পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় নবান্নে ঢুকছেন জুনিয়র চিকিৎসক প্রতিনিধিরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় নবান্নে ঢুকছেন জুনিয়র চিকিৎসক প্রতিনিধিরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকেরা সাত দিন ধরে চলা তাঁদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করার আশ্বাস দিয়েছেন। আজ সোমবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নে জুনিয়র চিকিৎসক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানেই এই প্রতিশ্রুতি দেন চিকিৎসকেরা।

আজকের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ জন প্রতিনিধি যোগ দেন। এ ছাড়া বৈঠকে মমতা ছাড়া উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাসহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং কলকাতার প্রখ্যাত চিকিৎসকেরা।
এর আগে মমতা ধর্মঘট প্রত্যাহার করার লক্ষ্যে ধর্মঘটি জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করার ডাক দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। একপর্যায়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসক ধর্মঘট নিয়ে করা কিছু মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।

আজকের বৈঠকে যোগ দিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকেরা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি তোলেন। তাঁরা বলেন, এভাবে চিকিৎসা করাকালীন চিকিৎসকদের নিগৃহীত হওয়া মানতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। মমতাও এর পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, চিকিৎসকদের মারা যায় না।

এই বৈঠকেই মমতা জানিয়ে দেন, প্রতিটি হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। নিয়োগ করা হবে অতিরিক্ত পুলিশ। রোগীদের কথা শোনার জন্য হাসপাতালে প্রতিটি সিফটে একজন করে জনসংযোগ কর্মকর্তা থাকবেন। রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদারের সঙ্গে হাসপাতালে অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে হবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। চিকিৎসকদের গায়ে হাত দেওয়ার প্রবণতাকে রুখতে হবে।

চিকিৎসকেরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচারিত হতে হতে তাঁরা নিরুপায় হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছেন। তাঁরা চাইছেন চিকিৎসকদের নিরাপত্তা। হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার ও দোষীদের শাস্তি দিতে।
মমতা এসব দাবি মেনে নিয়ে বলেন, ‘আমরা সাত দিনের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান করব।’

চিকিৎসক ধর্মঘটের সূচনা হয় গত সোমবার রাতে। কলকাতার এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক প্রবীণ রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে অশান্ত হয়ে ওঠে হাসপাতাল। এই মৃত্যুতে চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ এনে ওই রোগীর স্বজনেরা চড়াও হন চিকিৎসকদের ওপর। একপর্যায়ে হাসপাতালের চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায় প্রচণ্ড মার খান। তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে। সেখানে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিন আরও ৫ চিকিৎসক আহত হন। অবশ্য পুলিশ ৫ হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে। আজ রাতেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই জুনিয়র চিকিৎসককে দেখতে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত সোমবারের ঘটনার প্রতিবাদে এনআরএসএর জুনিয়র চিকিৎসকেরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে ধর্মঘটে নামেন। এতে অচল হয়ে পড়ে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা। জুনিয়র চিকিৎসকদের এই ধর্মঘটের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেন কলকাতার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের জুনিয়র এবং সিনিয়র চিকিৎসকেরা। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে কলকাতার সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা।
এই ঘটনার জেরে গত বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার এসএসকেএম বা পিজি হাসপাতালে এসে চিকিৎসকদের হুমকির সুরে কাজে যোগদানের সময় বেঁধে দেন ওই দিন দুপুর দুটো পর্যন্ত। মমতা এ ছাড়া উত্তেজনাপূর্ণ ভাষণ দেন চিকিৎসকদের উদ্দেশে। এতে ক্ষুব্ধ হয় চিকিৎসক সমাজ। এরপরই চিকিৎসকেরা দাবি তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। তাই চিকিৎসকেরা সেই মঙ্গলবার থেকে অব্যাহত রাখেন তাঁদের ধর্মঘট। তবে তাঁরা জরুরি বিভাগ চালু রাখলেও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ রাখেন।
এদিকে এই ঘটনার জেরে দিল্লির এইমসসহ বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও এসে দাঁড়ান পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের এই আন্দোলনের পাশে। চিকিৎসকেরা দাবি তোলেন, হাসপাতালে তাঁদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব চিকিৎসক লাঞ্ছিত হয়েছেন, আহত হয়েছেন, সেসব ঘটনার বিচার করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।
এদিকে চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার ঘোষণামতে এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ ১৭ জুন দেশব্যাপী চিকিৎসকেরা ধর্মঘট পালন করেন।