ব্রেক্সিট ঠেকানোর আশা ছাড়বেন না ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক

ইইউ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। ছবি: রয়টার্স
ইইউ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। ছবি: রয়টার্স

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদ বা ব্রেক্সিট ঠেকানোর পথে অবিচল থাকার জন্য যুক্তরাজ্যের ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। গত বুধবার রাতে বেলজিয়ামের কলেজ অব ইউরোপে দেওয়া এক বক্তব্যে টাস্ক বলেন, ব্রেক্সিট আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্তরাজ্যকে দ্বিতীয় শ্রেণির খেলোয়াড়ে পরিণত করবে এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রকৃত অবসান ঘটাবে।

আগামী ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচন। ব্রেক্সিট নিয়ে তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ এই নির্বাচন সামনে রেখে টাস্কের এমন বক্তব্য যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে খুব স্বাভাবিক কারণেই বিতর্ক ছড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক বিভাগের সাবেক প্রধান সায়মন ফ্রেসার বিবিসিকে বলেন, এমন বক্তব্য সমীচীন নয়। অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিকদের মন্তব্য না করার যে রীতি, সেটিই উত্তম।

পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর আগামী ১ ডিসেম্বর ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে বিদায় নেবেন ডোনাল্ড টাস্ক। বক্তব্যে তিনিও স্বীকার করেন, এক মাস আগেও তাঁর পক্ষে এমন মন্তব্য করা সম্ভব ছিল না। ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত বাতিল হওয়ার সম্ভাবনার প্রতি ইঙ্গিত করে ইইউর এই নেতা বলেন, ‘আমরা এখন অতিরিক্ত সময়ে খেলছি। এটি পেনাল্টিতেও গড়াতে পারে এবং যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।’

আগামী মাস থেকে ইইউ প্রশাসনে নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেবেন। টাস্কের স্থলাভিষিক্ত হবেন বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চার্লস মাইকেল। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার ইইউর এই নতুন প্রশাসনে কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না।

২০১৬ সালে এক গণভোটে যুক্তরাজ্যের মানুষ ইইউ ত্যাগের পক্ষে রায় দেয়। চলতি বছরের ২৯ মার্চ এই বিচ্ছেদ ঘটার কথা ছিল। কিন্তু ব্রেক্সিট চুক্তিতে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট অনুমোদন না দেওয়ায় এ পর্যন্ত তিন দফা পিছিয়েছে এই বিচ্ছেদ। ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি ব্রেক্সিটের নতুন দিনক্ষণ নির্ধারিত রয়েছে। ব্রেক্সিট কার্যকর করতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে আগামী ১২ ডিসেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচনের পথ বেছে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ক্ষমতায় ফিরলে তিনি নিজের সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক ব্রেক্সিট কার্যকর করতে চান।

নির্বাচন সামনে রেখে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় প্রার্থী মনোনয়ন শেষ হওয়ার কথা। প্রার্থিতা নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ব্রেক্সিটপন্থী এবং ব্রেক্সিটবিরোধী দলগুলোর মধ্যে দর-কষাকষি চলেছে। ব্রেক্সিটবিরোধী ভোটের বিভক্তি ঠেকাতে ৬০টি আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার সমঝোতা করেছে লিবারেল ডেমোক্র্যাট, গ্রিন পার্টি ও প্লাইড কামরি। অন্যদিকে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ কনজারভেটিভের সঙ্গে ব্রেক্সিটপন্থী জোট গঠনের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক সমঝোতা না হলেও ২০১৭ সালে কনজারভেটিভের দখলে যাওয়া ৩১৭টি আসনে প্রার্থী না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নাইজেল ফারাজ। তবে লেবারের আসনগুলোতে সর্বস্ব নিয়োগ করে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু নিজেদের আসন ধরে রাখার পাশাপাশি লেবারের কাছ থেকে অন্তত ডজনখানেক আসন ছিনিয়ে নেওয়া ছাড়া কনজারভেটিভের পক্ষে এককভাবে ক্ষমতায় ফেরা সম্ভব নয়। তাই লেবারের আসনগুলোতে ব্রেক্সিট পার্টির প্রার্থিতা কনজারভেটিভের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

এই নির্বাচনে বরিসের এককভাবে ক্ষমতায় ফেরা ঠেকিয়ে দেওয়াই ব্রেক্সিটবিরোধীদের মূল লক্ষ্য। অন্যদিকে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী নাইজেল ফারাজ চান অন্তত কয়েকটি আসন নিয়ে হলেও কনজারভেটিভ সরকারের কাঁধে চেপে বসতে, যাতে নিজেদের ইচ্ছামাফিক ব্রেক্সিট কার্যকরে সরকারকে বাধ্য করা যায়। আর ব্রেক্সিট নিয়ে লেবার পার্টির অবস্থান হলো, ক্ষমতায় গেলে ইইউর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে নতুন চুক্তি করবে তারা। এরপর গণভোটে দেবে ওই চুক্তি। যেখানে ওই চুক্তির মাধ্যমে বিচ্ছেদ বা ইইউর সঙ্গে থেকে যাওয়ার বিকল্পও থাকবে।