সম্মতিহীন যৌনতাকে স্পেন অপরাধ গণ্য করতে যাচ্ছে

যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে স্পেন খুব দ্রুতই ‘হ্যাঁ মানে হ্যাঁ’ নীতি গ্রহণ করা দেশগুলোর তালিকায় ঢুকতে যাচ্ছে। খবর সিএনএনের।

স্পেনের উপপ্রধানমন্ত্রী কারমেন কালভো এ ব্যাপারে তাঁর উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে এ ধারণাকে সাধারণত ‘হ্যাঁ-সূচক’ ধারণা বলা হয়। এখানে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের পূর্ণাঙ্গ সম্মতির কথা বলা হয়েছে। এ সম্মতি হতে পারে মৌখিক অথবা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে।

২০১৬ সালে স্পেনের জাতীয় উৎসব ষাঁড়দৌড়ের সময় এক কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়া পাঁচ ব্যক্তির মুক্তিতে গণরোষের পরিপ্রেক্ষিতে উপপ্রধানমন্ত্রী কালভো এ ঘোষণা দেন।

সরকারের আরও বেশি নারীবাদী নীতি গ্রহণের অংশ হিসেবে ১০ জুলাই এক বিবৃতিতে কালভো বলেন, ‘এটি একটি শুভ ও নিখুঁত ব্যাপার, যেখানে কোনো নারী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে “হ্যাঁ” না বলে, তাহলে সবকিছুকে “না” ধরে নিতে হবে। এভাবে নারীর স্বশাসন সংরক্ষিত হবে। সেই সঙ্গে তাঁর স্বাধীনতা, ব্যক্তিত্ব ও নারী পরিচয়টিও সংরক্ষিত হবে।’

কালভো আরও বলেন, সুইডেন ও জার্মানি স্পষ্ট সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করে। স্পেনেও এ প্রস্তাব আইন হিসেবে গৃহীত হবে। প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্মতিসূচক আইনটি ‘না মানে না’ আইনের চেয়ে বেশি কার্যকর, যেখানে অসম্মতি প্রমাণ করতে ভুক্তভোগী এবং তাদের কৌঁসুলিদের বেশ বেগ পেতে হয়। সমালোচকেরা বলছেন, প্রস্তাবটি কার্যকর করা কষ্টসাধ্য হবে। নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়াসহ আমেরিকার কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে সম্মতিসূচক আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

সুইডেনের সরকার স্পষ্ট সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণের আওতায় এনেছে। ১ জুলাই এ আইন হওয়ার আগে সেখানকার কৌঁসুলিদের এটা প্রমাণ করতে হতো, ভুক্তভোগী সহিংসতার শিকার হয়েছে বা তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।

জার্মানিতে দুই বছর আগে নববর্ষ উদ্‌যাপনকালে শতাধিক নারী হেনস্তার শিকার হলে সেখানে ‘না মানে না’ আন্দোলন শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সম্মতিসূচক আইনটি পাস করা হয়। সেখানকার আইনে জাপটে ধরাকেও তখন থেকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। এর আগে জার্মানিতে ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিকে এটা প্রমাণ করতে হতো, ধর্ষণের সময় তিনি অপরাধীকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। জাপটে ধরাকে এত দিন অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো না।

স্পেনে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে এক কিশোরী পাঁচ ব্যক্তির দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয়। কিন্তু ধর্ষণ নয়, তারা শাস্তি পায় অপেক্ষাকৃত লঘু অপরাধের দায়ে। এ বছরের এপ্রিলে জনতা এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। এরপর স্পেনের সরকার যৌন অপরাধ-সংশ্লিষ্ট আইন পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দেয়। স্পেনের আইনে যেসব যৌন নিপীড়নে সহিংসতা কিংবা হুমকি অনুপস্থিত, তার সঙ্গে ধর্ষণের পার্থক্য রয়েছে।

কিশোরী ধর্ষণের ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নয় বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে এর বিরুদ্ধে আপিল করে গত জুন মাসে তারা জামিনে মুক্তি পায়। এ ঘটনায় স্পেনজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।