ঘড়ি কীভাবে কাজ করে

পৃথিবীতে দুই ধরনের প্রাণী আছে। সময় জানতে প্রাণীদের একভাগ ঘড়ি ব্যবহার করে আর আরেক ভাগ প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। এভাবে ভাগ করলে যারা ঘড়ি ব্যবহার করে, তাদের বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করা জীববিজ্ঞানীদের কাছে একেবারে ভাত-মাছ হয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। তবে আপাতত সেই তাত্ত্বিক গবেষণায় না গিয়ে সাধারণভাবে বলা যায়, আজকের দুনিয়ার আমজনতার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যন্ত্রের নাম কম্পিউটার নয়, সম্ভবত ঘড়ি। কিন্তু এই ঘড়িকে প্রাচীনকাল থেকে অনেক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের চেহারায় আসতে হয়েছে। শুরুতে সূর্যঘড়ি, বালুঘড়ি, আগুনঘড়ি, জলঘড়ি, চাবিটানা (স্পি্রংওয়ালা) ঘড়ি, ইলেকট্রনিকস ঘড়ি, পারমাণবিক ঘড়ি ইত্যাদি পার হয়ে এখন স্মার্ট যুগে এসেছে স্মার্টঘড়ি।

তবে মানবজাতির মধ্যে ঐহিত্য আর অ্যান্টিকের প্রতি দুর্বার আকর্ষণের কারণে এই স্মার্ট যুগেও এখনো মধ্যযুগের চাবিটানা ঘড়িকে বাতিল ঘোষণা করা যায়নি। সেই কারণে জাদুঘরের বদলে অনেকের হাতে হাতে এখনো এ ধরনের ঘড়ি শোভা পায়। কিন্তু আধুনিক ইলেকট্রনিকসে নির্ভরশীল অনেকের হয়তো মাথাতেই ঢোকে না, ব্যাটারি কিংবা বিদ্যুৎ ছাড়া এই যন্ত্র চলে কীভাবে! মধ্যযুগে আবিষ্কৃত এই যন্ত্র আসলে অনেক দিনই মানুষের বিস্ময়ের কারণ ছিল। কিন্তু ভেতরের কলকবজা সম্পর্কে একটু জানলে সেই রহস্য ভেদ করা সম্ভব।

আসলে চাবিটানা ঘড়ির শক্তির উৎস এক বিশেষ লম্বা প্যাঁচানো স্পি্রং (মেইন স্পি্রং), যাকে চলতি ভাষায় চাবি বলে অনেকে। এই ঘড়ি চালু করার শুরুতে চাবি ঘোরাতে হয়, যাকে বলে চাবিটানা বা দম দেওয়া। অর্থাৎ, স্পি্রংটি পেঁচিয়ে রাখা হয়। কিন্তু স্পি্রংটির স্বাভাবিক ধর্মের কারণে ধীরে ধীরে এর প্যাঁচ খুলে যেতে থাকে। সেই সঙ্গে স্পি্রংয়ের গায়ে লাগানো ধারকাটা চাকায় (ব্যালান্স হুইল) শক্তি সঞ্চারিত হয়ে চাকাটিকে এদিক-ওদিক বারবার ঘোরাতে থাকে। ক্রমে এই চাকায় লাগানো গিয়ার তার পাশের চাকাগুলোকে ঘোরাতে থাকে, যার সঙ্গে যুক্ত থাকে সেকেন্ড, মিনিট আর ঘণ্টার কাঁটা। অবশ্য সেগুলোর চাকায় নির্দিষ্ট খাঁজকাটা থাকে। তাই ঘড়ির ডায়ালে আমরা সেকেন্ড, মিনিট আর ঘণ্টার কাঁটাগুলো সুষমভাবে ঘুরতে দেখি। এভাবেই চাবিটানা ঘড়ি সময় নির্দেশ করে।

অবশ্য চাবিটানা ঘড়ির আবিষ্কারের শুরুতে একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেটি হচ্ছে, মেইন স্পি্রংয়ের প্যাঁচ যতই খুলে যেত, ততই এর চাকা ঘোরানোর শক্তি কমে যেত। এর ফলে একসময় ঘড়িও স্লো হয়ে যেত। এই সমস্যা দূর করতে এখন চাবিটানা ঘড়িতে এসকেপ হুইল ব্যবহার করা হয়। এ এসকেপ হুইল বা চাকা আরও এক সারি গিয়ারওয়ালা চাকার মাধ্যমে মিনিট বা ঘণ্টার কাঁটায় প্রবাহিত হয়ে মেইন স্পি্রংয়ের চ্যুতিগুলো ঠিক করে ঘড়িতে সঠিক সময় গণনায় সহায়তা করে।