যুক্তরাজ্যে ক্লাস বর্জন করে স্কুলশিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে যুক্তরাজ্যের হাজার হাজার স্কুলশিক্ষার্থী। ছবি বিবিসির সৌজন্যে
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে যুক্তরাজ্যের হাজার হাজার স্কুলশিক্ষার্থী। ছবি বিবিসির সৌজন্যে

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে যুক্তরাজ্যের হাজার হাজার স্কুলশিক্ষার্থী। ক্লাস বর্জন করে গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী রাস্তায় অবস্থান করে তারা। পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্রুত কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানায় তারা। বিশ্বনেতাদের নিষ্ক্রিয়তার নিন্দা জানায় তারা। নানা প্রতিবাদী স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে যুক্তরাজ্যের স্কুলশিক্ষার্থীদের এমন বিক্ষোভের ঘটনা নজিরবিহীন।

কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে স্কুলপড়ুয়াদের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ‍যুক্তরাজ্যে শিক্ষার্থীদের দেশব্যাপী এই বিক্ষোভ হলো।

বিক্ষোভকারী এসব কিশোর-কিশোরীদের কথা হলো—‘মানুষের বসবাসের জন্য আরেকটা পৃথিবী নেই। এই পৃথিবীকেই আমাদের রক্ষা করতে হবে। অথচ অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় নেমে পরিবেশবিধ্বংসী উপাদানের মাধ্যমে পৃথিবীকে ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রায় ২০ বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে এলেও এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ নেতারা।’

‘ইয়ুথ স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক এই বিক্ষোভের সমন্বয়কারী সংগঠন ‘ইউকে স্টুডেন্ট ক্লাইমেট নেটওয়ার্ক’-এর অ্যানা টেলর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে দেশে দেশে কিশোর-তরুণেরা তাদের সরকারকে জবাবদিহি করতে রাস্তায় নামছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হবে বর্তমান শিশু-কিশোরেরা।

বিক্ষোভকারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। এ জন্য সরকারের পরিবেশ ও শিক্ষানীতির সংস্কারেরও আহ্বান জানায় তারা।

বিক্ষোভকারীরা ভোট দেওয়ার বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করারও দাবি জানায়। এক্সেটার এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ১১ বছর বয়সী স্কারলেট হিউজেস আইটিভিকে বলে, ‘আমরা কেবল বয়স্কদের ওপর সবকিছু ছেড়ে দিতে পারি না। কারণ তাঁরা সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।’

যুক্তরাজ্যের প্রায় ৬০টি শহরে স্কুলশিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেয়। ওয়েস্টমিনস্টারে পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ করে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী। সরকারের মন্ত্রী ও প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব হেড টিচার্স’ শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনে নিষেধ করেছিল। শিক্ষার্থীরা তা মানেনি। শিক্ষক ও পরিবেশবাদীরা এই বিক্ষোভে সমর্থন দেয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনের সমালোচনা করেছে। ক্লাস বর্জনের ফলে শিক্ষা কার্যক্রমে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত জাতিসংঘের বৈশ্বিক জলবায়ু সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতার মারাত্মক প্রভাব এড়াতে আর কেবল ১২ বছর সময় আছে। অন্যথায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা নজিরবিহীনভাবে বৃদ্ধির পাশাপাশি মারাত্মক খরার কবলে পড়বে বিশ্ব। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনকে পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।