যুক্তরাষ্ট্রে ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় নতুন ওষুধের অনুমোদন

প্রতীকী ছবি। বিবিসির সৌজন্যে
প্রতীকী ছবি। বিবিসির সৌজন্যে

লিভারে থাকা ম্যালেরিয়ার জীবাণু থেকে আরোগ্য পেতে নতুন ওষুধ এসেছে। এ ওষুধ এক ডোজ খেলে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত মানুষের দেহ থেকে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বেরিয়ে যাবে। আর ফিরে আসবে না বলে দাবি করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। 

আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় এ ওষুধটি মার্কিন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়েছে। ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠানটির দাবি, মার্কিন কর্তৃপক্ষ ৬০ বছরে এই প্রথম ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় এ ধরনের ওষুধ ব্যবহারে সবুজসংকেত দিয়েছে।

‘টাফেনোকোয়াইন’ নামে ওষুধটি এনেছে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জিএসকে। প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট (গবেষণা ও উন্নয়ন) হেল বেরন বলেন, ক্রিনটাফেল (টাফেনোকোয়াইনের ব্র্যান্ড নাম) অনুমোদন পাওয়ায় গত ৬০ বছরে প্লাজমোডিয়াম ভিভাক্স ম্যালেরিয়ার প্রথম কোনো নতুন চিকিৎসা শুরু হলো। এ ধরনের ম্যালেরিয়ায় বসবাসকারী মানুষের জন্য এ ওষুধ তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।

১৯৭০ সাল থেকেই ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে টাফেনোকোয়াইন বাজারে রয়েছে। লিভারে ম্যালেরিয়া জীবাণু থেকে মুক্তি পেতে টাফেনোকোয়াইনকে নতুনভাবে এনেছে জিএসকে।

বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ৮৫ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। কিছু ম্যালেরিয়া থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরও এর জীবাণু লিভারে থেকে যায়। এ ধরনের ম্যালেরিয়া থেকে আরোগ্য হওয়া কষ্টসাধ্য। এটা লিভারে সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায় বছরের পর বছর এবং মাঝেমধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

বিজ্ঞানীরা ‘টাফেনোকোয়াইন’কে ‘বড় অর্জন’ বলে মনে করছে। ওষুধ নিয়ন্ত্রকেরা এখন ওষুধটিকে রোগীর জন্য সুপারিশ করার অপেক্ষায় আছেন।

প্লাজমোডিয়াম ভিভাক্স জীবাণুর কারণে সংক্রামিত এই ম্যালেরিয়া সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সাব-সাহারা আফ্রিকার বাইরের অঞ্চলে। শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। মশার একটি কামড় থেকে দফায় দফায় ম্যালেরিয়া হতে পারে। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ে, দুর্বল হয়ে যায়।

সংক্রমিত মানুষ নিজের অজান্তেই দেহে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে। দেহে লুকিয়ে থাকা জীবাণু যখন জেগে ওঠে, তখন তাকে কোনো মশা কামড় দিলে সেই জীবাণু ওই মশাবাহিত হয়ে অন্য কারও দেহে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া নির্মূল করা কঠিন হয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) টাফেননকুইনকে অনুমোদন দিয়েছে। এ ওষুধটি লিভারে লুকিয়ে থাকা ম্যালেরিয়ার জীবাণুকে বের করে নিয়ে আসতে পারে এবং ওই ব্যক্তির আবারও আক্রান্ত হওয়া থামাতে পারে। দ্রুত সংক্রমণ রোধে এই ওষুধ অন্য ওষুধের পাশাপাশি দেওয়া যেতে পারে।

লিভারে সুপ্ত অবস্থায় থাকা ম্যালেরিয়া থেকে আরোগ্য পেতে ‘প্রাইমাকুইন’ নামে আরেকটি ওষুধ এর মধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে টাফেননকুইন একবার খেলেই চলে, আর প্রাইমাকুইন ১৪ দিন ধরে খেতে হয়।

বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ হচ্ছে, অল্প কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার পর সুস্থ বোধ করলে অনেকে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন। এর ফলে জীবাণু শরীরে থেকেই যায়, যা পরে ফিরে ফিরে আসে।

ওষুধটি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়ে এফডিএ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারেও সতর্ক করেছে। এই ওষুধ খেলে জৈব রাসায়নিক পদার্থ এনজাইম সমস্যা দেখা দিতে পরে। এটাকে জি৬পিডি ঘাটতি বলা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে এ ওষুধ ব্যবহার করলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
ওষুধ নিয়ন্ত্রক ব্যক্তিদের মতে, এই ওষুধটি দেওয়ার আগে রোগীর এই ঘাটতির বিষয়টি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। দরিদ্র এলাকা যেখানে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি, সেখানে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ ওষুধটি উচ্চমাত্রায় দিলে অনেকের মানসিক অসুস্থতাও দেখা দিতে পারে।

তবে এত সব সাবধানতা সত্ত্বেও এ ওষুধ নতুন আশা জুগিয়েছে। ওষুধের পাশাপাশি মশারিসহ অন্যান্য সাবধানতা অবলম্বন করলে বিশ্বজুড়ে ভিভাক্স ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিক প্রাইস বিবিসিকে বলেন, এক ডোজ টাফেননকুইন লিভারে লুকিয়ে থাকা ম্যালেরিয়া জীবাণু থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম। এটা বিশাল অর্জন। তাঁর মতে, এটি ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় গত ৬০ বছরে অন্যতম যুগান্তকারী অগ্রগতি।