নির্বাচন ঘিরে পাকিস্তানে সরব উগ্রপন্থীরা

হাফিজ সাঈদ
হাফিজ সাঈদ

পাকিস্তানের উগ্রপন্থী নেতা হাফিজ সাঈদ যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহভাজন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একজন। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলায় অভিযুক্ত তিনি। নিজ দেশেই তাঁর দাতব্য প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ হলেও ধর্মভিত্তিক নতুন রাজনৈতিক দল গড়েছেন তাঁর অনুসারীরা।

কোনো কিছুই ২৫ জুলাই অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা থেকে হাফিজ সাঈদকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। প্রচারণায় তিনি পাকিস্তানের বিদায়ী সরকারকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়েছেন। নিজের সমর্থিত দুই শতাধিক প্রার্থীকে জোরালো সমর্থন দিচ্ছেন।

লাহোরের পূর্বাঞ্চলীয় শহরে চলতি মাসে এক সমাবেশে সাঈদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দালালদের রাজনীতি শেষ হতে যাচ্ছে। সমাবেশে তাঁকে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে স্বাগত জানান তাঁর সমর্থকেরা।

আগামী বুধবারের নির্বাচনে মূল লড়াই হবে বর্তমানে কারাগারে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খানের দলের মধ্যে। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নওয়াজের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ দেশটির ক্ষমতাশালী সেনাবাহিনীর প্রিয় বলে ধারণা রয়েছে।

বিপুলসংখ্যক উগ্রপন্থী ধর্মভিত্তিক দলও এবারের নির্বাচনে লড়ছে। তাদের উদ্দেশ্য, পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম দেশটির রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তন করা। এ জন্য তারা দেশটিতে শরিয়াহ অনুশাসন চালুর দাবি জানিয়ে আসছে।

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রসার ‘মূলধারার’ সশস্ত্র ধর্মভিত্তিক ও অন্যান্য উগ্রপন্থীদের রাজনীতিতে প্রবেশে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রস্তাবের বাস্তবায়ন হিসেবেই যেন এসেছে। অবশ্য সেনাবাহিনী ও এসব দল নিজেদের মধ্যে যোগসূত্রের কথা অস্বীকার করে আসছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এ রকম দলগুলো খুব কম আসনেই জিতবে। উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবাপন্ন পাকিস্তানিরা মনে করছেন, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী তাঁদের উগ্র রক্ষণশীল বক্তব্যের মাধ্যমে ইতিমধ্যে নিজেদের লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

নতুন দলগুলো তাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননা অথবা রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ করছে প্রতিনিয়ত। আর তাদের সঙ্গে সুর মেলাচ্ছে মূলধারার দলগুলো নওয়াজের পিএমএল-এনকে আক্রমণ করে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আইনজীবী সারুপ ইজাজ বলেন, মূলধারার ধর্মভিত্তিক ডানপন্থীদের আক্রমণ এসব দলকে মধ্যপন্থীর অবস্থানে নিচ্ছে না, বরং এটা মূলধারাকে মৌলবাদে পরিণত করছে।

নতুন-পুরোনো মিলিয়ে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দেড় হাজারের বেশি প্রার্থী এবারের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের মাঠে লড়ছেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে এই সংখ্যা ছিল কয়েক শ।

পাকিস্তানে সব সময়ই ধর্মভিত্তিক দল থাকে। কিন্তু নতুন দলগুলোর জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে এবং মূলধারার রাজনীতিকদের দেশপ্রেম নিয়ে তাদের আক্রমণাত্মক বক্তব্য লক্ষণীয়।

পাকিস্তানের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলকেই, বিশেষ করে পিএমএল-এনকে নতুন দলগুলো ইসলামিক মূল্যবোধ থেকে সরে এসে পশ্চিমা ভাবধারায় পাকিস্তানকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।

নতুন দলগুলোর একটি তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্ম অবমাননাকারীদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করছে। দলটির প্রার্থী ৫৬৬ জন। গত বছর নির্বাচন আইনের সামান্য পরিবর্তন করায় পিএমএল-এনকে ধর্ম অবমাননাকারী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন দলটির প্রার্থীরা। অবশ্য দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার কারণে তখনই ওই আইন দ্রুত আবার পরিবর্তন করা হয়।

গত মে মাসে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবালকে গুলি করে আহত করার ঘটনায় পুলিশ যে ব্যক্তিকে শনাক্ত করে, তিনি লাব্বাইকের সমর্থক। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, ইকবাল ধর্ম অবমাননাকারী। তাঁকে মরতে হবে। দলটির নেতা খাদিম হুসেইন রিজভি এই হামলার নিন্দা জানালেও তাঁর দল এ ঘটনায় দায়ী নয় বলে জানান। মূলধারার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সবাই এ হামলার নিন্দা জানায়।
তবে ইমরান খান নির্বাচনী বক্তব্যে ধর্ম অবমাননা বিতর্কে উসকানি দিয়েছেন।

তেহরিক-ই-লাব্বাইক নিবন্ধিত দল। তবে অনেক সংগঠনের নিবন্ধন নেই। মিল্লি মুসলিম লিগ নামের নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে সাঈদের ইসলামিক চ্যারিটি। তবে চলতি বছর সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। তবে পরে গ্রুপটি আল্লাহু আকবর তেহরিক নামের একটি দলের হয়ে প্রার্থীদের নাম নিবন্ধন করে। দলটির পোস্টারে সাঈদের ছবিও শোভা পাচ্ছে।

উগ্রপন্থী আরেকটি দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত (এএসডব্লিউজে) ভিন্ন নামে কয়েক ডজন প্রার্থী মাঠে নামিয়েছে।

তবে নিষিদ্ধ গ্রুপগুলো থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নাকচ করেছেন পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র আলতাফ খান। তিনি বলেন, ‘কোনো নিষিদ্ধ গ্রুপকে নিবন্ধন করা হয়নি।’ তবে তিনি জানান, ভিন্ন নামে নিষিদ্ধ দলগুলোর নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অভিযোগ কমিশন তদন্ত করছে।