গলফের অ, আ...

গলফ কি খুব জটিল খেলা?

সিদ্দিকুর, টাইগার উডস, ররি ম্যাকইলরয় পর্যন্ত ঠিক আছে। এঁরা যে গলফ খেলেন সেটা সবারই জানা। কিন্তু পার, বার্ডি, বগি...? অচেনা সব শব্দ দিয়েই যে ঠাসা থাকে গলফের প্রতিবেদন। তা ছাড়া স্কোরিংটাও কি জটিল নয়? পরিচিত প্রায় সব খেলাতেই যেখানে স্কোর বেশি হলে ভালো, এখানে যে পুরোই উল্টো।

গলফ ব্যাগ
গলফ ব্যাগ

আসলে খেলাটা এখনো গণমানুষের হয়ে ওঠেনি বলেই এমনটা মনে হচ্ছে। তুলনা করলে ক্রিকেটের চেয়ে কিন্তু গলফ অনেক অনেক সরল একটা খেলা। আর স্কোরিংটা তো ক্রিকেটের তুলনায় জলবৎ তরলং। ক্রিকেটের জটিল হিসাব-নিকাশই যখন সহজেই করে ফেলতে পারি, গলফটাও আমরা বুঝে নিতে পারব দ্রুত।

গলফ বল
গলফ বল

একটি লাঠিজাতীয় বস্ত্ত গলফের পরিভাষায় যেটা পরিচিত ক্লাব নামে সেটা দিয়ে বলটাকে পিটিয়ে নির্দিষ্ট গর্তে (হোল) ফেলাটাই গলফ। বলটাকে যত কম চেষ্টায় গর্তে ফেলা যায় ততই ভালো। গলফের আসল কথাই এটা।

গলফ খেলার জায়গাটি পরিচিত গলফ কোর্স নামে। অন্য অনেক খেলার মতো গলফ কোর্সের আকার ও আকৃতি নির্দিষ্ট করা নেই। তবে প্রতিটি কোর্সেই হোল থাকে অনেকগুলো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটি কোর্সে ১৮টি করে হোল থাকে। কিছু কিছু কোর্সে অবশ্য নয়টি হোলও থাকে। একজন গলফার প্রতিটি হোলেই প্রথম শটটা খেলেন ‘টি’ থেকে। সেখান থেকেই বলটাকে পাঠানো হয় হোলের দিকে। হোল বা গর্তটা আবার থাকে গ্রিন নামে পরিচিত মিহিন ঘাসের অঞ্চলে।  টি আর গ্রিনের মাঝের অঞ্চলটার নাম ফেয়ারওয়ে টি থেকে বলটাকে গ্রিনে পাঠানোর পর বদলে যায় ক্লাবের ধরন। এবার পাটার দিয়ে বলটাকে  হোলে ‘পাট’ করতে হয়। বলটাকে গর্তে ফেলাই হলো পাট। সব মিলিয়ে টি থেকে হোলে বল ফেলতে যতগুলো শট খেলতে হয় হিসাব রাখা হয় সেটারই। এভাবে সব হোলের স্কোর যোগ করেই চূড়ান্ত হয় দিনের হিসাব। আর চার দিনের স্কোর যোগ করেই পাওয়া যায় চূড়ান্ত ফলাফল। জয়ী হন সবচেয়ে কম শট খেলা গলফার।

ড্রাইভার
ড্রাইভার

এটা তো বোঝানো গেল। কিন্তু ওই যে লেখা হয় পারের চেয়ে এত শট কম খেলেছেন অমুক গলফার, পারের চেয়ে বেশি খেলেছেন তমুক, এই পারটা কী জিনিস? পার মানে আদর্শ। একটা হোল খেলতে অভিজ্ঞ কোনো গলফারের সাধারণত যতগুলো স্ট্রোক বা শট খেলতে হয় সেটার আদর্শ মানই পার। যেমন যে হোলটার দৈর্ঘ্য ২২৫ মিটার বা তার কম সেটা ৩ পারের হোল। অর্থাৎ ভালো কোনো গলফারের ওই হোল খেলতে ৩ শটের বেশি লাগা উচিত নয়। হোলের দৈর্ঘ্য বেড়ে গেলে পারও বেড়ে ৪, ৫ হয়ে যায়। এভাবে এক দিনে ১৮টি হোল পুরো করতে সাধারণত ৭২ শটের প্রয়োজন, কিছু কিছু কোর্স অবশ্য ৭১ শটেরও হয়। সিদ্দিকুর পারের চেয়ে ৫ শট কম খেলে প্রথম রাউন্ড শেষ করেছেন, এর মানে হলো প্রথম দিনে তাঁকে ৬৬ অথবা ৬৫ শট খেলতে হয়েছে। বন্ধনীতে স্কোরের আগে যোগ বা বিয়োগচিহ্ন ব্যবহার করেই বোঝানো হয় গলফারকে পারের চেয়ে বেশি না কম শট খেলতে হয়েছে।

বাংলাদেশের গলফ তারকা সিদ্দিকুর রহমান
বাংলাদেশের গলফ তারকা সিদ্দিকুর রহমান

ক্রিকেটে যেমন বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি আছে, গলফেও তেমনি আছে বার্ডি, ইগল, বগি। একটি হোল খেলতে পারের চেয়ে কত শট কম বা বেশি খেলতে হয়েছে সেটা বোঝা যায় এই শব্দগুলো দিয়ে। কেউ যদি পারের চেয়ে এক শট কম খেলেই বলটাকে গর্তে ফেলতে পারেন তবে সেটা বার্ডি, দুই শট কম খেললে সেটা হয় ইগল, তিন শট কম খেললে আলবাট্রোস, চার শট কম খেললে সেটা কন্ডর। আলবাট্রোস ও কন্ডর অবশ্য খুবই দুর্লভ। অন্যদিকে পারের চেয়ে এক শট বেশি খেলাটা বগি, দুই শট বেশি হলে ডাবল বগি, সংখ্যাটা তিন শট হলে ট্রিপল বগি। আবার কেউ যদি এক শটেই টি থেকে গর্তে বল ফেলে দেয় সেটাকে বলা হয় হোল ইন ওয়ান। অবশ্য ৩ পারের হোলেই শুধু সম্ভব এটা।

গলফ কোর্স
গলফ কোর্স

এবার জেনে নিই আরও কিছু দরকারি তথ্য। টি থেকেই যে শুরু হয় প্রতিটি হোলের খেলা সেটা তো আগেই জেনেছি।  টি ও গ্রিনের মাঝের অঞ্চলটা ফেয়ারওয়ে । প্রথম শটটা যাতে ফেয়ারওয়েতে থাকে গলফাররা সেই চেষ্টাই করেন। খেলাটাকে কঠিন করতে অনেক হোলে কিছু প্রতিবন্ধকও থাকে। সাধারণত ছোট জলাশয় ও বালিয়াড়ি দিয়েই তৈরি হ্যাজার্ড হিসেবে পরিচিত প্রতিবন্ধকগুলো। গলফাররা সাধারণত এড়িয়েই চলতে চান এগুলোকে। বালিয়াড়ি থেকে বল বের করাটাই কঠিন, পানিতে পড়লে তো এক শট জরিমানা দিয়েই জলাশয়ের পাশ থেকে নিতে হয় শট।

ক্রিকেটের বিভিন্ন শটের মতো গলফের শটের নানা নাম আছে। আর শটগুলো খেলার জন্যও ব্যবহার করা হয় ভিন্ন ভিন্ন ক্লাব। টি থেকে নেওয়া লম্বা শটটার নাম ড্রাইভ, খেলা হয় ড্রাইভার দিয়ে। এরপর ফেয়ারওয়ে থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে নেওয়া শটটাকে বলা হয় অ্যাপ্রোচ শট, খেলা হয় আয়রন দিয়ে। আর গ্রিনে বলটাকে গর্তে ঠেলে দিতে যে পাটার ব্যবহার করা হয় সেটা তো আগেই জেনেছি।

গলফারের সঙ্গী ক্যাডির ঝোলাতে ১৪ রকম পর্যন্ত ক্লাব থাকতে পারে। 

ওয়াটার হ্যাজার্ডসহ একটি গলফ কোর্স
ওয়াটার হ্যাজার্ডসহ একটি গলফ কোর্স

 কাট মিস কী?

 বেশির ভাগ টুর্নামেন্টেই দুই রাউন্ড শেষে খেলোয়াড়ের সংখ্যাটা নামিয়ে আনা হয় ৭০-এ। লিডারবোর্ডের প্রথম ৭০ জনেরই সুযোগ হয় পরের দুই রাউন্ড খেলার। বাছাই করা এই খেলোয়াড়েরা হলেন ‘কাট’। আর যাঁরা থাকতে পারেন না প্রথম ৭০-এ তাঁরাই মিস করেন কাট।