সৌদি প্রিন্সেস জানালেন, তিনি কারাবন্দী

সৌদি আরবের প্রিন্সেস বাসমাহ। এএফপির ফাইল ছবি
সৌদি আরবের প্রিন্সেস বাসমাহ। এএফপির ফাইল ছবি

সৌদি আরবের প্রিন্সেস বাসমাহ বিনতে সৌদ বিন আবদুল আজিজ আল–সৌদ দাবি করেছেন, কোনো অভিযোগ ছাড়াই তাঁকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি এক টুইটে তিনি এ কথা জানিয়ে তাঁর মুক্তির জন্য আবেদন জানান। গার্ডিয়ানের খবরে এ কথা জানানো হয়েছে।

প্রিন্সেস বাসমাহ প্রয়াত বাদশাহ সৌদের ১০৮ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট এবং বর্তমান বাদশাহ সালমানের ভাতিজি। সেই সূত্রে তিনি ও আলোচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান চাচাত ভাই–বোন। তিনি একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি রাজতন্ত্রের সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার ব্যক্তিদের একজন।

প্রিন্সেস বাসমাহ দাবি করেছেন, তিনি বন্দী অবস্থায় কারাগারে আছেন। তিনি বর্তমান বাদশাহ ও যুবরাজের কাছে তাঁকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়া তাঁকে তাঁর এক মেয়েসহ রিয়াদে আটকে রাখা হয়েছে। বারবার আবেদন জানানোর পরও কেন তাঁকে বন্দী রাখা হয়েছে, এর কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি রাজকীয় আদালত, বাদশাহ সালমান কিংবা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এই প্রিন্সেসের দাবি, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। তারপরও তাঁকে আল–হাইর কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা এখন খুবই খারাপ।

তবে প্রিন্সেস বাসমাহকে আটকে রাখার খবরে সৌদি রাজপরিবারের দুজন জ্যেষ্ঠ সদস্য বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। একজন বলেন, এক বছর ধরে তিনি প্রিন্সেস বাসমাহের কোনো খবর জানেন না। প্রিন্সেস বাসমাহ অসুস্থ, এমনটাই মনে করেছিলেন তিনি। রাজপরিবারের আরেক সদস্য বলেন, তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়েছিল বলে তিনি ধারণা করেছিলেন।

ধারণা করা হচ্ছে, প্রিন্সেস বাসমাহ তাঁর এক মেয়েকে নিয়ে গত বছরের মার্চে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে সৌদি আরব ছাড়ার সময় তাদের আটক করা হয়। জরুরি চিকিৎসার কথা বলে ব্যক্তিগত জেটে করে যেতে চাইলে তাঁকে দেশ ছাড়তে দেওয়া হয়নি।

প্রিন্সেস বাসমাহ সৌদি আরবের বর্তমান ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সবসময়ই সোচ্চার। নারী অধিকার ও মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার এই প্রিন্সেস খুবই অল্প সময় গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। তিনি কয়েক বছর লন্ডনে ছিলেন। পরে তিনি ব্যবসায় মন দেন। প্রিন্সেস বাসমাহ ২০১৫ সালের শেষের দিকে সৌদি আরবে ফিরে আসেন। সেই থেকে তিনি ইয়েমেন সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের আগ্রাসী ভূমিকার কড়া সমালোচক। সৌদি আরবে ব্যাপক সংস্কারের দাবিতেও সোচ্চার ছিলেন তিনি।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, প্রিন্সেস বাসমাহের কারাবন্দীত্বের পেছনে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত আছে। কারণ, এই বিষয়ে তিনি চুপ আছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নারী অধিকার–বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক রোথনা বেগম বলেন, সৌদি আরবে অনেক নারীকে যে নিভৃতে বন্দী রাখা হয়েছে, এটা তার প্রমাণ। প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জামানায় কারো যে কথা বলার অধিকার নেই, তা স্পষ্ট।

প্রিন্সেস বাসমাহের অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।