১০ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘টাইটানিক’ রেপ্লিকা বানানো শিশুটির গল্প

ব্রিনিয়ার কার্ল ব্রিগিসন।
ছবি: ব্রিনিয়ারের ফেসবুক পেজ

শখের বশে কিংবা মনের আনন্দে ছোটবেলায় আমরা সবাই নানা কাজকর্ম করেছি। সেটা হতে পারে জানালা দিয়ে খেলনা ফেলে দেওয়া বা নতুন খেলনা ভেঙেচুরে একাকার করে দেওয়া। সেই কাজগুলো কখনো বিচিত্র, কখনো হাস্যকর কিংবা অনেক সময় নির্মল আনন্দদায়ক। সবাই ভালোবাসে নিজের ছেলেবেলার কাঁচা হাতের এই কাজগুলো দেখতে। অনেকে আবার ভালো মানুষ, তারা বানায় তুলো দিয়ে পুতুল কিংবা ভাঙা খেলনা নিয়ে নতুন খেলনা। তবে এত ধরনের ছোটবেলার মধ্যেও আছে ব্যতিক্রম। কেমন হবে যদি দেখো ১০ বছর বয়সী এক ছেলে ৭০০ ঘণ্টা ব্যয় করে প্রায় ১১ মাস পরিশ্রম শেষে বানিয়ে ফেলেছে ৫৬ কেজি ওজনের টাইটানিক রেপ্লিকা? তাও শুধু নিজের খেলনা লেগো ব্লক দিয়ে?

অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে?

আশ্চর্য হলেও দারুণ এই কীর্তি করে ফেলেছে আইসল্যান্ডের বাসিন্দা ব্রিনিয়ার কার্ল ব্রিগিসন। ১০৮ বছর আগে আটলান্টিকের গভীরে হারিয়ে যাওয়া টাইটানিকের এত বড় রেপ্লিকা পৃথিবীতে খুব কমই আছে। আর লেগো সেট দিয়ে তৈরি এমন টাইটানিক রেপ্লিকা? সেই হিসাব করতে গেলে পুরো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে এ ধরনের কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। তবে এই রেপ্লিকা তৈরির পেছনেও সুন্দর একটা গল্প আছে। সেটা জানা যাক—

অটিজম ডিসঅর্ডার থাকায় ছোটবেলা থেকেই ব্রিনিয়ার আর দশটা বাচ্চা থেকে একটু আলাদা। সবার সঙ্গে মেশার ক্ষমতা কম থাকায় তার কোনো বন্ধু ছিল না। ব্রিনিয়ার তখন লেগো সেটকে বেছে নিল নিজের বন্ধু হিসেবে। লেগোর খেলনা টুকরোগুলো জুড়ে দিয়ে সে বানাত হাতি, ঘোড়া, ঘরবাড়ি, নানান কিছু। এগুলো দিয়েই ব্যস্ত রাখত নিজেকে আর দূর করে দিত একাকিত্ব। কয়েক বছরের মধ্যেই এই লেগো জুড়ে নতুন কিছু বানানো রীতিমতো শখ হয়ে দাঁড়াল ব্রিনিয়ারের জন্য! এবং বোঝা গেল এ ক্ষেত্রে কিছু সহজাত প্রতিভা আছে তার। একটু চিন্তা করলেই সে লেগো দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারে যেকোনো অবয়ব। কিন্তু তখনো কেউ জানত না ব্রিনিয়ার শুধু হাতি–ঘোড়া বানিয়ে থামবে না, আরও বড় চমক অপেক্ষা করছে সবার জন্য।

চলছে কাজ পুরো দমে।
ছবি: ব্রিনিয়ারের ফেসবুক পেজ

ব্রিনিয়ারের বয়স তখন নয় বছর। মায়ের সঙ্গে ডেনমার্কে লেগোল্যান্ড ঘুরতে গিয়ে প্রথমবারের মতো বিরাট বিরাট লেগো রেপ্লিকা দেখতে পেল সে। সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল এমন কিছু তারও বানানো চাই। কিন্তু কী বানাবে, সেটা তখনো ঠিক হয়নি। তবে বেশিক্ষণ ভাবতে হলো না, জাহাজ নিয়ে আগ্রহ আর প্রিয় জাহাজ টাইটানিক হওয়ায় রেপ্লিকা হওয়ার সুযোগ টাইটানিকই পেল। কিন্তু হিসাব কষতে বসে দেখা গেল, সাত মিটার লম্বা এই রেপ্লিকা বানাতে প্রায় ৫৬ হাজার লেগো ব্লক লাগবে। খুবই খরুচে বিষয় হলেও সমস্যাটা দমাতে পারল না ব্রিনিয়ারকে। চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই এগিয়ে এল তাঁকে সাহায্য করতে। ভালোবাসায় সিক্ত ব্রিনিয়ার বানাতে শুরু করল তার টাইটানিক। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে সে তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে কাজ করত নিজের রেপ্লিকা নিয়ে। এভাবেই তিল তিল করে গড়ে উঠেছিল তার স্বপ্নের টাইটানিক।

ছবি: ব্রিনিয়ারের ফেসবুক পেজ

বর্তমানে ১৭ বছর বয়সী ব্রিনিয়ার সাত বছর আগে পার করে এসেছে এই দিনগুলো। এখনো পেছন ফিরে তাকালে বোঝা যায় এই দিনগুলোই বদলে দিয়েছিল তার পৃথিবী। বিখ্যাত বনে যাওয়া ব্রিনিয়ারকে নিয়ে বানানো হয়েছে একটি ডকুমেন্টারি। এ ছাড়া বিখ্যাত টেডএক্স অনুষ্ঠানেও বক্তব্য রেখেছে সে।

টাইটানিক দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়।
টাইটানিক দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়।
ছবি: ব্রিনিয়ারের ফেসবুক পেজ

আজকাল গ্রীষ্মের ছুটিতে ব্রিনিয়ার কাজ করছে এক ফেরিতে, স্বপ্ন তার একদিন নাবিক হবে। দাপটে বেড়াবে পুরো সমুদ্র। এত দিনে ব্রিনিয়ার জেনে গেছে, আর যা–ই হোক, ছোট্ট এই জীবনে কখনো স্বপ্ন দেখতে কার্পণ্য করতে হয় না। তাই তার দৃষ্টি দিগন্তে।

স্বপ্ন তার নাবিক হওয়ার।
ছবি: ব্রিনিয়ারের ফেসবুক পেজ

কাঁচা হাতে লেগো সেট দিয়ে খেলনা বানানো ব্রিনিয়ার এখন লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা।

তথ্যসূত্র: বোরডপান্ডা