুন করে গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটল।

মারিয়া বুতিনা। ছবি: সংগৃহীত
মারিয়া বুতিনা। ছবি: সংগৃহীত

এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) বিশেষ এজেন্ট কেভিন হেলসন বলেন, মারিয়ার কাজ ছিল রাশিয়ার স্বার্থের জন্য উপযুক্ত মার্কিন রাজনীতিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে তাঁদের প্রভাবিত করা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, ফরেন এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট লঙ্ঘন করে মার্কিন সরকারের কাউকে কিছু না জানিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন মারিয়া। অস্ত্র বহনের অধিকারের দাবিতে সোচ্চার একটি গোষ্ঠীর সঙ্গেও তিনি হাত মেলান। মারিয়া বুতিনার বাড়ি সাইবেরিয়াতে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যান। তবে আড়ালে তিনি রাশিয়ার সরকারের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে মারিয়া বুতিনার রাইট টু বিয়ার আর্মস নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর তিনি অস্ত্র বহনের অধিকারের দাবিতে কাজ করা শক্তিশালী গোষ্ঠী ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের (এনআরএ) সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। তিনি রুশ সরকারের হয়ে কাজ করার কথা অস্বীকার করেছেন।

ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মারিয়া রাশিয়ার ব্যাংকার ও সাবেক আইনপ্রণেতা আলেকজান্দ্রার তরসিনের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। গত এপ্রিলে মার্কিন প্রশাসন তরসিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তরসিন এনআরএর আজীবন সদস্য। ২০১৪ সাল থেকে মারিয়া এনআরএর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুরু করেন। এ ছাড়া মারিয়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারের কাজে যুক্ত ছিলেন।