কে আসছেন ক্ষমতায়?

>
  • পাকিস্তানে নির্বাচন আসন্ন 
  • সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ নির্বাচনের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে।

পাকিস্তান এখন ক্ষমতার পালাবদলের সন্ধিক্ষণে। ২৫ জুলাই জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কেউ মসনদে বসবেন। দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ায় এবং রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এখন ভোটের বাইরে। তাই পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসছেন নতুন কেউ, সেটা নিশ্চিত।

নির্বাচন সামনে রেখে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা, গ্রেপ্তার, সেন্সরশিপ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের অভিযোগে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। নির্বাচনী প্রচারণা এখন একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে। ক্যারিশমাটিক নেতা সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফ নির্বাচনের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ২৯ বছর বয়সী ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিও জনসমর্থন পাচ্ছেন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হওয়ায়।

জনমত জরিপ বলেছে, নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ফলাফল এমন হতে পারে যে জোট সরকার গঠনের প্রয়োজন হবে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্যে বিলাওয়াল অন্যতম ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন।

তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান ১৯৮০-এর দশকে ক্রিকেট শাসন করেছেন বল-ব্যাট হাতে। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতে। খেলাপাগল ৬৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তাঁর কিংবদন্তির মর্যাদা নিয়ে রাজনীতিক বনে যান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট মোশাররফ জাইদি বলেন, তিনি (ইমরান) মধ্য-ডানপন্থী দল পিটিআইয়ের নেতা। বৃহৎ সংখ্যক ভোটারের কাছে তিনি নিজেকে কট্টর ও ধার্মিক লোক হিসেবে তুলে ধরেছেন। প্রাদেশিক পর্যায়ের নির্বাচনে বেশ সফলতাও পেয়েছে পিটিআই। ইমরান মধ্যপন্থা নীতিও বজায় রেখেছেন।

সাংবাদিক ও যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি বলেন, দেশটি দুই শিবিবে বিভক্ত। এক পক্ষের মত, দেশ চালাতে সেনাবাহিনী সঠিক পথেই আছে। অপর পক্ষ মনে করে, সঠিক পথে নেই। প্রচুর সাবেক (সেনাসদস্য) ইমরানের সঙ্গে র‍্যালি করেছেন। দলটি সেনা শাসন থেকে সুবিধা পেয়েছে।

রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফের প্রতি সেনাবাহিনীর বিষোদ্‌গার থেকেও ব্যাপক সুবিধা পেয়েছে ইমরান খান। নওয়াজের পতনের বিষয়টিও পিটিআইকে সাহায্য করেছে। দুর্নীতি দমন নিয়ে শক্ত অবস্থানে থাকার বিষয়ে কর্মসূচিও করেছেন ইমরান। জাইদি বলেন, এই বিষয়টি তাঁর রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে দারুণ কাজে দিয়েছে। তবে দুর্নীতির ক্ষেত্রে তাঁকে একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে দেখা গেলেও তাঁর সহযোগী ও রাজনৈতিক মিত্রদের দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

হাক্কানি বলেন, ‘ইমরান কখনোই সরকারে ছিলেন না। তাই কীভাবে আমরা তাঁকে পরিচ্ছন্ন বলি? ক্ষমতায় গেলে বিষয়টি বোঝা যাবে।’

নির্বাচনে ইমরানের বড় প্রতিপক্ষ পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ। আদালতের নির্দেশে ভাই নওয়াজ শরিফ দল চালানোয় অযোগ্য হওয়ার পর পিএমএল-এনের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে বর্তায়।

হাক্কানি বলেন, ‘নওয়াজকে নিয়ে ভোটাররা বিভক্ত। কেউ মনে করেন পুরো পরিবার (শরিফ পরিবার) দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই তাঁদের শাস্তি হওয়া উচিত। তবে অন্য পক্ষ বলেন, আমরা এটা মনে করি না। তাঁরা আমাদের দেশের মানুষ।’ 

জাইদি বলেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শাহবাজ। এই প্রদেশ নির্বাচনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ (আসনসংখ্যা বেশি থাকায়)। একজন প্রশাসক হিসেবে শাহবাজের যোগ্যতা ও সফলতা তাঁকে সুবিধা দিতে পারে। 

হাক্কানি বলেন, প্রকৃতপক্ষে শাহবাজ ইমরান খানের চেয়ে ভিন্ন। রাজনীতির চেয়ে অধিক দক্ষ প্রশাসক তিনি। তবে প্রতিপক্ষের চেয়ে ক্যারিশমাটিক দক্ষতার অভাব রয়েছে তাঁর।

জাইদি বলেন, নওয়াজ ও তাঁর মেয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেমন অভিযোগ রয়েছে, সেটা থেকে এখন পর্যন্ত মুক্ত শাহবাজ। তবে জাতীয় নেতা হিসেবে হাজির হলে এ রকম অভিযোগ তাঁর ওপরও হামলে পড়বে।

সেনাবাহিনী পাচ্ছে বিচারিক ক্ষমতা

ইসলামাবাদ থেকে রয়টার্স বলেছে, নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওই ক্ষমতা প্রদান নিয়ে রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উদ্বেগ থাকার পরও বিরল এই সিদ্ধান্ত নিল কমিশন।

নির্বাচনের আইনভঙ্গকারী যে কাউকে আটকের পর সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলেই বিচার করে জেল দিতে পারবেন, এমন নির্দেশ জারি করে চলতি মাসে নোটিশ পাঠায় নির্বাচন কমিশন।