মোদির গদি ঠিক থাকছে কি না, আজই জানা যাবে

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি

যাবতীয় জল্পনার নিরসন হতে চলেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে লোকসভার সব কেন্দ্রের ভোট গণনা। রাজ্যে রাজ্যে একাধিক জায়গায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রার্থীদের উপস্থিতিতে সকাল আটটা থেকে ভোট গণনা শুরু হয়েছে। তার ঠিক আগে বিরোধীদের দাবি খারিজ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গতকাল বুধবার জানিয়ে দেয়, প্রতি বিধানসভা কেন্দ্রের পাঁচটি করে ইভিএম ও ভিভিপ্যাট মেশিনের স্লিপ গোনা হবে একেবারে শেষে, শুরুতে নয়। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত বিরোধীদের আরও একবার হতাশ করল। বিরোধীদের সরাসরি অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন তার যাবতীয় বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে শাসক দলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।

ইভিএম নিয়ে বিরোধীদের আশঙ্কা নতুন নয়। প্রতি নির্বাচনেই কোনো না কোনো দল ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ এনেছে। গত মঙ্গলবার ২২ বিরোধী দলের নেতারা এক জোটে ইসির কাছে যান। তাঁদের দাবি ছিল, ভিভিপ্যাট (ভোটার–ভ্যারিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইল) ও ইভিএমের (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) স্লিপ আগে গোনা হোক। গণনায় গোলমাল দেখা গেলে সংশ্লিষ্ট বুথের ভোট নতুন করে নেওয়া প্রয়োজন। বিরোধীদের দাবি সমর্থন করেছিলেন সাবেক মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ওয়াই এস কুরেশি। তাঁর যুক্তি, পোস্টাল ব্যালট যদি প্রথমে গোনা হতে পারে, তাহলে ইভিএম ও ভিভিপ্যাট পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে না গোনার কারণ নেই। গতকাল বিরোধীদের এই দাবি খারিজ করার মধ্য দিয়ে ইসির পক্ষপাতহীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠে গেল। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি গতকাল বিকেলে দলীয় দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অযৌক্তিক কিছু দাবি করিনি। যা শেষে গোনা হবে, তা প্রথমে কেন গোনা যাবে না? ইসির নিরপেক্ষতার প্রতি সরাসরি প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এই ইসির আমলে ইভিএম হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ইলেকট্রনিক ভিকটিম মেশিন’ এবং ইসি হয়েছে ‘এলিমিনেটেড ক্রেডিবিলিটি’। বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ বিরোধীদের সমালোচনা করে বলেছেন, ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিরোধীরা দেশের ভাবমূর্তিতে কালি ছিটিয়েছেন। ইভিএম নিয়ে তাঁদের দাবি অসাংবিধানিক এবং সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে অমর্যাদার।

শাসক দল বিজেপির নেতারা শুরু থেকেই বিরোধীদের এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে শরিকদের নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। শাসক দলের নেতাদের বক্তব্য, ইভিএমের ফল বিরোধীদের পক্ষে গেলে তাঁরা সরব হন না। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস জেতার পর ইভিএম নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। অথচ এবার আগেভাগেই বিরোধীরা ইসি ও ইভিএমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিরোধীরা হারছে। বুথ–ফেরত জরিপেই তার ইঙ্গিত রয়েছে। কাজেই অজুহাত হিসেবে খাড়া করা হচ্ছে ইভিএমকে।

ইসি জানিয়েছে, ইভিএমে কারচুপি অসম্ভব। কিন্তু বিরোধীরা তাতে সন্তুষ্ট নয়। দুদিন ধরে বিভিন্ন রাজ্যে ইভিএম নিয়ে যা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে সংশয় বাড়ছে বৈ কমছে না। বহু রাজ্যে বিরোধী দলের সমর্থকদের দেখা গেছে স্ট্রং রুমের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে ইভিএম পাহারা দিতে। বিভিন্ন দলের নেতারাও সমর্থকদের এই নির্দেশ দিয়েছেন। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম এই বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন। গত মঙ্গলবার প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও এক বার্তায় সমর্থকদের বলেন, ‘বুথ–ফেরত জরিপে হতাশ হবেন না। ওটা গুজব। গুজবটা ছড়ানোই হয়েছে মনোবল ভাঙার উদ্দেশ্যে।’ একই বার্তা গতকাল দেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাই সজাগ ও সতর্ক থাকুন। মনে রাখবেন, আপনাদের লড়াই সত্যের জন্য। ভুল বুথ–ফেরত জরিপে বিভ্রান্ত হবেন না। নিজের ওপর ও দলের ওপর বিশ্বাস রাখুন। আপনাদের কঠিন পরিশ্রম বিফলে যাবে না।’

বুথ–ফেরত জরিপ অনুযায়ী, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তিতে ভর দিয়ে প্রায় বিনা প্রতিরোধে দ্বিতীয়বার সরকার গড়তে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই বিশ্বাস বিজেপি ও এনডিএর শরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লেও বিরোধী নেতারা হাল ছাড়তে প্রস্তুত নন। আরও একবার বিজেপির সরকার রুখতে তাঁরা নিজেদের মতো করে সক্রিয়। তেলেগু দেশম নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু আগে থেকেই সক্রিয়। বিভিন্ন নেতার সঙ্গে তিনি কথা চালাচ্ছেন। এনসিপির নেতা প্রবীণ শারদ পাওয়ারও তৎপর হয়ে উঠেছেন। গত দুদিনে তিনি পরপর ফোনে কথা বলেছেন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী বিজু জনতা দলের নেতা নবীন পট্টনায়েক, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও এবং ওয়াইএসআরের নেতা জগমোহন রেড্ডির সঙ্গে। এনডিএ কোনোভাবে ম্যাজিক ফিগারে না পৌঁছলে এই তিন দলের নেতাদের দিকেই প্রথম তাকাবেন নরেন্দ্র মোদি। নবীন পট্টনায়েককে ফোন করেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা কমলনাথও। তাঁরা দুজনেই দুজনকে স্কুলের দিন থেকে চেনেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, সরকার গড়ার মতো অবস্থায় ইউপিএ এলে নবীন ও চন্দ্রশেখর সহযোগিতা করবেন বলে শারদ পাওয়ারকে জানিয়েছেন। নবীন পট্টনায়েক আগেই বলেছিলেন, যারা ওডিশার স্বার্থ দেখবে, তাঁর দল তাকে সমর্থন দেবে।

সরকার গড়ার নিশ্চয়তা থেকে বিজেপির নেতারা অবশ্য বিন্দুমাত্র পিছু হটতে রাজি নন, বরং বুথ–ফেরত জরিপের ফলই যে কমবেশি ঠিক হতে চলেছে, সেই বিশ্বাসে বিজেপির নেতারা ভরপুর। ওই বিশ্বাসের দরুন দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে দলীয় দপ্তরের ভেতরে সাজ সাজ রব। প্রবল দাবদাহের হাত থেকে বাঁচতে প্যান্ডেল খাটানো হয়েছে। সমর্থকদের সামাল দিতে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বেচ্ছাসেবকদের। গত মঙ্গলবারের নৈশভোজের আসরেও পরবর্তী সরকার গঠন এবং তার লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজনাথ সিং ওই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে জানান, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বিক উন্নয়নই হবে সরকারের লক্ষ্য। বিশেষ নজর দেওয়া হবে কৃষক–অসন্তোষ দূর করে কৃষির আয় দ্বিগুণ করার দিকে। সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে আন্তর্জাতিক স্তরে সমন্বয় বাড়ানো হবে।

তুলনায় কংগ্রেস সতর্ক। আকবর রোডের দলীয় দপ্তরে তেমন কোনো তৎপরতা নেই। শুধু সামনের রাস্তার ব্যারিকেড নতুন করে তৈরি হয়েছে।