সিরীয় সেনাদের সঙ্গে কুর্দিদের আপস

কুর্দিনিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তর-পূর্বে তুর্কি হামলার পঞ্চম দিন সিরিয়ার সীমান্ত শহর রাস আল-আইন শহরে বোমা বিস্ফোরণ, ধোঁয়া। ছবি: এএফপি
কুর্দিনিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তর-পূর্বে তুর্কি হামলার পঞ্চম দিন সিরিয়ার সীমান্ত শহর রাস আল-আইন শহরে বোমা বিস্ফোরণ, ধোঁয়া। ছবি: এএফপি

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর একা হয়ে পড়া কুর্দিদের চেপে ধরেছে তুরস্ক। তুর্কিদের একের পর এক হামলা থেকে রক্ষা পেতে এবার কুর্দিরা সিরিয়া সেনাবাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছে। রাশিয়া সমর্থিত সিরিয়ার সেনাবাহিনীর ওপর অবিশ্বাস ও অনাস্থা নিয়েই সমঝোতার পথে হাঁটছে কুর্দিরা।

সিরিয়ার কুর্দিরা দাবি করেছে, সিরিয়া সরকার তুর্কি হামলা বন্ধে উত্তরাঞ্চলের সীমান্তে সেনা পাঠাতে সম্মত হয়েছে। এর আগে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, উত্তরে সরকারি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে কুর্দিদের সহায়তা করার চুক্তির বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, সীমান্ত এলাকা থেকে কুর্দি বাহিনীকে হটাতে গত সপ্তাহে হামলা শুরু করে তুরস্ক। ওই এলাকা কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) নিয়ন্ত্রণে ছিল। এসডিএফ হচ্ছে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র। সপ্তাহজুড়ে ব্যাপক বোমাবর্ষণের পর তুরস্ক দুটি প্রধান সীমান্ত শহরের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। এতে দুই পক্ষের বহু বেসামরিক ব্যক্তি ও যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।

রোববার কুর্দি কর্তৃপক্ষ জানায়, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিদেশি সদস্যদের প্রায় ৮০০ পরিবার উত্তরের আই ইসা শিবির থেকে পালিয়ে গেছে।

তুরস্কের হামলা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল বিচলিত হয়ে পড়েছে। কারণ এসডিএফ ছিল সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পশ্চিমা জোটের প্রধান মিত্র।

এসডিএফের বিরুদ্ধে ভিন্নমত রয়েছে তুরস্কের। এটিকে জঙ্গি সংগঠন বলে মনে করে তুরস্ক এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে সেখান থেকে এসডিএফকে সরিয়ে দিতে চায়। তুরস্কে অবস্থান করা সিরিয়ার শরণার্থীদের মধ্যে ৩০ লাখেরও বেশি শরণার্থীকে ওই ‘নিরাপদ অঞ্চলে’ রাখার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেছে দেশটি।
তবে সমালোচকদের মতে, শরণার্থীদের অনেকেই কুর্দি নন। তাই এই পদক্ষেপের কারণে স্থানীয় কুর্দিরা জাতিগত নিধনের শিকার হতে পারে।

সিরিয়ার সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কুর্দিশাসিত প্রশাসন জানিয়েছে, চুক্তি অনুসারে সিরিয়ার সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকাজুড়ে মোতায়েন হতে পারে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সীমান্ত এলাকায় ঢুকে পড়া তুর্কি বাহিনী ও ভাড়াটে বিদেশি সেনাদের তাড়াতে এবং তাঁদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এসডিএফকে সহায়তা করবেন সিরিয়ার সেনারা। তুর্কি সেনাদের দখল করা আফরিনের মতো সিরিয়ার অন্যান্য শহর থেকেও তাদের তাড়াতে সহায়তা করবেন সিরিয়ার সেনারা।

দুই মাসের লড়াইয়ের পর তুর্কি বাহিনী ও তাদের পক্ষের সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ২০১৮ সালে কুর্দি যোদ্ধাদের আফরিন থেকে বিতাড়িত করে।

ওই অঞ্চলে মার্কিন ছায়া হারানোর পর সিরিয়া বাহিনীর সঙ্গে এই চুক্তিটি কুর্দিদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে এ ব্যাপারে সিরিয়া সরকারের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এসডিএফের প্রধান মাজলুম আবদি স্বীকার করেছেন, আসাদ সরকার ও এর রাশিয়া জোটের সঙ্গে এই চুক্তিটি তাঁদের জন্য ‘বেদনাদায়ক সমঝোতা’ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রাখতে পারি না। কার ওপর ভরসা করতে হবে, তা জানাও কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু যদি আমাদের সমঝোতা ও আমাদের মানুষের গণহত্যার মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নিতে হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা আমাদের মানুষদের বেঁচে থাকার বিষয়টিকেই বেছে নেব।’