ধর্ষণ: সাক্ষ্য সংগ্রহের নীতিমালা প্রকাশ যুক্তরাজ্যে

যুদ্ধকালীন ধর্ষণের নীতিসম্মত সাক্ষ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে প্রণীত নীতিমালার প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আলোচকেরা। এতে প্রকাশিত হয় অধ্যাপক নয়নিকা মুখার্জির ‘বীরাঙ্গনা’ শীর্ষক ‘সচিত্র উপন্যাস’। এলএসই, যুক্তরাজ্য, ২০ মে। ছবি: প্রথম আলো
যুদ্ধকালীন ধর্ষণের নীতিসম্মত সাক্ষ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে প্রণীত নীতিমালার প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আলোচকেরা। এতে প্রকাশিত হয় অধ্যাপক নয়নিকা মুখার্জির ‘বীরাঙ্গনা’ শীর্ষক ‘সচিত্র উপন্যাস’। এলএসই, যুক্তরাজ্য, ২০ মে। ছবি: প্রথম আলো

তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ ও বিচারপ্রক্রিয়ায় ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের সাক্ষ্যগ্রহণে অনেক সময় নৈতিকতার দিকটি উপেক্ষিত হয়। ভুক্তভোগীর মানসিক অবস্থা ও নিরাপত্তার কথা ভাবা হয় না। তবে এসব ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির নিরাপত্তা ও কল্যাণের দিকটি সর্বাগ্রে বিবেচিত হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, ধর্ষিতদের কথা বলার মতো পরিবেশ করে দিতে হবে।

যুদ্ধকালীন ধর্ষণের নীতিসম্মত সাক্ষ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে প্রণীত নীতিমালার প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে এসব কথা বলেন ধর্ষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করা ব্যক্তিরা। সোমবার (২০ মে) ‘লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের’ (এলএসই) একটি মিলনায়তনে ওই নীতিমালার প্রকাশ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ধর্ষণের স্পর্শকাতরতা তুলে ধরে ‘বীরাঙ্গনা’ শীর্ষক একটি ‘সচিত্র উপন্যাস’ (গ্রাফিক নোবেল) প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ধর্ষণের ঘটনা এবং বীরাঙ্গনাদের স্মৃতিকথা নিয়ে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নয়নিকা মুখার্জির গবেষণামূলক বই ‘স্পেক্ট্রাল উন্ড: সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স, পাবলিক মেমোরিজ অ্যান্ড দ্য বাংলাদেশ ওয়ার অব ১৯৭১’ এর আলোকে উল্লিখিত নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। নয়নিকা মুখার্জি নিজেই বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত সচিত্র উপন্যাসটির গ্রন্থনা ও সংলাপ লেখার কাজ করেন। উপন্যাসটির চিত্রালংকরণ করেছেন ঢাকাভিত্তিক শিল্পী নাজমুন্নাহার কেয়া। ঢাকার ‘নোকতা আর্টস’ থেকে প্রকাশিত বইটির গবেষণা কাজে সহযোগিতা করে রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ।

অধ্যাপক নয়নিকা মুখার্জি দুই দশকের বেশি সময় ধরে একাত্তরের যুদ্ধে যৌন সহিংসতার জনস্মৃতি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, কেবল যুদ্ধকালীন ধর্ষণের ঘটনায় নয়; যেকোনো পরিস্থিতিতে ঘটা যৌন সহিংসতা ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য সংগ্রহের কাজটি নীতিসম্মত হওয়া উচিত। সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, এনজিওকর্মী, আইনজীবীসহ বিচার–প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সবার উচিত ভুক্তভোগীর মানসিক অবস্থা এবং সামাজিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় নিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ ও তথ্য প্রকাশ করা।

শিল্পী নাজমুন্নাহার কেয়া বলেন, উপন্যাসটির চিত্রাঙ্কনের কাজ করতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হয়েছেন।

কিংস কলেজের অধ্যাপক জেলকি বোয়েস্তান বলেন, বাংলাদেশ যুদ্ধকালীন ধর্ষণের শিকার নারীদের যেভাবে সম্মান করেছে, তা বিশ্বের অন্য কোথাও বিরল। কিন্তু সমসাময়িক ধর্ষণের ঘটনাগুলোতে সরকারের কাঙ্ক্ষিত তৎপরতা দেখা যায় না। তিনি বলেন, বিশ্বের নানা প্রান্তেই ধর্ষণের ঘটনায় রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের নজির রয়েছে।

ধর্ষণ-ভুক্তভোগীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘দ্য সারভাইভর স্পিক আউট নেটওয়ার্ক’–এর কোলবাসিয়া হোসো ধর্ষণের ঘটনাগুলোতে বর্তমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কোনো বাছ-বিচার ছাড়া মুহূর্তের মধ্যেই ধর্ষণের ভিডিও, ছবি কিংবা ভুক্তভোগীর পরিচয় ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে ভুক্তভোগী ব্যক্তি আরও বেশি বঞ্চনার মুখে পড়ছেন।

এলএসইর ‘সেন্টার ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি’ বিভাগের মার্শা হেনরির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক সংগঠন আইউইটনেস টু অ্যাটরোসিটিসের মারিও মিঙ্গো এবং ড. ডেনিস মুকওয়েজি ফাউন্ডেশনের ম্যালিনি ল্যাক্সমিনারায়ন।

বক্তারা বলেন, নারী ও পুরুষ উভয়েই যৌন নির্যাতনের শিকার হতে পারে। সামাজিকভাবে কলঙ্কিত হওয়ার ভয় কিংবা নিরাপত্তাহীনতার কারণে ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিরা মুখ খুলতে চান না। সে জন্য রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার থেকে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভুক্তভোগীরা সাহস নিয়ে কথা বলতে পারেন।

যুদ্ধকালীন ধর্ষণের নীতিসম্মত সাক্ষ্যগ্রহণের এই নির্দেশিকা অনলাইনে বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে। ঠিকানা- www.ethical-testimonies-svc.org.uk