মজার খেলা অ্যাম্বিগ্রাম, বর্ণ ও ছবির বর্ণচুরি

বিখ্যাত লেখক ড্যান ব্রাউনের অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস -এ প্রথম জানতে পারি অ্যাম্বিগ্রাম সম্পর্কে। একটু রহস্যময়তা তো ছিলই, সে কারণেই ছিল জিনিসটা দেখার বিপুল আগ্রহ। আর গুগল চৌধুরীর এই যুগে এসে ব্যাপারটা অনেক ইজি। চৌধুরীর কাছে বলতেই, দু-একটি নয়, শ-খানেক পথের দিশা পেয়ে গেলাম যেখান থেকে জানা যাবে অ্যাম্বিগ্রাম সম্পর্কে। ব্যস আর কী!

সোজা বাংলায় যদি বলতে হয় অ্যাম্বিগ্রাম জিনিসটা কী, তাহলে বলতে হবে, এটা বর্ণ কিংবা ছবি নিয়ে একধরনের লুকোচুরি খেলা। একটি কৌশলগত আর্ট, যেখানে একই জিনিস ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখলেও একই রকম লাগে কিংবা একই জিনিসের মধ্যে আরেকটা জিনিস লুকিয়ে থাকে। যেই লাউ সেই লাউ-ই, সেটা কিন্তু কদু হয়ে যাবে না। অর্থাৎ উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে যেভাবেই দেখা হোক না কেন, একই রকম দেখাবে। মোটামুটি এই হচ্ছে প্রাথমিক অ্যাম্বিগ্রাম। পরে অবশ্য এই নিয়ে অল্পবিস্তর গবেষণাও হয়েছে, অনেকগুলো ধরন-ধারণও আবিষ্কার হয়েছে। চাইলে অ্যাম্বিগ্রামকে চোখ বন্ধ করে ক্যালিগ্রাফি বলা যায়, বিশেষ ধরনের ক্যালিগ্রাফি। এটাকে ইংরেজিতে ফ্লিপস্ক্রিপ্টও বলে। কারণ শব্দটাকে যদি ফ্লিপও করা হয় একই রকম দেখতে হবে।

১৮৯৩ সালে পিটার নুয়েল নামক একজন আর্টিস্টকেই ধরা হয় অ্যাম্বিগ্রামের উদ্ভাবক হিসেবে। তিনি অবশ্য বর্ণ নিয়ে সেটা শুরু করেননি। তিনি মার্ক টোয়েন ও লুই ক্যারোলের বইয়ের ইলাস্ট্রেশনেই প্রথম এই ধরনের একটি কাজ করেন। একই ইলাস্ট্রেশন সোজা দেখলে এক রকম, আবার ঘুরিয়ে দেখলে আরেক রকম মনে হয়। এই রকম আমরাও নিশ্চয় অনেক দেখেছি, নিজেরাও আঁকতে পারি। একই মুখে হাসি এবং কান্না কিংবা সোজা দেখলে বুড়ো আবার ঘুরিয়ে দেখলে ইয়াং, স্কুলে এই ধরনের ছবি এঁকে অনেকেই নিশ্চয় বন্ধুদের তাক লাগিয়েছ। একই জিনিসটা যদি বর্ণ দিয়ে করা যায়, সেটাই অ্যাম্বিগ্রাম।

১৯০৮ সালে ব্রিটিশ ম্যাগাজিন  দ্য স্ট্যান্ড -এই ধারাবাহিকভাবে অ্যাম্বিগ্রাম নিয়ে ছাপা হতে থাকে। এই ম্যাগাজিনে প্রথম প্রকাশিত হওয়া অ্যাম্বিগ্রামটি ছিল   | আস্তে আস্তে এরপর এটি জনপ্রিয় হতে থাকে, অনেকেই এটা নিয়ে কাজ করেন। সিম্বলিজমেও এটি চলে আসে। রোটেশনাল অ্যাম্বিগ্রাম তৈরি হয়, মিরর অ্যাম্বিগ্রাম তৈরি হয়। ডুয়াল ওয়ার্ড অ্যাম্বিগ্রামও আছে। থ্রিডি অ্যাম্বিগ্রাম আছে। ডগলাস আর হফসস্ট্যাডার নামের এক ভদ্রলোক থ্রিডি অ্যাম্বিগ্রাম ব্যবহার করেন তাঁর বইয়ে।

এরপর আরও অনেক মজার মজার বুদ্ধিদীপ্ত অ্যাম্বিগ্রামের প্রচলন হয়েছে। এক ধরনের অ্যাম্বিগ্রাম আছে, যেটাকে চেইন অ্যাম্বিগ্রাম বলে। যেখানে এক বা একাধিক শব্দ ঘুরিয়ে বৃত্তাকারে লেখা হয় এবং যেখান থেকেই পড়া হয় না কেন একই জিনিস পড়া যায়।

আরেক ধরনের অ্যাম্বিগ্রাম আছে যাকে বলে ফিগারড গ্রাউন্ড অ্যাম্বিগ্রাম। এটিও খুব মজার। একটা শব্দের মাঝের ফাঁকা স্থানগুলোকে এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে সেখানেও আরেকটা শব্দ তৈরি হয়।

মাল্টিল্যাঙ্গুয়াল অ্যাম্বিগ্রাম রয়েছে, যেখানে দুভাবে দেখলে দুই ভাষায় লেখা শব্দ দেখা যাবে। এ ছাড়া পারসেপচুয়াল শিপট, রোটেশনাল, স্পেস ফিলিং, স্পিনোনিম, সিমবায়োটোগ্রাম এই রকম নানা নামে অ্যাম্বিগ্রাম করা যায়।

এখন তো অ্যাম্বিগ্রাম করে দেয় এমন অনেক সফটওয়্যারই ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। নিজের নাম লিখে দিলেই চলে আসে। কিন্তু বাংলায় এখনো এই রকম কোনো সফটওয়্যার নেই। সে ক্ষেত্রে হাতে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। যদিও বিষয়টা যত সহজে বলছি ততটা সহজ নয়।

মজার বিষয় হচ্ছে, অ্যাম্বিগ্রাম তৈরির জন্য কোনো নির্দিষ্ট নিয়মকানুন নেই। বাঁচা গেল, তাই না! এখন তোমরাই বিভিন্ন বাংলা শব্দ, বাংলাদেশের বিভিন্ন আইকনিক ছবি, ব্যক্তির ছবি দিয়ে মজার মজার অ্যাম্বিগ্রাম তৈরি করে অন্যদের তাক লাগিয়ে দাও।

ওয়েবে ফ্রি অ্যাম্বিগ্রাম করার কয়েকটি ঠিকানা:  flipscript.com, wowtattoos.com