মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থায় অনিশ্চয়তা, চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

ভারতে কংগ্রেস দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেছিলেন, সরকার ফেলার সংখ্যা তাঁদের আছে। সম্ভবত তাঁকে পরিহাস করেই বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের শিব সেনা জানিয়ে দিল, সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের বিরোধিতা তারা করবে। সরকারের পক্ষেই থাকবে।

শিব সেনার এই ইঙ্গিতের মধ্যেই তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে এবং ওডিশার বিজু জনতা দলকে (বিজেডি) নিয়ে চলছে তুমুল জল্পনা। যা ইঙ্গিত, তাতে প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে এই দুই দলের অংশ না নেওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।

লোকসভায় কাল শুক্রবার মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আনা প্রথম অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা। কিন্তু তার ঠিক এক দিন আগে বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের মনোবলে ঘা দিল সিবিআই। টু-জি তরঙ্গ কেলেঙ্কারির সময় জানাজানি হওয়া এয়ারসেল-ম্যাক্সিস দুর্নীতি মামলায় কংগ্রেস নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে সিবিআই অভিযোগপত্র জমা দিল। অতিরিক্ত এই অভিযোগপত্রে চিদাম্বরম ছাড়াও নাম রয়েছে ১৬ জন বর্তমান ও সাবেক আমলার। ৩১ জুলাই সিবিআইয়ের বিশেষ বিচারক ও পি সাইনি তাঁর এজলাসে এ অভিযোগপত্র বিবেচনা করে দেখবেন।
শাসক দল বিজেপি অবশ্য এ অভিযোগপত্র নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়। দলের নেতাদের কাছে এটা ‘তদন্তপ্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগীয় বিষয়’। তবে অনাস্থা প্রস্তাবকে হারিয়ে জয় নিয়ে তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিত। সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার আজ বৃহস্পতিবারও বলেছেন, সোনিয়া গান্ধীর পাটিগণিত যে ভুল, তিনি যে অঙ্কে কাঁচা, তা ভোট শেষে বোঝা যাবে। এনডিএ জোট অটুট রয়েছে।
জোট অটুট থাকার এ কথাটা মন্ত্রী অনন্ত বলতে পারলেন অনেক দিন ধরে ক্ষুব্ধ শরিক শিব সেনার মন বদলের কারণে। অনাস্থা প্রস্তাব লোকসভায় গৃহীত হওয়ার পর বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ফোন করেন শিব সেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেকে। দুজনের বাক্যালাপের পর শিব সেনার এক নেতা বৃহস্পতিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, তাঁরা অনাস্থার বিরুদ্ধেই ভোট দেবেন। ঠিক সময়ে এই দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে।
লোকসভায় শিব সেনার সদস্যসংখ্যা ১৮। এই সংখ্যা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কথা শুরু করেন এআইএডিএমকে ও বিজেডির সঙ্গে। রাজ্য রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় এআইএডিএমকে এমনিতেই বিজেপির দিকে ঝুঁকে। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট না দিলেও তারা ভোটদানে বিরত থাকতে পারে। একই সম্ভাবনা বিজেডিরও। বিজেপি কথা চালাচ্ছে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির (টিআরএস) সঙ্গেও। ভোটের আগে এই দলগুলো লোকসভা কক্ষত্যাগ করলে এনডিএর পক্ষে জয়ী হওয়া একেবারেই কঠিন হবে না। কারণ, লোকসভার এই মুহূর্তের শক্তি ৫৩৩। দশটি আসন খালি থাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৬৬ জনের সমর্থন। বিজেপির নিজের শক্তিই তার চেয়ে বেশি। কংগ্রেসসহ যারা অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন করবে বলে মনে করা হচ্ছে, তাদের সম্মিলিত সংখ্যা ১৭২। এআইএডিএমকে, বিজেডি ও টিআরএসের সদস্যসংখ্যা ৬৮। কাজেই দুশ্চিন্তার বিন্দুমাত্র কোনো ছাপ বিজেপির কপালে না থাকারই কথা। তাদের একটাই লক্ষ্য, দুই জোটে না–থাকা দলগুলো যেন বিরোধী জোটের দিকে না ঝোঁকে।
অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় বিরোধীরা সংসদে সরকারকে সমালোচনা করার সুযোগটা পেয়ে গেল। কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধী দলগুলো এই সুযোগে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে শাসকগোষ্ঠীকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চালাবে। বিরোধীরা মুখর হবে নোট বাতিল, জিএসটি, কালোটাকা দেশে না ফেরানো, ঋণখেলাপ, বেকারত্ব, কৃষক বিক্ষোভ, গণপিটুনি, জাতপাত ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয়ে। এরই সঙ্গে কংগ্রেস তুলে ধরবে রাজনৈতিক বিরোধিতায় সিবিআই বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ‘অপব্যবহারের’ প্রসঙ্গ।

চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র হতে চলেছে বিরোধীদের আর এক হাতিয়ার। সিবিআইয়ের অভিযোগ, ২০০৬ সালে অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন টেলিকম সংস্থা এয়ারসেলে মরিশাসের কোম্পানি ম্যাক্সিস, যাতে বিদেশি লগ্নি করতে পারে, সে জন্য চিদাম্বরম প্রভাব খাটিয়েছিলেন। এই প্রভাব খাটানোর পেছনে তাঁর ছেলে কার্তির যোগসাজশ ছিল বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ। কার্তিকে আগেই সিবিআই এই মামলায় গ্রেপ্তার করেছে।