দ্রুত ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়ে কৃতিত্ব নিতে চান ট্রাম্প

নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিতে মরিয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। ছবি: রয়টার্স
নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিতে মরিয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য সারা বিশ্ব একযোগে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী বছরের শুরুর দিকেই এ সম্পর্কিত সুখবর পেতে পারে বিশ্ববাসী। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইছেন নির্বাচনের আগে একটি ভ্যাকসিন হাতে পেতে। করোনা মোকাবিলায় নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে এমনকি ভ্যাকসিন অনুমোদন প্রক্রিয়াকে যেনতেনভাবে ত্বরান্বিত করতে চাইছে তাঁর প্রশাসন, যা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে বিজ্ঞানীদের।

শত শত কোটি ডলার ব্যয়ে এবং অগণিত বিজ্ঞানী ও স্বেচ্ছাসেবীর অংশগ্রহণে গৃহীত বিশেষ উদ্যোগের সুফল পেতে বিশ্ববাসীকে খুব বেশি হয়তো অপেক্ষা করতে হবে না। আগামী বছরের শুরুর দিকেই একাধিক সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পরীক্ষার শেষ ধাপ পার হয়ে এফডিএর অনুমোদন পেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু একই সঙ্গে এই আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে যে, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কোনো খুঁত না থেকে যায়।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ভ্যাকসিন তৈরি নিয়ে প্রশাসনিক তোড়জোড় তত বাড়ছে। একটি ভ্যাকসিন আগেভাগে বাজারে এনে বর্তমান প্রশাসন এর কৃতিত্ব নিতে চায়। লক্ষ্য, আসন্ন নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা। এ অবস্থায় বিজ্ঞানীদের একটি দল শঙ্কা প্রকাশ করেছে।

গত বুধবার (৫ আগস্ট) বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের প্রায় ৪০০ জনের একটি দল এ সম্পর্কিত একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। এতে তাঁরা ভ্যাকসিন অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা-বর্জিত এবং স্বচ্ছ ও কঠোর পদ্ধতি অনুসরণের জন্য এফডিএকে আহ্বান জানিয়েছেন।

এ-বিষয়ক চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ওয়েল কর্নেল মেডিসিনের ভাইরোলজিস্ট জন পি মুর নিউইয়র্ক ডেইলিকে বলেন, ‘যে বিষয়টি এই মুহূর্তে আমাদের অনেককে শঙ্কিত করছে, তা হলো (ভ্যাকসিন অনুমোদন) পদ্ধতির রাজনীতিকীকরণ। অক্টোবরে একটি চমক দেখানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু ভ্যাকসিন অনুমোদনের বিষয়টি সঠিকভাবে করা উচিত। এই অনুমোদন পদ্ধতি যদি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের মতো হয়, তবে কতজন আর এই ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হবে? যদি ভ্যাকসিনটি মার্কিনিদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হয়, তবে তা মানুষ গ্রহণ করবে না সেভাবে। আর তেমনটি হলে এটি কাজ করবে না।’

এরই মধ্যে কিন্তু এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গ্যালাপ পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তিনজনে একজন বলেছেন, এমনকি বিনা মূল্যে দেওয়া হলেও তাঁরা এফডিএ অনুমোদিত ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী নন। এর বিপদের মাত্রাটি বোঝা যাবে অ্যান্থনি ফাউসির কথায়। গত মাসেই তিনি জানিয়েছেন, সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি যদি ৭০-৭৫ শতাংশ কার্যকর হয়, আর এক-চতুর্থাংশ মানুষ যদি এটি গ্রহণ না করে, তবে এটি কোনো কাজে দেবে না।

তবে জন পি মুরসহ বিশেষজ্ঞরা এখনো এ বিষয়ে পূর্ণ আস্থা রাখছেন ড. অ্যান্থনি ফাউসি। হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের এই সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের এ শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এখনো বলছেন যে, একটি কার্যকর ভ্যাকসিন পেতে হলে আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এ বিষয়ে এফডিএর সাবেক সহযোগী কমিশনার ও বর্তমানে সেন্টার ফর মেডিসিন ইন দ্য পাবলিক ইন্টারেস্টের প্রেসিডেন্ট পিটার পিটস বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে যে, আমাদের হাতে বেশ কিছু বিকল্প রয়েছে, যার সবগুলোই ভালো। অন্তত পাঁচটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন আমাদের হাতে রয়েছে, যেগুলো বর্তমানে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ফিজার ও মডার্নায় তৈরি ভ্যাকসিন রয়েছে। তবে এগুলো আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চের আগে আসার সম্ভাবনা নেই।’

সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের তালিকায় বেশ সামনে রয়েছে নোভাভ্যাক্স কোম্পানির তৈরি ভ্যাকসিনটি। গত মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি এ সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে, যাকে অনেক বিশেষজ্ঞই আশাব্যঞ্জক মনে করছেন। বিশেষত অ্যান্টিবডি রেসপন্সের দিক থেকে একে অন্যগুলো থেকে এগিয়ে রাখছেন মুর। মুরের ভাষায়, ‘অ্যান্টিবডি তৈরির দিক থেকে নোভাভ্যাক্সের ভ্যাকসিনটিকেই আমি এগিয়ে রাখব।’

তবে এ ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন মত দিচ্ছেন মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের ভাইরোলজিস্ট ফ্লোরিয়ান ক্র্যামার। তিনি বরং অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনটিকে মূল হিসেবে এবং নোভাভ্যাক্সের ভ্যাকসিনটিকে ‘অ্যান্টিবডি বুস্টার’ হিসেবে ব্যবহার করতে চান। তবে এই পুরো ব্যাপারটিই নির্ভর করছে পরীক্ষার ওপর। এ ক্ষেত্রে অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে এফডিএর। এ ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের তাড়াহুড়ো বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।

ক্র্যামারের মতে, হাতে অনেকগুলো বিকল্প থাকাটা নিঃসন্দেহে বড় বিষয়। কিন্তু এটা মনে রাখা জরুরি যে, এই ভ্যাকসিনকে অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে। তা না হালে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা ঠেকানোটা কঠিন হয়ে পড়বে। অনুমোদনের পর ভ্যাকসিনটি অন্তত ৩০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। ফলে এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন জরুরি।

বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিউইয়র্কের স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র এরিন সিল্ক নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজকে বলেন, সবকিছুর দিকে নজর রাখা হচ্ছে। ফেডারেল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তারা বলছে, শুরুতে ভ্যাকসিনের ব্যবহার সীমিত রাখা হবে।