করোনাভাইরাসের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান নাগাসাকির মেয়রের

নাগাসাকির মেয়র তোমিহিসা তাওউয়ে। ছবি: সংগৃহিত
নাগাসাকির মেয়র তোমিহিসা তাওউয়ে। ছবি: সংগৃহিত

জাপানের নাগাসাকি শহর আজ ৯ আগস্ট ওই শহরে আণবিক বোমা হামলার ৭৫তম বার্ষিকী পালন করেছে। পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে দিনটি পালিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরে যুক্তরাষ্ট্র আণবিক বোমা হামলা চালায়। এই হামলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ-পশ্চিম জাপানের এই শহর।

বোমা হামলার নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আজ বেলা ১১টা ২ মিনিটে নীরব প্রার্থনা করার মধ্য দিয়ে শহরের শান্তি উদ্যানে শুরু হয় অনুষ্ঠান। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে হিরোশিমার মতো নাগাসাকিতেও সীমিত রাখা হয়েছিল দর্শকদের আর অতিথির সংখ্যা। জাতিসংঘ মহাসচিবের মতো বিদেশি অতিথিরা নাগাসাকিতে ভিডিও বার্তা প্রেরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে নাগাসাকির মেয়র তোমিহিসা তাওউয়ে বলেছেন, করোনাভাইরাসের বেলায় দেখা গেছে ভয় আর আতঙ্ক আমাদের দোরগোড়ায় এসে উপস্থিত না হওয়ার আগে পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে এর পরিণতি যেমন ব্যাপক ও অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে, ঠিক একইভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি সম্পর্কে মানবজাতি এখনই সচেতন না হলে এর পরিণতি আরও ভয়াবহ হবে, যা আমাদের চরম বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। ফলে বিলম্ব না করে হিবাকুশাদের জানানো আকুতিতে সাড়া দিয়ে পরমাণুমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলায় সুস্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী ও সেই সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র যাদের নেই, সে রকম সব রাষ্ট্রের প্রতি তিনি জানান।

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু নিশ্চয়তা ভোগ করে যাওয়া দেশ জাপানের সরকারের প্রতি পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ ঘোষণার জাতিসংঘ চুক্তিতে স্বাক্ষরের আহ্বান জানিয়ে নাগাসাকির মেয়র বলেছেন, চুক্তিটি কার্যকর না হওয়ায় পরমাণু অস্ত্র হ্রাসে বিশ্বজুড়ে নেওয়া পদক্ষেপ পিছিয়ে পড়ছে। চুক্তিতে স্বাক্ষর না করা পরমাণু শক্তিধর দেশ এবং সেই সঙ্গে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা দেশ জাপান বলছে, সে রকম একটি চুক্তি স্বাক্ষরের সময় এখনো উপস্থিত হয়নি। এদের সেই যুক্তি খণ্ডন করতেই মেয়র তাওউয়ে সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার উল্লেখ করেন। ২০১৭ সালে জাতিসংঘে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অনুমোদিত চুক্তিটি প্রয়োজনীয় সংখ্যক অনুস্বাক্ষরের অভাবে এখনো কার্যকর হতে পারেনি। চুক্তিটি কার্যকর হতে হলে অন্তত ৫০টি রাষ্ট্রের অনুস্বাক্ষর প্রয়োজন। হিরোশিমায় আণবিক বোমা হামলার ৭৫তম বার্ষিকীর দিনে আয়ারল্যান্ড, নাইজেরিয়া এবং নিউয়ে গত বৃহস্পতিবার অনুস্বাক্ষরপ্রক্রিয়া শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে এখন ৫০–এর লক্ষ্যে পৌঁছাতে আরও সাতটি দেশের অনুস্বাক্ষর দরকার।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে অবশ্য তাঁর ভাষণে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করেননি। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ছিল অনেকটা যেন তিন দিন আগে হিরোশিমায় দেওয়া ভাষণের অনুলিপি। হিরোশিমার মতোই নাগাসাকিতেও তিনি উল্লেখ করেছেন যে জাপান ও তাঁর সরকার পরমাণুমুক্ত বিশ্ব গড়ে নেওয়ায় অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে কীভাবে জাপান সেই অঙ্গীকার পূরণ করছে, কিংবা ভবিষ্যতে কোন পথে অগ্রসর হওয়ার মধ্য দিয়ে জাপান তা করবে, সে রকম কোনো নির্দেশিকা আবের ভাষণে ছিল না।

নাগাসাকির স্মারক অনুষ্ঠানে ব্যতিক্রমী একটি দিক ছিল সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জাপানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাহিত্যিক কাজুও ইশিগুরোর একটি বার্তা পাঠ করা। ইশিগুরোর মা–বাবা দুজনেই নাগাসাকির মানুষ এবং ইশিগুরোর জন্মও নাগাসাকি শহরে। শৈশবে মা–বাবার সঙ্গে তিনি বিলেতে চলে যান এবং সেখানেই তাঁর লেখাপড়া ও বড় হওয়া। তবে নাগাসাকি ভুলে যায়নি শহরের এই ভূমিপুত্রকে এবং ২০১৮ সালে নাগাসাকির সম্মানিত নাগরিকের সনদ দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করা হয়। নাগাসাকির আণবিক বোমা হামলার ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে পাঠানো এক বার্তায় ইশিগুরো বলেছেন, ‘আমাদের সভ্যতা কতটা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে, তা যেন আমরা ভুলে না যাই।’