আমি কথাটা ভুল বলেছিলাম: ট্রাম্প

হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র, ১৭ জুলাই। ছবি: রয়টার্স
হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র, ১৭ জুলাই। ছবি: রয়টার্স

তোপের মুখে কথার সুর বদলালেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হেলসিঙ্কিতে মার্কিন গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত সমর্থনের বদলে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সমর্থন করায় ঘরে-বাইরে সমালোচিত হওয়ার পর ট্রাম্প জানালেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করে—এই কথা তিনি মানেন। পুতিনকে রেহাই দিয়ে যে বক্তব্য তিনি সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছিলেন, তাতে সঠিক শব্দ ব্যবহৃত হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে নিজের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক লিখিত বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, রুশ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা দপ্তরগুলোর যে সিদ্ধান্ত, তা তিনি সঠিক বলে মনে করেন। তবে শুধু রাশিয়া নয়, এই কাজে আরও অনেকে যুক্ত থাকতে পারে। তিনি পুনরায় দাবি করেন, তবে এই নির্বাচনে তাঁর ক্যাম্পেইনের সঙ্গে রাশিয়ার কোনো গোপন আঁতাত ছিল না, কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না। ট্রাম্প বলেন, হেলসিঙ্কিতে তিনি রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেনি বলে যে কথা বলেছিলেন, তাতে শব্দ ব্যবহারে ভুল ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে বলতে চেয়েছিলাম, এই কাজ রাশিয়াও করতে পারে। আমার কথা থেকে “না” বাদ দিন, তাহলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।’

ট্রাম্পের এই ব্যাখ্যা খুব বেশি লোক যে বিশ্বাসযোগ্য বলে ভাবছে, তা মনে হয় না। একাধিক ভাষ্যকার বলেন, কথাটা ভুল হলে সে কথা স্বীকার করতে দেড় দিন লাগার কথা নয়। তা ছাড়া একবার নয়, একই সংবাদ সম্মেলনে তিনি একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থনের বদলে রাশিয়ার পক্ষাবলম্বন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনের অব্যবহিত পরে তিনি ফক্স নিউজের সঙ্গে দুটি সাক্ষাৎকার দেন, তাতে সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন।

সিনেটে ডেমোক্রেটিক নেতা সিনেটর চাক শুমার এক টুইটে ট্রাম্পের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ট্রাম্প যা বলেছেন, এখন তা বদলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কাজটা করতে ২৪ ঘণ্টা দেরি হয়ে গেছে, কথাটা যেখানে বলার কথা ছিল, সেখানে না বলে এখন ভিন্ন জায়গায় বলছেন।

যে কাগজ দেখে ট্রাম্প তাঁর কথার ব্যাখ্যা করেন, তাতেও এক নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক ফটোসাংবাদিক সে কাগজের ক্লোজআপ ছবি তুলতে সক্ষম হন। তাতে দেখা যায়, ট্রাম্প নিজের হাতে যোগ করেছেন, ‘কোনো আঁতাত ছিল না।’ কাগজের অন্যত্র ট্রাম্প একটি বাক্য কেটে দেন, যেখানে লেখা ছিল, গত নির্বাচনে যারা হস্তক্ষেপের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার করা হবে।

ট্রাম্প নিজ বক্তব্যের নতুন ব্যাখ্যা দিলেও তাঁর দলের ভেতরেও এ নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল জানিয়েছেন, রুশ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সমর্থন করে কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। এই প্রশ্নে তাঁর দলের সদস্যদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের সরাসরি সমালোচনা না করে ম্যাককনেল রুশ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দাদের সিদ্ধান্ত সঠিক, সে কথা উল্লেখ করে বলেন, কংগ্রেসে এমন অনেকে আছেন, যাঁরা মনে করেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিল। ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যাতে একই রকম কোনো ঘটনা না ঘটে, তার বিরুদ্ধে তিনি রাশিয়াকে সাবধান করে দেন।

এদিকে ট্রাম্পের বিতর্কিত বক্তব্যের পর তাঁর নিকট উপদেষ্টাদের ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ছে। জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান ড্যান কোটস গত সোমবারই এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন। একাধিক সূত্র থেকে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের অনুমোদন ছাড়াই তিনি এই বিবৃতি প্রদান করেন। ভাবা হচ্ছে, হেলসিঙ্কি বিপর্যয়ের পর ড্যান কোটসই হবেন প্রথম পদত্যাগকারী ট্রাম্প কর্মকর্তা।

মস্কোতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন হান্টসম্যানেরও পদত্যাগের সম্ভাবনা রয়েছে। ইউটার এই সাবেক গভর্নরকে তাঁর ভাইয়ের মালিকানাধীন সল্ট লেক ট্রিবিউন পত্রিকা অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে লিখেছে, ‘রাষ্ট্রদূত হান্টসম্যান, ট্রাম্প স্বাধীন কোনো প্রেসিডেন্ট নন, একজনের দাবার গুটি মাত্র। আপনি সেই দাবার গুটির হয়ে কাজ করছেন। এখন সময় এসেছে নিজ ঘরে ফিরে আসার।’ উল্লেখ্য, ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের আগে হান্টসম্যান জোর দিয়ে বলেছিলেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য পুতিনকে সরাসরি প্রশ্ন করতে হবে।