১৩-এর ১৩টি আবিষ্কার

কখনো হয়তো ভাবোনি, এমন একটা কিছু তোমার প্রয়োজনকখনো হয়তো কল্পনাও করোনি, এমন চমক লাগানো প্রযুক্তি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যদারুণ সব আবিষ্কার হয়েছে এ বছর২০১৩ সালের সেরা আবিষ্কারগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে  টাইম ম্যাগাজিন সেখান থেকে বাছাই করা কিছু আবিষ্কারের কথা ছাপা হলো তোমাদের জন্য

সনি স্মার্ট লেন্স

 আয়না ব্যবহার না করে, তুমি কি একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন দিয়ে ফোনটির নিজের একখানা ছবি তুলতে পারবে? ভাবছ কি সব আবোলতাবোল বলছি! হুম, সনির স্মার্ট লেন্সের সাহাযে্য এ-ও সম্ভব। কারণ, এই লেন্স আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোকে ‘ভিউ-ফাইন্ডার’ হিসেবে ব্যবহার করে। সহজ করে বললে সনি  DSC-QXroo একটি  3.6x অপটিক্যাল জুমসম্পন্ন ডিজিটাল ক্যামেরা, যা মুঠোফোনের মেমোরিতে ছবি ধারণ করে। যেন মুঠোফোনের ক্যামেরাটাই টুক করে লাফ দিয়ে বাইরে চলে এসেছে, সেই সঙ্গে হয়েছে আরও শক্তিশালী! অর্থাৎ এর সাহাযে্য শুধু লেন্সটা হাতে নিয়েই দিব্যি ছবি তোলা যাবে, মুঠোফোন পকেটে থাকলেও চলবে। নতুন ধরনের এই স্মার্ট লেন্সের দামটাও জেনে নাও। ৪৯৯ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৩৯ হাজার টাকা!

 মিশন আর

 মিশন আর-কে বলা হচ্ছে দানবীয় যন্ত্র। ১৬০ হর্সপাওয়ারসম্পন্ন এই মোটরসাইকেলটিকে চাইলে দুই চাকার রকেটও বলতে পারো! এর গতি মাত্র তিন সেকেন্ডে ০ থেকে ৬০ মাইল/ঘণ্টায় উন্নীত হতে পারে। সর্বোচ্চ গতিশক্তি প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ মাইল। সবচেয়ে অবাক করা ব্যপার হলো, এটি চলে ব্যাটারির সাহাযে্য। অর্থাৎ তেলবিহীন এই ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। ঘর থেকে একবার পুরো ব্যাটারি চার্জ করে বের হলে ১৪০ মাইল পথ অতিক্রম করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, একে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডিজিটাল টাচ স্ক্রিনও রয়েছে।

 প্লাস পুল

 নদীর মাঝখানে সুইমিংপুল—এমন আজব কথা কখনো শুনেছ? প্লাস পুল তেমনই একটা কিছু। প্লাস-চিহ্নের মতো দেখতে এই পুলে একটা ডুব দিয়ে আসতে হলে তোমাকে যেতে হবে নিউইয়র্ক। সেখানকার ইস্ট রিভারের মাঝখানে খানিকটা জায়গা দখল করে আছে টলটলে পানির এই সুইমিংপুল। পুলের উপকারিতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নির্মাতারা বলছেন, এটি হলো এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো একটি ব্যাপার। প্লাস পুল নদীর পানি পরিশোধিত করবে, আবার নিউইয়র্কবাসীকে নদীর মাঝখানে পরিষ্কার পানিতে সাঁতার কাটার একটা সুযোগও করে দেবে। শহরের লোকজন বলছেন, গত ১০০ বছরে এই প্রথম তাঁরা পরিষ্কার নদীর পানিতে সাঁতার কাটার সুযোগ পেলেন। ভেবে দেখো, আমাদের বুড়িগঙ্গায় যদি এমন একটা সুইমিংপুল তৈরি করা যায়, কী দারুণ হবে!

 গেমের ভেতর ডুব

 অকালাস রিফট তোমাকে নিয়ে যেতে পারে গেমের জগতে। একে বলা হচ্ছে ‘ভাচু‌র্য়াল রিয়েলিটি হেডসেট’। হেডসেটটি একবার মাথায় লাগিয়ে নিলেই আশপাশটা চট করে বদলে যাবে, তুমি ঢুকে পড়বে গেমের ভেতর! তবে অকালাস রিফট ব্যবহার করে খেলার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আশপাশের কাচের জিনিসপত্র একটু দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। অতি উত্তেজনার বশে কেউ যদি গেমের ভেতরের মারামারি বাইরেও করে ফেলে, বিপত্তি ঘটতে পারে।

 জমবে রেসিং!

 একটু আগেই বলছিলাম গেমের ভেতর ঢুকে যাওয়ার প্রযুক্তির কথা। এবার বলি, কীভাবে গেমের মজাটা বাইরে নিয়ে আসতে পারো। আইফোন বা আইপ্যাডে ‘কার রেসিং গেম’ খেলতে যারা ভালোবাসো, তাদের জন্য মহা সুখবর! স্যান ফ্রান্সিসকোর একটি প্রতিষ্ঠান এমন ধরনের খেলনা গাড়ি নির্মাণ করেছে, যেগুলো আইফোন বা আইপ্যাডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গেইমের ভেতরের ‘রেসিং কার’গুলোর মতোই প্রচণ্ড গতিতে ছুটতে পারে এই খেলনা গাড়ি।

 অদৃশ্য ভবন

 উঁচু উঁচু ভবন এখন আর আকাশ ঢেকে দিতে পারবে না। তাই বলে ভবনগুলো ভেঙে ফেলতে হবে, তা নয়। চোখের সামনে থেকে একটা আস্ত দালান বেমালুম গায়েব করে ফেলার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন কোরিয়ান বিজ্ঞানীরা। ভবন থাকবে ভবনের জায়গায়, কিন্তু চোখে দেখা যাবে না। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ার টাওয়ার ইনফিনিটিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য চোখের সামনে থেকে হাপিশ হয়ে যায় এই টাওয়ার। মজার ব্যাপার হলো, পথচারীরা দেখতে না পেলেও পাখি আর বিমান আরোহীরা যেন টাওয়ারটি দেখতে পান, সে ব্যবস্থাও করা আছে। ভবন অদৃশ্য করার এই প্রযুক্তি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে এলইডি টেকনোলজি এবং বিশেষ ধরনের এইচ ডি ক্যামেরা।

 পাসওয়ার্ড বটিকা

 পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়ার ভয় আর নেই। এসে গেছে পাসওয়ার্ড পিল! বটিকা গিলে নিলেই ভুলে যাওয়া পাসওয়ার্ড মনে পড়ে যাবে, ব্যাপারটা তা নয়। বরং এই পিল ব্যবহার করলে পাসওয়ার্ড মনে রাখার কোনো প্রয়োজনই পড়বে না। তুমি নিজেই হয়ে যাবে একটা জলজ্যান্ত পাসওয়ার্ড! এই বটিকা মানুষের শরীরের ভেতর ১৮ বিটের একটি সিগন্যাল তৈরি করবে। শরীর থেকে নির্গত সেই সিগন্যালই মুঠোফোন বা কম্পিউটার পাসওয়ার্ড হিসেবে গ্রহণ করে। ইতিমধ্যেই গুগল এর স্বত্ব কিনে নিয়েছে। কদিন পরই হয়তো জিমেইলের অ্যাকাউন্ট খুলতে কোনো পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবে না, বটিকা সেবন করলেই চলবে!

 ত্রিমাত্রিক অঙ্কন

 কলমটির নাম থ্রিডুডলার। কিছু লিখলে বা আঁকলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ত্রিমাত্রিক ছবি হয়ে যায়। উদ্ভাবন করেছেন ম্যাক্সওয়েল বগু, পিটার ডিলওয়র্থ এবং ডেনিয়েল কোয়েন। অনলাইনে এটি কিনতে চাইলে ৯৯ ডলারে (প্রায় আট হাজার টাকা) প্রি-অর্ডার করা যাবে।

 কৃত্তিম স্মৃতি

 ধরো, তুমি কখনো প্যারিসে যাওনি। সদ্য প্যারিস ঘুরে এসেছে এমন কারও স্মৃতি তোমার মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হলো। তোমার দিব্যি মনে হবে, তুমিও বুঝি এই একটু আগেই প্যারিস থেকে ঘুরে এসেছ! আবিষ্কারক, এমআইটির বিজ্ঞানীরা মজার এই আবিষ্কারের নাম দিয়েছেন প্রজেক্ট ইনসেপশন। হ্যাঁ, লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর ইনসেপশন ছবি থেকেই নামটি ধার করা হয়েছে। শরীরের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ব্যথা পাওয়া একটি ইঁদুরের স্মৃতি তাঁরা প্রবেশ করিয়েছিলেন একটি সুস্থ ইঁদুরের মস্তিষ্কে। দেখা গেল, সুস্থ ইঁদুরটিও মনে করছে, তার শরীরের নির্দিষ্ট জায়গাটিতে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর সাহাযে্য সুখ, আনন্দ, মজার স্মৃতি মানুষের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিয়ে ব্যথা, কষ্ট, হতাশার স্মৃতিগুলো মুছে ফেলা যাবে। কী চমৎকার ব্যাপার!

 ভরের আলো ঘরে

 বিদ্যুৎ বা তেল ছাড়াই জ্বলবে আলো। স্রেফ এক ব্যাগ পাথর, বালু বা পানির ভর ব্যবহার করেই বাতি জ্বালানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন ডেসিওয়াটের প্রকৌশলীরা। একে বলা হচ্ছে ভর-বাতি। বাতির সঙ্গে থাকা নির্দিষ্ট স্থানে খানিকটা ভর ঝুলিয়ে দিলেই ভর-বাতি জ্বলবে প্রায় ২৫ মিনিট। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, বিজ্ঞানীরা ভরশক্তিকে আলোকশক্তিতে রূপান্তর করার উপায় বের করেছেন।

 সূর্যের আলোয় গাড়ি

 প্রথম দেখায় মনে হতে পারে, গাড়িটি বুঝে উড়ে এসেছে! গাড়ির দুপাশে ছড়িয়ে পড়া বস্ত্তটিকে অনেকটা ডানার মতোই দেখায়। কিন্তু ডানা নয়। মূলত এটি সোলার প্যানেল। ভাবছ এই বিশাল আকৃতির সোলার প্যানেল ঘাড়ে নিয়ে এ ব্যাটা চলে কীভাবে? মজার ব্যাপার হলো, এই পুরো সোলার প্যানেলটাকে ভাঁজ করে রেখে দেওয়া যায় গাড়ির পেছনে। আবার ইচ্ছা হলেই সোলার প্যানেল ব্যবহার করে গাড়িটি চার্জ করে নেওয়া যায়। ভলভো কোম্পানি তাদের এই নতুন গাড়ির নামকরণ করেছে  V60 হাইব্রিড।

 উদ্ধারকারী রোবট

 ধসে পড়েছে কোনো ভবন কিংবা কংক্রিটের আড়ালে আটকা পড়ে গেছে কোনো মানুষ—এমন বিপদ থেকে উদ্ধার করতে তৈরি করা হয়েছে অ্যাটলাস রোবট। এই রোবট লেসার রশ্মি দিয়ে আটকে পড়া মানুষকে খঁুজতে পারে, দেয়াল ভাঙতে পারে, এমনকি হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতেও পারে।

 অন্ধজনে আলো

 আগু‌র্ুস টু নামে একটি বিশেষ ধরনের সানগ্লাস। এতে সংযুক্ত রয়েছে কৃত্তিম রেটিনা এবং ভিডিও ইউনিট। সানগ্লাসটি চোখে পড়লে যারা রেটিনিটিস পিগমেনটোসার মতো কঠিন চোখের ব্যাধিতে আক্রান্ত, তাঁরা আলো এবং অন্ধকারের পার্থক্য বুঝতে পারবেন। আশপাশের অবয়বগুলোও ধরতে পারবেন। অন্ধ চোখে আলো পৌঁছে দিতে এ আবিষ্কার বিরাট অবদান রাখবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

 গ্রন্থনা: মো. সাইফুল্লাহ