'আমাকে রুবিকস কিউব মেলানো শেখাবে, প্লিজ...'

সাকিব ইবনে রশীদ

এসএসসি পরীক্ষার্থী, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বনশ্রী শাখা (স্কুলের তারকা, এপ্রিল-২০১৪)

বছর দেড়েক আগের কথা। ছেলেটা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বিজ্ঞান উৎসবে গিয়েছে গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেবে বলে। সেখানে হঠাৎ চোখে পড়ল রুবিক্স কিউব মেলানোর প্রতিযোগিতা। চোখের সামনে মাত্র ৪২ সেকেন্ডে কিউব মিলিয়ে প্রথম পুরস্কার জিতে নিয়ে গেল একজন। রুবিক্স কিউবের ভূতটা সাকিব ইবনে রশীদ ওরফে ঋভুর মাথায় চেপে বসল ঠিক তখনই।

ওহ হ্যাঁ, রুবিক্স কিউব কাকে বলে জানো তো, বন্ধুরা? ওই যে ছয়রঙা কিউবটা, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অন্তত দু-এক পাশ কখনো মিলিয়েছ নিশ্চয়ই। হয়তো মনে হয়েছে ইশ্, পুরোটা যদি মেলাতে পারতাম! ঋভুরও তা-ই মনে হয়েছিল, কারও হাতে রুবিক্স কিউব দেখলেই সে অনুরোধ করত শিখিয়ে দিতে। কিন্তু সবখানে একই উত্তর, এটা মেলানো যার-তার কাজ নয়, তোমার দ্বারা হবে না বাপু! এক বন্ধু তো পাক্কা আধা ঘণ্টার বয়ানই শুনিয়ে দিল। তখন একদম জিদ চেপে গেল তার—কী এমন আছে এতে, শিখেই ছাড়ব!

যেই ভাবা সেই কাজ। রুবিক্স কিউব মেলানোর সূত্রগুলো একজনের কাছ থেকে লিখে নিয়ে বন্ধু অর্ণবের কিউবটা ধার নিল কয়েক দিনের জন্য। বহু চেষ্টার পর অবশেষে মিলিয়েই ফেলল একদিন। কিউবের ভূতটা আরও ভালোমতো চেপে বসল তখন, দিনরাত লেগে থাকা শুরু হলো এর পেছনে। প্রথম দিকে কয়েক মিনিট লেগে যেত, একসময় মিনিট পেরিয়ে সেকেন্ডের ঘরে পা রাখল টাইমিং। ৫০ সেকেন্ড, ৩০ সেকেন্ড, ২৫ সেকেন্ড...রুবিক্স কিউব মিলিয়ে জিতে নিতে থাকল একের পর এক পুরস্কার। এরই মাঝে গত ৫ ফেব্রুয়ারি গিয়েছিল ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের বিজ্ঞান উৎসবে। যথারীতি চ্যাম্পিয়ন তো হলোই, সেই সঙ্গে গড়ে ফেলল জাতীয় রেকর্ডও! আগের জাতীয় রেকর্ডটি ছিল ২০ সেকেন্ড, আর ঋভুর টাইমিং মাত্র ১২.৪৯ সেকেন্ড!

রুবিক্স কিউব তার কাছে নেশার মতো। তবে আর সবকিছুতেও কিন্তু সে একদম পিছিয়ে নেই। স্কুলে আবৃত্তিতে টানা চার বছরের চ্যাম্পিয়ন সে, জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় সারা বাংলাদেশে দ্বিতীয়। একাধিকবার ফুটবল চ্যাম্পিয়ন, আর দৌড় হাইজাম্প লংজাম্পের পুরস্কার তো বোধ হয় গুনে শেষ করা যাবে না! সুডোকু কিংবা কিরাআত থেকে শুরু করে বিজ্ঞান মেলার প্রজেক্ট - পুরস্কারের কমতি নেই সেখানেও। এ ছাড়া চালাতে পারে সাইকেল, বাজাতে পারে হাওয়াইয়ান গিটার। যুক্তিতর্কেও ঋভুর সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল। স্কুলের বিতর্ক ক্লাবের এই জেনারেল সেক্রেটারির ঝুলিতে রয়েছে বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় একের পর এক পুরস্কার। এত কিছুর ফাঁকেও পড়াশোনায় কখনো ফাঁকি দেয় না সে, পরীক্ষার ফলাফল থাকে প্রথম সারিতেই।

তবে দিন শেষে তার সব অর্জনকে ছাপিয়ে সামনে আসে একটি জিনিসই, রুবিক্স কিউব! চলতে-ফিরতে উঠতে-বসতে সব সময় সঙ্গে একটা রুবিক্স কিউব থাকা তার চাই-ই চাই। জাতীয় রেকর্ড ১২.৪৯ সেকেন্ড হলেও তার পার্সোনাল বেস্ট, অর্থাৎ ঘরে বসে মেলানোর রেকর্ড ৭.৬৬ সেকেন্ড। আর কিউব মেলানোর বিশ্ব রেকর্ড হলো ৫.৫৫ সেকেন্ড। তাই আমাদের ঋভুও একদিন বিশ্ব রেকর্ড গড়বে, সে আশা আমরা করতেই পারি!

প্রিয় খাবার

ঝালমুড়ি

প্রিয় খেলোয়াড়

সাকিব আল হাসান

কার লেখা পড়তে ভালোবাস?

জীবনানন্দ দাশ

সুযোগ পেলে যার সঙ্গে দেখা করতে চাও

ফেলিক্স জেমগেস, রুবিক্স কিউব ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন

প্রথমবার কিউব মেলাতে কতক্ষণ সময় লেগেছিল?

প্রায় ৬ মিনিট। পরে ধীরে ধীরে টাইমিং কমতে শুরু করে।

রুবিক্স কিউব নিয়ে কোনো মজার ঘটনা—

কিছুদিন আগে স্কুলের এক ইংরেজি মডেল টেস্টে রচনা এসেছিল তোমার প্রিয় শখ। খাতা ভর্তি করে রুবিক্স কিউব মেলানোর জটিল সব টার্ম আর ইতিহাস লিখে এসেছিলাম। যিনি খাতা দেখেছেন তিনি ১৫তে ১৩ দিয়ে দিয়েছিলেন!

যে কথাটা এখন সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়—

‘আমাকে রুবিক্স কিউব মেলানো শেখাবে, প্লিজ...’

আমাকে রুবিক্স কিউব মেলানো শেখাবে, প্লিজ

হা হা হা...অবশ্যই!