বিজেপিবিরোধী মহাসমাবেশের ঘোষণা মমতার

কলকাতার ধর্মতলায় সমাবেশে বক্তব্য দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাই, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতার ধর্মতলায় সমাবেশে বক্তব্য দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাই, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আগামী দিনে ভারতবর্ষকে পথ দেখাবে বাংলা। আর সেই লক্ষ্যে আগামী ১৯ জানুয়ারি বিজেপি-বিরোধী মহাসমাবেশ থেকে ফেডারেল ফ্রন্টকে সংগঠিত করে দিল্লি দখলের ডাক দেওয়া হবে।

কলকাতার ধর্মতলায় আজ শনিবার আয়োজিত সমাবেশ এসব কথা বলেন মমতা।

১৯৯২ সালের ২১ জুলাই তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতার নেতৃত্বে রাজ্য সচিবালয় মহাকরণ অভিযানকালীন পুলিশের গুলিতে ১৩ জন নিহত হয়। এই দিনকে স্মরণ করে প্রতিবছর ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেস শহীদ দিবস পালন করে আসছে রাজ্যজুড়ে। এবার এই শহীদ দিবস ২৫ বছর পার করেছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের আয়োজিত এই সমাবেশে হাজার-হাজার মানুষ যোগ দেয়। ২১ জুলাই, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তৃণমূল কংগ্রেসের আয়োজিত এই সমাবেশে হাজার-হাজার মানুষ যোগ দেয়। ২১ জুলাই, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

আজ এই বৃষ্টিভেজা সমাবেশে মমতা বলেন, আগামী দিনে গোটা ভারতবর্ষকে পথ দেখাবে বাংলা। ‘সাম্প্রদায়িকতা ঠেকাও, বিজেপি হটাও’ লক্ষ্য নিয়ে ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজন করা হচ্ছে মহাসমাবেশের। এখানে উপস্থিত থাকবেন বিজেপিবিরোধী দলের নেতারা। সেখান থেকেই দিল্লি সরকার দখলের ডাক দেওয়া হবে তাঁর গড়া ফেডারেল ফ্রন্টকে সংগঠিত করে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে আর জয়ের মুখ দেখবে না বিজেপি। তাই ’১৯-এর ১৯ জানুয়ারি ডাক দেওয়া হবে দিল্লির বিজেপি সরকার হটানোর।

মমতা বলেন, বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার মুখোশ খুলে গেছে। দেশ শাসনে অযোগ্য হয়েছে তারা। সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই এ দেশে। তাই আগামী বছর বিজেপিবিরোধী সরকার আসছে কেন্দ্রে। তিনি আরও বলেন, বিজেপি গত বছর ২৮২টি আসন পেলেও আগামী বছর ১০০ আসনও পাবে না। তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাটে বিজেপির আসন হবে শূন্য হবে। উত্তর প্রদেশে অখিলেশ যাদব, মায়াবতীরা এক হলে বিজেপির ধরে রাখা ৭২টি আসনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ আসন পাবে না তারা। রাজস্থানে মিলবে মাত্র ৫টি আসন। বিহারে এবার আসন কেড়ে নেবেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা লালুপ্রসাদ যাদব। ওডিশায় আসন কাড়বেন বিজু জনতা দলের নেতা নবীন পট্টনায়ক। আর পাঞ্জাবে কংগ্রেসের অমরেন্দ্র সিং।

তৃণমূলের এই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন বিনোদন জগতের অনেক তারকাও। ২১ জুলাই, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তৃণমূলের এই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন বিনোদন জগতের অনেক তারকাও। ২১ জুলাই, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

মমতা বলেন, ‘আমরা চেয়ারকে কেয়ার করি না। কেয়ার করি দেশকে, দেশের মানুষকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবার আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে বিজেপির বিরুদ্ধে। বিজেপি ভাঙা শুরু হয়েছে। আজ এই সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকার নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দিয়েছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে। নাম বদল করছে রেলস্টেশনের। পরিবর্তন আনছে পাঠ্যক্রমে। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।’

মমতা বলেন, যাঁদের হাতে দাঙ্গার রক্ত লেগে আছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আজ এনকাউন্টারের মাধ্যমে উত্তর প্রদেশে মেরে ফেলা হচ্ছে মানুষকে। প্রতিবছর ১২ থেকে ১৩ হাজার কৃষক ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করেন। এর বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’ তিনি আসামে বাঙালি খেদাও আন্দোলনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসামের বাঙালিদের পাশে আছেন বলে আশ্বাস দেন।

মমতা ঘোষণা দেন আগামী ১ থেকে ১৫ আগস্ট দেশজুড়ে পালিত হবে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী কর্মসূচি।

সমাবেশের সময় নামে বৃষ্টি। এই প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে মমতার বক্তব্য শোনেন সমাবেশে যোগ দেওয়া জনতা। ২১ জুলাই, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
সমাবেশের সময় নামে বৃষ্টি। এই প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে মমতার বক্তব্য শোনেন সমাবেশে যোগ দেওয়া জনতা। ২১ জুলাই, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এদিন এই শহীদ দিবসের মঞ্চে কংগ্রেসের ৫ বিধায়ক তৃণমূলে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন। এই শহীদ দিবসের মঞ্চে আরও ভাষণ দেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম প্রমুখ। তাঁরাও দেশব্যাপী বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও আন্দোলন জোরদার করার দাবি তোলেন। বলেন, ‘দুই হাজার উনিশ, বিজেপি ফিনিশ।’ বক্তারা ভবিষ্যতে একজন বাঙালি প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান বলে দাবি তোলেন। তাঁরা আরও দাবি তোলেন, আগামী ৩০ বছরেও এখানে থাকবে মমতার দল।