খবর আছে!

কত বিচিত্র সব খবর! না জানলে ক্ষতি নেই সেটা ঠিক। তবু জেনেই দেখো। অন্তত বন্ধুদের সঙ্গে চোখ বড় বড় করে গল্প করার মতো কিছু মজার বিষয় পেয়ে যাবে!

 জাদুঘরের পথে তোকুসাতস

শহর লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে কোনো বিশালকায় দানব! হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ছে দালানগুলো! —সিনেমায় এমন দৃশ্য দেখে একসময় লোকের পিলে চমকে যেত। ছেলে-বুড়ো সব ভ্রু কুঁচকে ভাবত, ‘কী সাংঘাতিক ব্যাপার! কেমন করে বানাল এসব?’ এখনকার দিনে ব্যাপারটা একটু অন্য রকম। পিলে চমকে যায় ঠিকই। কিন্তু কেমন করে বানাল—সে প্রশ্নের একটা সহজ উত্তর নিশ্চয়ই তোমার কাছেও আছে। তুমি হয়তো হাই তুলতে তুলতে বলবে, ‘এ আর এমন কী? সব কম্পিউটারের ভিজুয়াল ইফেক্টের কাজ।’

কিন্তু একসময় যখন কম্পিউটারের এত কারিকুরি ছিল না, তখন তোকুসাতসুই ছিল ভরসা। তোকুসাতসু একটা জাপানি শব্দ। এর বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘বিশেষ চিত্রায়ন’। ১৬ শতকের শুরুর দিকে জাপানে ‘কাবুকি’ নামে একধরনের নৃত্যনাট্য হতো। কিম্ভূতকিমাকার সাজ-পোশাকে নাটকের কলাকুশলীরা ‘কাইজু’ (জাপানি শব্দ। যার অর্থ অতিপ্রাকৃত প্রাণী) সাজত। ১৯৫৪ সালে  গডজিলা  ছবির মাধ্যমে ‘কাইজু’র অভিষেক হয় চলচ্চিত্রে।

বুদ্ধিটা প্রথম আসে  গডজিলা র পরিচালক ইশিরো হোন্ডার মাথা থেকে। শুটিং ইউনিটের একজনকে পরানো হয়  গডজিলা র কস্টিউম। খেলনার মতো করে তৈরি হয় ছোট ছোট বাড়ি, গাড়ি, ট্রেন এমনকি মানুষও! ব্যস, বাকিটা ক্যামেরার কারসাজি। পর্দায় দেখে আমরা ভাবি, ইয়া বড় দানবটা বুঝি বাড়িঘরগুলো সব ভেঙেচুরে ফেলছে। দানবের মুখোশের আড়ালে থাকে মানুষ, আর বাড়িঘরগুলোও আদতে পুঁচকে আকৃতির। ক্যামেরায় যেহেতু সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাপারগুলোও ধরা পরে, তাই খুদে সংস্করণগুলোও তৈরি করতে হতো একেবারে নিখঁুতভাবে। পরবর্তী সময়ে একই পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছে বহু জনপ্রিয় হলিউডি সিনেমায়।

এখনকার অ্যানিমেশনের যুগে তোকুসাতসু যে জাদুঘরের পথ ধরবে, সেটাই স্বাভাবিক। মজার ব্যাপার হলো, জাপানের কিছু কিছু প্রোডাকশন হাউস এখনো তোকুসাতসু ব্যবহার করে। টিভি সিরিজ পাওয়ার রেঞ্জার্সেও ভিজুয়াল ইফেক্টের চেয়ে তোকুসাতসুর ব্যবহারই বেশি।

তুমিও হয়তো কাল্পনিক কোনো জীবজন্তু নিয়ে দারুণ এক সিনেমা নির্মাণের কথা ভাবছ। ভিজুয়াল ইফেক্ট ব্যবহারের খরচাপাতির কথা ভাবতে গিয়ে যদি থমকে যাও, তোকুসাতসু ব্যবহার করে দেখতে পারো।

 জাহাজ ওড়ে আকাশে

 জাহাজ-ঘুড়ি নাকি ঘুড়ি-জাহাজ, কী নামে ডাকি বলো তো? নাম দেওয়ার আগে জেনে নাও, দেখতে জাহাজের মতো এই ঘুড়ি আকাশে চমৎকার উড়তে জানে। নিউইয়র্কের হ্যাপটিক ল্যাবে তৈরি হয় এই ঘুড়ি। এমিলি ফিসচার নামে একজন ডিজাইনার পাক্কা দুই বছর খেটেখুটে এর নকশা তৈরি করেছেন। চাইলে বাংলাদেশে বসেও এই ঘুড়ি সংগ্রহ করতে পারো। দাম পড়বে ৪০ ডলার (প্রায় তিন হাজার টাকা)। দুঃখের ব্যাপার হলো, জাহাজ-ঘুড়ি নিজেই উড়ে উড়ে কিংবা ভেসে ভেসে তোমার কাছে পৌঁছতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ দেশে পৌঁছানোর পরিবহন খরচটাও তাই তোমাকেই বহন করতে হবে।

 ফিরে এল টাইপরাইটার

 বলছিলাম তোকুসাতসুর জাদুঘর-যাত্রার কথা। টাইপরাইটারের গল্প আবার উল্টো। জাদুঘর যেতে যেতেও রীতিমতো ‘ইউটার্ন’ নিয়ে ফিরে এসেছে টাইপরাইটার। রাশিয়ান এবং ভারতীয় কূটনীতিকেরা সে আভাসই দিচ্ছেন। নিউইয়র্কের ভারতীয় দূতাবাসে ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ কাজে কম্পিউটারের বদলে টাইপরাইটারের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ভাবছো হোমরাচোমরা গোছের কূটনীতিকেরা ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’ নীতিতে বিশ্বাসী। তা নয়। কম্পিউটারে লিখতে গেলেই যে হার্ডডিস্কের ভেতর চুপিচুপি ‘চোর’ ঢুকে পড়ে! টুক করে টুকে নেয় গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য! হ্যাঁ, হ্যাকারদের ভয়েই কম্পিউটারবিদ্বেষী হয়ে উঠেছেন তাঁরা। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ‘উইকিলিকস-কীর্তি’র পর আরও ভয় ঢুকে গেছে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মনে।

‘থাক বাপু, অত ডিজিটাল হয়ে কাজ নেই। আমরা বরং টাইপরাইটারেই লিখি। কম্পিউটারে লিখতে গিয়ে পরে কি-না-কি গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যায়, বলা তো যায় না!’—এই হলো তাঁদের বক্তব্য।

 আজব আবিষ্কার

 বলব কিছু আজব আবিষ্কারের কথা। শুরু করি ‘ওয়াটারমেলন স্ট্রলার’ দিয়ে। খটমটে নাম দেখে ভড়কে যেয়ো না। এটা মূলত একধরনের খুদে গাড়ি, যা দিয়ে তরমুজ পরিবহন করা হয়। ছোট্ট, ‘কিউট’ দেখতে এই গাড়িতে তুমি একটিমাত্র তরমুজ পরিবহন করতে পারবে। গাড়ির ভেতর তরমুজটি ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থাও আছে। আবিষ্কারকের দাবি—গরমের দিনে তরমুজসমেত পিকনিকে যেতে চাইলে এই গাড়ি ব্যবহার করতে পারো। দাম? ২০০ ডলার (প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার টাকা)!

এবার পরিচিত হও ‘স্নোবল মেকার’-এর সঙ্গে। নাম শুনেই হয়তো বুঝে ফেলেছো, এই যন্ত্র দিয়ে তুষারের বল তৈরি করা যায়। তা যন্ত্রখানা কী কাজে লাগে? এমন ‘কঠিন’ প্রশ্ন আমাকে করো না! তবে আবিষ্কারকের হয়ে প্রশ্নের উত্তর কিছুটা অনুমান করতে পারি। ‘কেন? বরফের দিনে বন্ধুরা মিলে কোথাও বেড়াতে গেলে স্নোবল মেকার অবশ্যই সঙ্গে নেবেন। তুষার দিয়ে বল বানাবেন। তারপর একে অপরের গায়ে ছুড়ে মারবেন।’ অত্যন্ত ‘সিরিয়াস’ ভঙ্গিতে এমনটাই হয়তো বলবেন আবিষ্কারক!

উদ্ভট আবিষ্কারের তালিকায় ওপরের দিকে থাকবে ফ্লিজ। আমরা সাধারণত সাইকেলে চড়ে অভ্যস্ত। সাইকেলের মতো দেখতে এই বাহন উল্টো তোমার ঘাড়ে চেপে বসবে! অনেকটা ‘সাইকেলে চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল’ ধরনের ব্যাপার। ফ্লিজ আবিষ্কার হলেও এটি আদতে কী কাজে আসবে, তা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। হেঁটেই যদি চলতে হবে, তাহলে আগে-পিছে দুটো চাকা কেন বাপু! ফ্লিজের একটা বাংলা নাম দেওয়ার দায়িত্বটা তোমার ওপরই ছেড়ে দিলাম।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট