দুই বছর ধরে জারি থাকা জরুরি অবস্থা তুলে নিয়েছে তুরস্ক

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে দুই বছর ধরে জারি থাকা জরুরি অবস্থা তুলে নিয়েছে দেশটির সরকার। গতকাল বুধবার জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

বিবিসি জানিয়েছে, জরুরি অবস্থার সময় লাখো মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন।

২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্ক সেনাবাহিনীর একটি অংশ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। তুরস্কের জনগণ তা ব্যর্থ করে দেয়। এরপর জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

ওই জরুরি অবস্থা জারি করার পর তার মেয়াদ সাতবার বৃদ্ধি করা হয়। জরুরি অবস্থার কারণে নতুন আইন পাস এবং নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা স্থগিত করার ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এরদোয়ান নির্বাচনে জেতার কয়েক সপ্তাহ পরেই জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার ঘোষণা এল। নির্বাচনের আগে এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বীরা নির্বাচনে জিতলে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তুরস্কের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো অনেক দিন ধরেই জরুরি অবস্থা তুলে নিতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নও তুরস্কে জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকায় সেটির সমালোচনা করে বলেছে, এর মাধ্যমে বিভিন্ন নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, নির্বাচনী প্রচারণার সময় দুই বছর ধরে চলা জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এরদোয়ান। ২৪ জুন তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

বেসরকারি ও সরকারি সূত্র অনুযায়ী, জরুরি অবস্থা জারির পর দেশটিতে ১ লাখ ৭ হাজার মানুষ সরকারি চাকরি হারিয়েছেন এবং ৫০ হাজার লোক জেলে গেছেন, যাঁরা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন।

সামরিক বাহিনী, বিচার বিভাগ, পুলিশ, গণমাধ্যম, শিক্ষা খাতসহ অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত বা যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেনের সমর্থক সন্দেহে হাজার হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যাপক শুদ্ধি অভিযানের ধারাবাহিকতায় জরুরি অবস্থা জারি করে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সরকার।

অভ্যুত্থানচেষ্টায় গুলেন ও তাঁর অনুসারীদের দায়ী করে তুরস্ক। তবে তাঁরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

২০১৬ সালের ওই অভ্যুত্থানচেষ্টায় প্রায় ২৫০ জন নিহত হন।

এর আগে তুরস্কে সর্বশেষ জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন প্রদেশে। কুর্দি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করাই ছিল এর লক্ষ্য। ২০০২ সালে সেই জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়।