করোনার টিকা নিয়ে কেন এত তাড়াহুড়া মোদির সরকারের?

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা সংক্রমিতদের খোঁজ নেওয়া সম্ভব নয়। পরীক্ষা তো নয়ই। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, দিল্লি সরকার, ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল, নীতি আয়োগ এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) গতকাল রোববার একযোগে এই কথা জানাল। এতে দ্বিতীয়বারের মতো ধাক্কা খেল নরেন্দ্র মোদির সরকার। প্রথম ধাক্কা হচ্ছে, ১৫ আগস্টের মধ্যে করোনার টিকা বাজারে আনার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। তাড়াহুড়া করে স্বাধীনতা দিবসে টিকা বাজারে এনে মোদি সরকার কৃতিত্ব নিতে চাইছে কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

সরকারকে বড় ধাক্কাটা দিয়েছে অবশ্য আইসিএমআর। গত শুক্রবার আইসিএমআরের মহাপরিচালক বলরাম ভার্গব নির্দেশ দেন, ১৫ আগস্টের মধ্যে ভারতে তৈরি করোনার প্রথম টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’ বাজারজাত করা হবে। সে জন্য তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরীক্ষা চালানো ১২টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাণী ও মানুষের ওপর এই টিকা প্রয়োগের যাবতীয় ট্রায়াল শেষ করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ নিয়েই বিতর্কের শুরু। মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে এমন তাড়াহুড়া করে টিকা আনা ঠিক হচ্ছে কি না, তা নিয়ে উঠতে থাকে বহু প্রশ্ন। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের মহাপরিচালক রণদীপ গুলেরিয়া সরাসরিই জানান, এত কম সময়ের মধ্যে এই টিকা বাজারে আনার সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ আদৌ বাস্তবসম্মত নয়। এতে হিতে বিপরীত হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে। একই প্রতিক্রিয়া অন্য ১২ প্রতিষ্ঠানেরও।

>

ভারত বায়োটেক জানিয়েছিল, করোনা টিকা তৈরিতে লাগবে অন্তত ১৫ মাস। সেই সময় কমিয়ে আনা হয় ৬ সপ্তাহে।
ভারতে করোনা মোকাবিলা

‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস রেজিস্ট্রি ইন্ডিয়াকে’ কোভ্যাক্সিনের উৎপাদনকারী সংস্থা ভারত বায়োটেক জানিয়েছিল, পরীক্ষা শেষ করে টিকা আনতে তাদের অন্তত ১৫ মাস লাগবে। আইসিএমআর সেই সময়সীমা কমিয়ে আনে মাত্র ৬ সপ্তাহ। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা প্রবলভাবে এর সমালোচনা করায় আইসিএমআর শনিবার জানায়, অযথা সরকারি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার কথাই ওই নির্দেশে বোঝানো হয়েছে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, আইসিএমআর এখন আর ১৫ আগস্ট সময়সীমার ওপর জোর দিচ্ছে না।

কেন ১৫ আগস্ট? আইসিএমআর সরাসরি কিছু না বললেও এমন মনে করা হচ্ছে, তাদের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের চাপ ছিল। জনশ্রুতি, মোদি ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে কোভ্যাক্সিন টিকা বাজারজাত করার কথা ঘোষণা করতে চান। সেটা হলে ভারতই হবে কোভিডের টিকা প্রস্তুতকারী প্রথম দেশ। প্রধানমন্ত্রী মোদি ওই কৃতিত্ব নিতে আগ্রহী।