ডন পত্রিকা-প্রধানের সঙ্গে বিবিসির সাক্ষাৎকার উসকে দিল বিতর্ক

বিবিসির ‘হার্ডটক’ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ডনের প্রধান হামিদ হারুন। ছবি: বিবিসির ভিডিও থেকে নেওয়া।
বিবিসির ‘হার্ডটক’ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ডনের প্রধান হামিদ হারুন। ছবি: বিবিসির ভিডিও থেকে নেওয়া।

জাতীয় নির্বাচনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে বিবিসির সঙ্গে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ডন-প্রধানের সাক্ষাৎকার বিতর্কের ঝড় তুলেছে। সাক্ষাৎকারে ডন মিডিয়া গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদ হারুন রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরার পেছনে সরাসরি সেনাবাহিনীকে দায়ী করেন তিনি।

হামিদ হারুন মনে করেন, গণমাধ্যমের অধিকার হরণ করায় সবচেয়ে লাভবান হচ্ছেন পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খান।

তবে ‘হার্ডটক’ অনুষ্ঠানের ওই সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষাপটে অভিযোগ উঠেছে, হামিদ হারুন ও তাঁর পত্রিকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করছে এবং ইমরান খানের বিপক্ষে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ তোলার সমালোচনা করেন অনেক সাংবাদিক ও পাঠক।

২৫ জুলাই পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নির্বাচনকে সামনে রেখে পত্রিকাটি ‘সেন্সরশিপের’ মুখোমুখি হচ্ছে। এমনকি ভয় দেখানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে। নির্বাচনের নেতৃত্ব নিয়ে সহিংসতা এবং রাজনৈতিক বিতর্কের ঝড় উঠেছে পাকিস্তানে।

গত সোমবার প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারে হামিদ হারুন অভিযোগ করেন, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী প্রেসের স্বাধীনতার ওপর ‘অভূতপূর্ব আক্রমণ’ করছে। অল পাকিস্তান নিউজ পেপার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট হামিদ হারুন আরও মনে করেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। আগে যতটা খারাপ ছিল, এখনো ততটাই খারাপ।

বিবিসির ‘হার্ডটক’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন সাংবাদিক স্টিফেন সাকুর। হামিদ হারুন তাঁকে বলেন, সামরিক বাহিনী তার পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অবশ্য এমন অভিযোগ অনেক আগে থেকেই বিরোধী দল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা করে আসছিলেন। হামিদ হারুনের সাক্ষাৎকার যেন সেই বিতর্ককে উসকে দিল। তবে নির্বাচনে প্রভাব ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সেনাবাহিনী।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে আসছে দেশটির সেনাবাহিনী। দেশটিতে একবার সামরিক শাসন আসে তো একবার বেসামরিক শাসন।

হামিদ হারুন বলেন, লাইনের দ্বিতীয় স্তরের নেতাদের পক্ষে প্রচেষ্টা চলছে বলে মনে হচ্ছে। সমঝোতা করে নেতৃত্ব তৈরি হতে যাচ্ছে, যেখানে মূলত সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণেই থাকবে শাসন পরিচালনার ভার। এ সময় উপস্থাপক স্টিফেন সাকুর জানতে চান, এই দ্বিতীয় স্তরের নেতা বলতে ইমরান খানকে বোঝানো হচ্ছে কি না। জবাবে হারুন বলেন, বিভিন্ন সময়ে নিরাপত্তা দেওয়ায় ইমরানের জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে চেষ্টা করছি দেশ যেন সাধারণ গণতান্ত্রিক উপায়ে চলে।’

অনুষ্ঠানে স্টিফেন সাকুর হারুনকে বলেন, ডন পত্রিকাকে অনেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পক্ষে বলে মনে করে? এ বিষয়ে তিনি কী মনে করেন? জবাবে হারুন বলেন, এটি ডনের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত অপপ্রচার।

লন্ডনে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনাসংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় ৬ জুলাই নওয়াজকে ১০ বছর ও মরিয়মকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন পাকিস্তানের অ্যাকাউন্টিবিলিটি কোর্ট। আর এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় সফদারকে। নওয়াজ ও মরিয়মকে বিপুল অঙ্কের অর্থ জরিমানাও করা হয়েছে। সফদার মরিয়মের স্বামী। এরপর গত শুক্রবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার হন বাবা-মেয়ে। নওয়াজ শরিফ বরাবরই দুর্নীতির এ অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ফ্ল্যাট কেনার অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন নওয়াজ।

এদিকে হামিদ হারুনের সাক্ষাৎকারের পর বেশ খেপেছেন ইমরান খান। এক টুইটার বার্তায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। ওই টুইটে তিনি লেখেন, সাক্ষাৎকারটিতে তাঁর দলের বিরুদ্ধে ‘ডনের নির্মম পক্ষপাতিত্ব’ উন্মুক্ত করা হয়েছে।

অনেকে বলছেন, সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য হারুনের দৃঢ় প্রমাণ থাকা উচিত। হতাশা প্রকাশ করে একজন বলেন, ‘সেই ছোটবেলা থেকে ডনের ভক্ত আমি। কিন্তু হামিদ হারুনের কথা যেন পুরোপুরি নওয়াজ শরিফের কথা। এই বক্তব্যে কোনো প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানের নির্বাচনকে বিতর্কিত করা হয়েছে।’

তবে হারুনের পক্ষেও কথা বলেছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও পাঠক। তাঁদের দাবি, হারুনকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলা হয়েছে। কারণ, ওই সাক্ষাৎকারে হারুন বলেন, শহর এলাকায় অনেক জায়গায় ডনের বিতরণ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অনেক সাংবাদিকেরই লেখার স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে।