হৃদ্রোগ প্রতিরোধে কোলেস্টেরল কমানোর টিকা

ব্লক হয়ে যাওয়া ধমনি রক্তপ্রবাহে বাধা দেয়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে।
ব্লক হয়ে যাওয়া ধমনি রক্তপ্রবাহে বাধা দেয়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে।

হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বা রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে আমরা কী না করি। সকাল-সন্ধ্যা হাঁটাহাঁটি, বাড়তি পরিশ্রম। সবচেয়ে কষ্টকর হয় খাবার নিয়ন্ত্রণ করা। হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে অনেককেই একে একে পছন্দের খাবারগুলো বাদ দিতে হয়।

এবার মানবদেহের হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে কোলেস্টেরল কমানোর টিকা আবিষ্কারের সাফল্য দাবি করেছেন গবেষকেরা। নতুন এই টিকার মূল কাজ হবে, এটি ধমনিতে চর্বি জমতে বাধা দেবে। এই টিকা নিলে স্ট্রোক, বুকব্যথা ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কাটাতে রোজ রোজ ওষুধ আর খেতে হবে না।

ভিয়েনার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এ গবেষণায় সফলতা পাওয়ার দাবি করেন। চলতি বছরের শেষ নাগাদ ৭২ জন মানুষের ওপর এই টিকার পরীক্ষা চালানো হবে। কোনো নিরাপত্তা সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলে এই গবেষণায় পুরো সাফল্য আসবে বলেই আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

নেদারল্যান্ডস অর্গানাইজেশন অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্টিফিক রিসার্চের গবেষক গুয়েন্থার স্টাফলার ও তাঁর সহকর্মীরা সম্প্রতি ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে এই গবেষণার বিষয়ে জানান। তাঁরা বলছেন, মানবশরীরের জন্য এই টিকা কতটুকু কার্যকর হবে, তা পরীক্ষা করতে আরও এক বছর সময় লাগবে। তবে সাফল্য পেলে আগামী ছয় বছরের মধ্যে ব্যায়াম এবং উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার জন্য হৃদ্‌রোগ হয়েছে, এমন অজুহাত আর টিকবে না।

গবেষকেরা বলছেন, এই টিকা শরীরে পিসিএসকে-৯ প্রোটিনপ্রবাহে বাধা দিয়ে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে। রক্তে ‘লো ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন’ বা এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করবে। এলডিএল ধমনির দেয়ালে ক্ষতিকর প্লাক তৈরিতে সাহায্য করে, তাই একে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয়। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষায় দেখা যায়, এই টিকা প্রয়োগে ১২ মাসের মধ্যে এর শরীরে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা ৫০ ভাগ কমে গেছে।

আরেকটি কোলেস্টেরল হলো ‘হাইডেনসিটি লাইপো প্রোটিন’ (এইচডিএল)। এইচডিএল ধমনির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এলডিএল কোলেস্টেরলকে সরিয়ে দিতে সাহায্য করে। এতে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে, তাই একে ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়। এইচডিএলকে রক্ত থেকে যকৃতে প্রবাহে সাহায্য করবে এ টিকা।

পারিবারিকভাবে হাইপার কোলেস্টেরলিমিয়া কারণে কারও কারও উচ্চ কোলেস্টেরল থাকে। এ ছাড়া খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান ও ধূমপান, কাজ কম করার কারণেও শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। সাধারণত দেখা যায়, চিকিৎসকেরা লো ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন বা এলডিএল কমাতে যে ওষুধ ব্যবহার করেন, তা পিসিএসকে-৯ প্রোটিন সেলকে ধ্বংস করে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। তবে শরীরে এগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যায়। তাই গবেষকেরা কোলেস্টেরল কমানোর বিকল্প উপায় খুঁজছিলেন। সূত্র: বিবিসি অনলাইন।